ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘ব্রিটিশ আমল থেকেই রোহিঙ্গাদের জোর করে এ অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে’

কারাগারে ৪৯৫ অবৈধ বিদেশী বন্দী রয়েছে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ২১ এপ্রিল ২০১৯

কারাগারে ৪৯৫ অবৈধ বিদেশী বন্দী রয়েছে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দেশে অবৈধভাবে আসা বিভিন্ন দেশের ৪৯৫ নাগরিক বর্তমানে কারাগারে বন্দী রয়েছে। এদের মধ্যে ৮৬ জন মুক্ত হলেও কোন দেশ তাদের নিতে রাজি হয়নি। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই তারা কারাগারে রয়েছে। শনিবার সকালে রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে মানবপাচার প্রতিরোধে ইউএনডিপির সহযোগিতায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত দিনব্যাপী সেমিনারের প্রথম সেশনে তিনি এ সব কথা বলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, যুগ যুগ ধরে বিশ্বজুড়ে জোর করে মানবপাচারের ইতিহাস রয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে এখন জোর করে নয়, প্রলুব্ধ করে বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে তারা ভিকটিম হচ্ছে। অনেকে বিভিন্ন দেশে আটক রয়েছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশের কারাগারেও ৪৯৫ বিদেশী আটক রয়েছে। এদের মধ্যে ৫৭ জনের শাস্তি হয়েছে। ৮৬ জন মুক্ত হলেও কোন দেশ তাদের নিতে আসছে না। ফলে বাধ্য হয়েই তারা কারাগারে বন্দী রয়েছে। ডিমান্ড এ্যান্ড সাপ্লাইর কারণেই মানবপাচার হয় বলে মন্তব্য করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মানুষ পাচার করা হয়। তবে এখন প্রলুব্ধ হওয়া মানুষদের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসছে। আমরা এখন একটি ভাল জায়গায় আছি। অনেকে বাংলাদেশে আসছেন, নিজেদের ভাগ্য বদলানোর জন্য। বাংলাদেশ থেকে মানবপাচারের সংখ্যা অনেক কমেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দেশের প্রতিটি জেলায় মানবপাচার রোধে পুলিশের কমিটি রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও সর্বক্ষণিক নজরদারি করা হয়। এছাড়া সীমান্ত এলাকায় বিজিবি ও কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ব্রিটিশ আমল থেকেই বাংলাদেশে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক এ অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে রয়েছে। তাদের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ বেঁচে থাকা। ’১৫ সালে নৌকায় করে বিদেশে যাওয়ার জন্য যারা চেষ্টা করছিল, ঘটনাটি অনেক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাদের বেশিরভাগই ছিল রোহিঙ্গা। এখনও যারা নৌপথে বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছে তাদের ৮০ ভাগই রোহিঙ্গা। ভারতের আদালত থেকে যাবজ্জীবন দ-প্রাপ্ত বাদল ফরাজীকে বাংলাদেশে আনা হলেও সে কারাগারে বন্দী রয়েছে। তিনি জানান, বাদল ফরাজীর বিষয়টি নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এখন তার জন্য একটা পথই খোলাÑ রাষ্ট্রপতি যদি তাকে নির্দোষ ঘোষণা করেন, তাহলেই কেবল তিনি মুক্তি পাবেন। কখনও যদি সে সুযোগ আসে, রাষ্ট্রপতি যদি ক্ষমা করেন তাহলে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক জানান, পাচারের শিকার হয়ে বিভিন্ন দেশে যারা দুঃসহ জীবনযাপন করছে, তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করে ফিরিয়ে আনতে হবে। পাচার ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। ’১২ সালে এ সংক্রান্ত আইন হলেও সাত বছরে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা যায়নি। এ কারণে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। এটা দ্রুত করা জরুরী। জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান আইওএমের বাংলাদেশ মিশন প্রধান জর্জি গিগাওরি জানান, কেন, কীভাবে পাচার হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে। সবাই মিলে বাংলাদেশ তথা বিশ্ব থেকে মানবপাচার বন্ধ করতে হবে। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন, সাংসদ নাহিম রাজ্জাক, ভারতের এটিএসইসির জাতীয় সমন্বয়ক ও মহাসচিব মানবেন্দ্র নাথ মণ্ডল। সেমিনারটি চারটি ভাগে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলে।
×