ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে বিনামূল্যে আইনী সেবা

প্রকাশিত: ১১:০৪, ২৮ এপ্রিল ২০১৯

তিন লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে বিনামূল্যে আইনী সেবা

বিকাশ দত্ত ॥ রবিবার জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় শেখ হাসিনার অবদান, বিনামূল্যে লিগ্যাল এইডে আইনী সেবাদান’। সকাল ১০টায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এ দিবসের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নাগরিকদের সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করতেই দিনটি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস উপলক্ষে সংবাদপত্রে আইন সহায়তা বিষয়ক ক্রোড়পত্র ও বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া রেডিও-টেলিভিশনে আইন সহায়তা সংক্রান্ত টকশো ও মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুপুর আড়াইটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরের উন্মুক্ত মঞ্চ ও চত্বরে লিগ্যাল এইড মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এছাড়া জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির উদ্যোগে জেলাপর্যায়ে সভা, সেমিনার, রক্তদান কর্মসূচী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। দেশের আপামর জনসাধারণের আইনী অধিকার নিশ্চিত করার সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্র, অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত নাগিরিককে সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম সম্পর্কে সচেতন করে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ২০১৩ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকার, আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ কার্যকরের তারিখ অর্থাৎ ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ঘোষণা করেন। প্রতি বছরই এ দিনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হচ্ছে। ২০০৯ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত জাতীয় আইনগত সংস্থার মাধ্যমে মোট ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৯০ জনকে বিনামূল্যে আইনী সেবা দেয়া হয়েছে। আর ক্ষতিপূরণ আদায় হয়েছে ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৩২৬ টাকা। আইনগত সহায়তাপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৬ হাজার ৪০২ কারাবন্দী ছিলেন। এর আগে গত ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার আইনমন্ত্রী আনিসুল হক তার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার কর্মকা- তুলে ধরেন। আইনী সহায়তার পরিসংখ্যান ॥ ২০০৯ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিসে আইনী সেবা পরামর্শ পেয়েছে ৪৫ হাজার ৯১৮ জন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে ৭ হাজার ১৬৯ জন। সরকারী আইনী সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কলসেন্টার টোল ফ্রি ‘১৬৪৩০’ এ ৫৩ হাজার ৪২৮ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল ১১ হাজার ৮০০ জন। ৫৪ জেলায় মামলার সহায়তা দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৫, সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিসে ২ হাজার ৪৩৭, ঢাকা ও চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল ২ হাজার ৪৭৬। অন্যদিকে হটলাইনে মাধ্যমে সেবাপ্রদান করা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৮ জনকে। ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড ও ঢাকা চট্টগ্রাম শ্রমিক আইনগত সহায়তা সেল এ ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে মোট ১৮ কোটি ৪৩ লাখ ২৪ হাজার ৩২৬ টাকা। সরকারী আইনী সেবা প্রাপ্তির যোগ্যতা ॥ যারা দরিদ্র ও অসহায় এবং নিজ খরচে মামলা পরিচালনা করতে পারেন না তাদের জন্য সরকারী খরচে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়। নি¤œ লিখিত ব্যক্তিরা এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারেন। (ক) অসচ্ছল বা আর্থিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তি যার বার্ষিক আয় গড় সুপ্রীমকোর্টে আইনী সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং অন্যান্য আদালতের ক্ষেত্রে এক লাখ। (খ) কর্মক্ষম নন আংশিক কর্মক্ষম, কর্মহীন বা বার্ষিক ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার উর্ধে আয় করতে অক্ষম এমন মুক্তিযোদ্ধ। (গ) যে কোন শিশু (ঘ) মানব পাচারের শিকার যে কোন ব্যক্তি (ঙ) শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নির্যাতন এবং যৌন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশু। (চ) নিরাশ্রয় ব্যক্তি বা ভবঘুরে। (ছ) যে কোন উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা, নৃ-গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের লোক। (ঞ) বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন এম কোন ব্যক্তি (ট) ভিজিডি কার্ডধারী দুস্থ মাতা : (ঠ) দুর্বৃত্ত দ্বারা এসিড দগ্ধ নারী বা শিশু, (ড) আদর্শ গ্রামে গৃহ বা ভূমি বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্যক্তি, (ঢ) যে কোন প্রতিবন্ধী (ণ) বিনা বিচারে আটক এম ব্যক্তি যিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। আইনী পরামর্শ কারা পাবেন ॥ আইনগত সহায়তা প্রদান নীতিমালা-২০১৪ এর ৩নং বিধান অনুসারে যে কোন ব্যক্তি তার আর্থিক সামর্থ্য যাই হোক না কেন, সরকারী আইনগত সহায়তা কর্মসূচীর আওতায় পরিচালিত আইনগত তথ্য সেবা গ্রহণ, আইনগত পরামর্শ গ্রহণ কিংবা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির সেবা গ্রহণের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে। ১০ বছরে যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ॥ বিগত ১০ বছরে এই আইনের বাস্তবায়ন কার্যক্রমকে বেগবান ও ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে (১) ঢাকায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (ঘখঅঝঙ) প্রধান কার্যালয় স্থাপন করে এর অধীনে ৬৪ জেলার লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন। (২) ২০১৫ সালে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করে সেখানে লিগ্যাল এইড কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। (৩) দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকদের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে শ্রম আদালতে শ্রমিক আইন সহায়তা সেল চালু করা হয়েছে। (৪) সরকারী আইনী সেবা প্রদান আরও বিস্তৃত ও সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ঘখঅঝঙ প্রধান কার্যালয়ে টোল ফ্রি জাতীয় হেল্পলাইন ১৫৪৩০ চালু করা হয়েছে। (৫) জেলা লিগ্যাল এইড অফিসগুলোকে এখন শুধু আইনী সহায়তা প্রদানের কেন্দ্র হিসেবে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। মামলা জট কমানোর লক্ষ্যে এ অফিসগুলোকে ‘এডিআর কর্নার ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি’ বিধিমালা প্রণয়ন করে লিগ্যাল এইড অফিসারদের এডিআর বা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির আইনী ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। (৬) প্রতিটি জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা সারাদেশে সরকারী আইনী সহায়তা প্রদান সংস্থা সারাদেশে সরকারী আইনী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অধিকন্তু সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রীমকোর্টে লিগ্যাল এইড কমিটি গঠন করে আইনী সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া চৌকি আদালত ও শ্রম আদালতেও বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। (৭) তৃণমূল পর্যায়ে সরকারী আইনী সেবাকে পৌঁছে দিতে সারাদেশের ইউনিয়ন লিগ্যাল এইড কমিটিসমূহকে সক্রিয় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। (৮) সরকারী আইনী সেবায় যাবতীয় তথ্য ও কার্যক্রম ডিজিটাল ডাটাবেজের মাধ্যমে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে লিগ্যাল এইড অফিস ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার নির্মাণ করা হয়েছে। যে সব মামলায় সহায়তা প্রদান করা হয় ॥ ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে স্বামীর পুনবিবাহ, শারীরিক নির্যাতন, যৌতুক দাবি বা যৌতুকের জন্য নির্যাতন, এডিস নিক্ষেপ, পাচার, অপহরণ, ধর্ষণ ও অন্যান্য ফৌজদারি মামলাসমূহ। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে-সন্তানের অভিভাবকত্ব, ভরণ পোষণ ও দেনমোহর, বিবাহ বিচ্ছেদ, দালিল বাতিল, স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তি বণ্টন বা বাটোয়ারা, ঘোষণামূলক মামলা, চুক্তি সংক্রান্ত মামলা ও সুনির্দিষ্ট কোর্ট ফি নির্ধারিত দেওয়ানি মামলাসমূহ। অন্যদিকে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস যে সব সেবা প্রদান করে থাকে তার মধ্যে রয়েছে, আইনগত পরামর্শ প্রদান, মামলা দায়ের ও পরিচালনা, মামলার গুণাগুণ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত প্রদান ও মামলার আনুষঙ্গিক ব্যয় বহন। কি ভাবে আবেদন করা যাবে ॥ দরখাস্তকারী নিজে বা তার মামলা তদারককারী বা তদবিরকারী সংশ্লিষ্ট জেলার লিগ্যাল এইড অফিসে সরাসরি আবেদন পত্র জমা দিতে পারেন বা দাখিল করতে পারেন। তাছাড়া কারা কর্তৃপক্ষ, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার, কমিশনার, সমাজ সেব কর্মকর্তা বা বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও আইনগত সহায়তার আবেদনপত্র লিগ্যাল এইড অফিসে পাঠানো যায়। এছাড়া আবেদনপত্র জমাদানসহ যে কোন প্রয়োজনে উক্ত অফিসের সহায়ক কর্মকর্তা অথবা অফিস সহযোগিতা গ্রহণ করবে।
×