ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচ পরিবার গ্রাম ছাড়া

প্রকাশিত: ০৯:৪০, ২০ এপ্রিল ২০১৯

 সন্ত্রাসী হামলায় পাঁচ  পরিবার গ্রাম ছাড়া

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ পাঁচটি সংখ্যালঘু পরিবারের জমি নিয়ে প্রতিপক্ষ আলাউদ্দিন সরদারের সঙ্গে সালিশ বসিয়ে ছিলেন এলাকাবাসী। আলাউদ্দিন সরদার সালিশ না মেনে সংখ্যালঘুদের পক্ষে অবস্থান নেয়া ১১ ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে পাল্টা মামলা করেছেন। পারিবারিক জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সৃষ্ট মামলায় আদালত থেকে জামিন পেয়েও বাড়িঘরে উঠতে পারছেন না সাতক্ষীরার পাঁচটি সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যরা। প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসী হামলার মুখে তারা বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে থাকছেন। তারা তাদের দোকানপাট খুলতে পারছেন না। তাদের শিশুরাও স্কুলে যেতে পারছে না। শুক্রবার সকালে এসব পরিবারের কয়েকজন নারী ও পুরুষ সদস্য তাদের তল্পিতল্পা নিয়ে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এসে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য সরকার প্রধানের কাছে আকুতি জানিয়ে বলেন ‘আমাদের নিরাপত্তা নেই। আমরা বাড়ি ফিরতে পারছি না’। আতঙ্কিত এসব পরিবারের সদস্যদের বাড়ি সদর উপজেলার আখড়াখোলা গ্রামে। আখড়াখোলা বাজারে বাড়ি সংলগ্ন দোকানপাট রয়েছে তাদের। এরা হচ্ছেন সাধন সাধু, কার্তিক সাধু, সন্তোষ সাধু ও নিমাই সাধু। তাদের সঙ্গে তাদের স্ত্রী চায়না রানী, স্বপ্না রানী, রমা রানী ও লক্ষ্মী রানী উপস্থিত ছিলেন। তবে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান শুক্রবার বিকেলে এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ কয়েকজন সালিশ করে আলাউদ্দিনের একটি দোকান থেকে নামিয়ে সাধু পরিবারের সদস্যদের একটি দোকান বুঝিয়ে দেয়। এই ঘটনায় আলাউদ্দিন আদালতে মামলা করলে আদালত একজনের জামিন নামঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠায়। এই ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নিতে সালিশদাররাই সাধু পরিবারের সদস্যদের প্রেসক্লাবে পাঠিয়ে মিথ্যা হামলা ও হুমকির ঘটনা প্রচার করছে বলে ওসি দাবি করেন। প্রেসক্লাবে আসা সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৩০ শতক জমির ওপর তাদের শরিকদের বসবাস ও দোকানপাট। তাদের একজন শরিক দুলাল সাধুর ১০ শতাংশ জমি জবরদখল করতে পাশর্^বর্তী এগারো আনি গ্রামের মোঃ আলাউদ্দিন সরদার দুলাল সাধুর ছেলে সুমনকে অপহরণ করেন। পরে তাকে জিম্মি করে দুলালের কাছ থেকে ১০ শতক জমি জোর করে লিখে নেন আলাউদ্দিন। দুলাল এ ঘটনার পরপরই ভারতে চলে যান। আর তিনি ফিরে আসেননি। এদিকে জমির দলিল হাজির করে মোঃ আলাউদ্দিন সরদার ওই জমি দখল করে নেন। এ জমির শরিকদের অভিযোগ আলাউদ্দিন তার ১০ শতক জমির বাইরে দুটি দাগে আরও ছয় শতক জমি জবরদখল করে নিয়েছেন। এরই মধ্যে সেখানে দোকান তৈরির জন্য আলাউদ্দিন সরদার পাশর্^বর্তী শরিক তুলশি সাধুর টালির ছাউনির ঘরের একাংশ জোর করে কেটে ফেলেছেন। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয়ভাবে সালিশদাররা মীমাংসা করার লক্ষ্যে তাদের ন্যায্য পাওনা জমি ও ঘরে পুনর্দখল করিয়ে দেন। ভুক্তভোগী সদস্যরা জানান, এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে আলাউদ্দিন ১১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ঝাউডাংগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি রমজান আলি, সাংবাদিক ইয়ারব হোসেনসহ অনেকেই। মামলাটি এখনও তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। গ্রামবাসী আরও জানান, আলাউদ্দিন সরদার তাদের পরিবারগুলোকে হেনস্তা করার জন্য আটজনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে আরও একটি মামলা করেন। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে আখড়াখোলা গ্রামের তুলশি চরন সাধু, মধুসূদন সাধু, সাধন চন্দ্র, কার্তিক চন্দ্র, দেবচন্দ্র, মিলন চন্দ্র, সন্তোষ চন্দ্র ও নিমাই চন্দ্র সাধুকে। তাদের মধ্যে একজন কলেজ ছাত্রও রয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আলাউদ্দিনের দোকানের সামনে হাতবোমা বিস্ফোরণ, দোকানের মালামাল ভাংচুর, আলাউদ্দিনকে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা, তার স্ত্রীর গলার চেন ছিনিয়ে নেয়া ও ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত। এই মামলায় আদালতে জামিন নিতে আসা আটজনের মধ্যে সাতজন জামিন পান। প্রধান আসামি তুলশি চরনকে আদালত জেলহাজতে পাঠান। জামিন প্রাপ্তরা জানান, জামিন পেয়েও তারা বাড়িঘরে উঠতে পারছেন না। তারা অভিযোগ করে বলেন, আলাউদ্দিন সরদারের দুই ছেলে সেলিম ও ডালিম তাদের লোকজনের সঙ্গে এখন লোহার রড লাঠিসোটা ও হকিস্টিক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাড়ি ফিরলে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হবে বলে তাদের হুমকি দিচ্ছে। নিরুপায় হয়ে তারা সাংবাদিকদের জানাতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে তল্পিতল্পাসহ চলে এসেছেন। আলাউদ্দিন তাদের দেশত্যাগের হুমকি দিয়ে বলেছেন ‘অন্যথায় সবাইকে ফের জেলে ঢুকাবো। আর বের হতে পারবি না’। তবে জমি দখল, হয়রানিমূলক মামলা দেয়া এবং কয়েকজন শরিককে দেশত্যাগের হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন সরদার বলেন, তিনি নিয়ম অনুযায়ী জমি কিনেছেন। দুলালের ছেলে অপহরণের বিষয়ে তিনি জড়িত নন দাবি করে বলেন, আমার পাওনা জমি আমি দখল করছি। শরিকদের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি ওই জমি হজম করার পাঁয়তারা করছে বলেও তিনি পাল্টা অভিযোগ করেন ।
×