ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিমানের দুটি ফ্লাইট বাতিল, একটি বিলম্বিত

সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা, বিশেষ প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ১০:১৩, ৪ মে ২০১৯

 সব বিমানবন্দরে সর্বোচ্চ সতর্কতা, বিশেষ প্রশিক্ষণ

আজাদ সুলায়মান ॥ ঘূর্ণিঝড় ফনী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে দেশের সব বিমানবন্দরে। এ জন্য দিবারাত্রি সজাগ রয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের একদল বিশেষজ্ঞ কর্মী। যে কোন ধরনের বিপর্যয় মোকাবেলায় ইতোমধ্যে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে তাদের। ঝড়ের কবলে পড়লে একজন পাইলটকে কি ভূমিকা পালন করতে হবে সে দিকনির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। আতঙ্ক সৃষ্টিকারী ফণীর ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে আগাম ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল এভিয়েশনের সদস্য এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমান। জানা গেছে, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত বিমান বন্দরগুলোর কার্যক্রম বন্ধ রাখা সংক্রান্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। যদিও প্রতিবেশী কলকাতা বিমানবন্দর শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে ফণীর কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের ঢাকা-যশোর রুটের বিজি ৪৬৭ এবং সন্ধ্যা ৭টা ২৫ মিনিটের যশোর-ঢাকা রুটের বিজি ৪৬৮ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া সন্ধ্যায় ঢাকা- কলকাতা রুটের বিজি ০৯৫ ফ্লাইট আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত বিলম্বিত করা হয়। যদি আজ শনিবার কলকাতার আবহাওয়া উ্ড্ডয়নযোগ্য না হয় তাহলে আরও বিলম্ব হতে পারে। বেসরকারী এয়ারলাইন্স নভোর কলকাতা ফ্লাইটও বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট তিনটি ফ্লাইট বাতিল করতে হলো। এ সম্পর্কে এয়ার কমডোর মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বিমানবন্দরে কী ব্যবস্থা নিতে হবে তার স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর আছে, আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিয়েছি। বৃহস্পতিবার রাতেই দেশের সব বিমানবন্দরের পরিচালক, ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বিমানবন্দর বন্ধ করার মতো খারাপ আবহাওয়া নেই। জানা গেছে, ফণীর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় গত বৃহস্পতিবারই প্রস্তুতি নিয়ে নেয় সিভিল এভিয়েশন। বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালকের কার্যালয়ে জরুরী দুর্যোগ মোকাবেলার কৌশল নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন বিভাগের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে এয়ারলাইন্সগুলো কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে দায়িত্ব পালন করা হবে সেই দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। শুক্রবার রাতে শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন আব্দুল্লাহ আল ফারুক জনকণ্ঠকে জানান, মূলত বিমানবন্দরের নিরাপদ স্থানেই বর্তমানে পার্কিং করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজগুলো। বে এরিয়ায় এমনভাবে রাখা হয়েছে যাতে ঝড় হলেও কোন ক্ষতি না হয়। একই সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য সংস্থার লোকজন ও যানবাহন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। রাতে ঝড়ের তীব্রতার ওপর নির্ভর করবে কতগুলো ফ্লাইট বাতিল করা হবে- কতোগুলো ডিলে হবে। শুক্রবার সারাদিন আতঙ্কে কাটলেও সবই ছিল নিয়ন্ত্রণে এবং কোন ধরনের তেমন কিছু ঘটেনি। সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিমানবন্দরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। আর চরম ঝুঁকিতে রয়েছে কক্সবাজার চট্টগ্রাম ও যশোর। এ সম্পর্কে রাতে চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের ম্যানেজার উইং কমান্ডার সারওয়ার ই জাহান জনকণ্ঠকে বলেন, শুক্রবার দিনটি বেশ ভালই কেটেছে। সব কটা ফ্লাইটের ওঠানামা ছিল স্বাভাবিক। রাতে ৬/৭টা ফ্লাইট নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়েছে-সেটা নির্ভর করছে ঝড়ের গতিবেগের ওপর । কি ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছেন জানতে চাইলে সারওয়ার ই জাহান বলেন, ইতোমধ্যে বোর্ডিং ব্রিজগুলো ড্রাই-ডাউন করে ফেলা হয়েছে, সবগুলো ইকুইপমেন্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছে, অন্যান্য যানবাহন রাখা হয়েছে নিরাপদে। সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বিমানবন্দরে কোন এয়ারক্রাফট পার্কিং করা ছিল না। আমরা সবাই সর্বাত্মক সতর্ক ও সজাগ রয়েছি। আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে এরইমধ্যে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ভারতের পুরিতে ঘূর্ণিঝড় ফণী আঘাত হেনেছে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ঝড়টি ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করছিল এর প্রভাবে আজ সারা দিনই বাংলাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। মধ্যরাত নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রটা বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে। জানতে চাইলে বরিশাল বিমানবন্দরের ম্যানেজার রথিন্দ্র নাথ চৌধুরী বলেন, আবহাওয়া এখন পর্যন্ত বিমান চলাচলের উপযোগী রয়েছে। বিমান চলাচল অব্যাহত রয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরা সতর্কতার সঙ্গে আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ করছি। এ সম্পর্কে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার আবুল কালাম মোঃ সাইদুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বিমানবন্দরের কার্যক্রম সচল আছে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি বেশি খারাপ হলে আমরা এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে সিদ্ধান্ত নেব। একই আশা ব্যক্ত করে রাজশাহীর শাহ মাখদুম বিমানবন্দরের ম্যানেজার মোহাম্মদ শেতাফুর রহমান বলেন, বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ করার মতো পরিস্থিতি হয়নি। আমরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেব। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিমানবন্দরে যা যা ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন তাই নেয়া হয়েছে। যশোর বিমানবন্দরের ম্যানেজার মোহাম্মদ আলমগীর পাঠান বলেন, আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে যাতে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়। তবে এখনই বিমানবন্দর ক্লোজ করার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা সার্বক্ষণিক আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রস্তুতিতে কোন ধরনের গাফিলতি নেই।
×