ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ পালা ‘ঢাকি’

প্রকাশিত: ০৯:১৫, ২৭ এপ্রিল ২০১৯

 বিলুপ্তির পথে গ্রামীণ পালা ‘ঢাকি’

যাত্রাপালা বা নাটক আবহমানকাল থেকে গ্রামের মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দিয়ে আসছে। তখন বিনোদনের খোরাক ছিল যাত্রাপালা। যাত্রাপালা লোকসংস্কৃতির একটি বিরাট অংশ নিয়ে বিরাজমান। যাত্রাপালায় মানুষের সুখ, দুঃখ, আনন্দ বেদনার প্রতিচ্ছবিও ফুটে ওঠে। যাত্রাপালার মধ্যে খাইরুন সুন্দরী, নসিমন, রসিয়া সুন্দরী, রূপবান, কাশেম মালার প্রেমসহ অসংখ্য পালা রয়েছে। চৈত্র মাসে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে বাড়িতে বাড়িতে রাতে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মীয় পালা পরিবেশিত হতো। যা ঢাকি নামে পরিচিত ছিল। কিছু সংস্কৃতিপ্রবণ যুবক যাত্রাপালার পোশাক ভাড়া করে, মেকাপ নিয়ে চৈত্রসংক্রান্তি উপলক্ষে রাতে বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে রাবণ বধ, রাজা হরিশচন্দ্র, কংস বধ, শিব-পার্বতীসহ বিভিন্ন পালা পরিবেশন করত। এতে গৃহস্থ খুশি হয়ে চাল, ডাল, নারকেল, সুপারি ও নগদ টাকা প্রদান করত। চৈত্র মাসজুড়ে এই ঢাকির প্রচলন ছিল। চৈত্র মাসের শেষ দিন চৈত্র সংক্রান্তিতে (সরকারী হিসেবে পহেলা বৈশাখ) মেলা বসতো এবং মেলায় এই ঢাকি মঞ্চস্থ হতো। কথিত আছে ঢাকির ঢাকের শব্দে শিমুল গাছের তুলো প্রস্ফুটিত হয়। নরোত্তম দাশের লেখা পদাবলীতে আছে, ‘যেদেশে যাত্রা, মহোৎসব নাই, ইন্দ্রলোক হইলেও তথা নাহি চাই।’ কালের আবর্তে আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবে মানুষেরা আধুনিক টিভি, ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন ব্যবহার করে এসব গ্রামীণ পালার পরিবর্তে দেশী-বিদেশী সিনেমা-নাটক দেখেন। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণপালা ঢাকি। সেই সঙ্গে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ মেলাও। প্রতিবারের মতো চৈত্রসংক্রান্তিতে মীরসরাইয়ের জোরারগঞ্জের গোপীনাথপুর গ্রামে গ্রামীণ মেলা বসে। মেলার মঞ্চে রাবণবধ মঞ্চস্থ করা হয়েছে। তবে আগে মেলায় যে পরিমাণ মানুষের সমাগম হতো কালের আবর্তে তা হারিয়ে গেছে। এখন আর সেই উচ্ছ্বাস নেই। প্রাণ নেই গ্রামীণ মেলারও। জোরারগঞ্জে দেওয়ানপুর গ্রামে নোয়াখালী থেকে ঢাকি পালা করতে আসা সাধন চন্দ্র জানান, এখন আর আগের মতো ঢাকি পালা দেখতে চায় না মানুষ। ঢাক- ঢোলের শব্দে অনেকে বিরক্ত হয়। আগের মতো টাকাও দেয়না গৃহস্থ। ফলে আমাদের পোশাক, মেকাপ, এতগুলো মানুষের যাতায়াত খরচ, খাওয়া-দাওয়ারও খরচ ওঠে না। এতে করে পোষায় না। আগামী বছর থেকে বন্ধ করে দিতে হবে পালা। মীরসরাইয়ের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শিক্ষক সুভাষ সরকার বলেন, গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢাকি (যাত্রাপালা) আগের মতো আর দেখা যায় না পথে প্রান্তরে। আগে চৈত্র মাসে বাড়িতে বাড়িতে ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ পালা ঢাকি দেখা যেত। কালের পরিবর্তনে এখন দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে এসব লোকসংস্কৃতি। এ ব্যাপারে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যকার মঈন উদ্দিন আহম্মদ চৌধুরী সেলিম বলেন, আকাশ সংস্কৃতির কারণে এবং বাঙালী সংস্কৃতি, কৃষ্টির যথাযথ চর্চার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে লোক সংস্কৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ও পহেলা বৈশাখে গ্রামীণ সংস্কৃতির চর্চা, বিকাশে সংস্কৃতিমনা মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। এতে করে ঢাকি, গ্রামীণ মেলা, যাত্রাপালাসহ বিভিন্ন লোক সংস্কৃতির বিকাশ সম্ভব হবে। -রাজিব মজুমদার, মীরসরাই, চট্টগ্রাম থেকে
×