ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পতেঙ্গায় বর্ষ বিদায়ে হাজারো পর্যটক

প্রকাশিত: ১০:২৭, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 পতেঙ্গায় বর্ষ বিদায়ে  হাজারো  পর্যটক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ পতেঙ্গায় বর্ষ বিদায়ে হাজারো পর্যটকের আড্ডা। শেষ বিকেলের সূর্যাস্তই যেন আকর্ষণ। ইলিশের স্বাদ পেতে এবার পাহাড়ের পাদদেশে চট্টগ্রামবাসী। বৈশাথী আয়োজনে মেতেছে শিরীষতলা। পান্তা আর ইলিশ সেই সঙ্গে বেগুন ভর্তা। বৈশাখী খাবারে মেতেছে চট্টগ্রামের তারুণ্য। খাবারের মেন্যু শুনে জিভে পানি এসে যায়। এমন সব রকামারি দেশীয় খাবারের আয়োজন নিয়ে বাংলা বর্ষ ১৪২৬ কে বরণ করতে প্রস্তুত চট্টগ্রামের হোটেল, মোটেল আর রেস্তরাঁ। পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতে বাংলা ১৪২৫-এর শেষ সূর্যাস্ত দেখতে মানুষের ঢল ছিল শনিবার বিকেলে। নবরূপে সাজা পতেঙ্গায় তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না চৈত্রের শেষ বিকেলে। বৈশাখকে বরণ করতে শতবর্ষী শিরীষ গাছের নিচে থাকা বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা এবার প্রথমবারের মতো আয়োজন করছে বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠানের। এদিকে, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রেস্তরাঁয় যেখানে এতদিন থাই, বাংলা আর চাইনীজের ছড়াছড়ি ছিল। মাত্র একদিনের জন্য হলেও পহেলা বৈশাখের দুপুর আর রাতের খাবার চলবে বাংলা খাবার। রেস্তরাঁগুলো প্রস্তুত থাকবে বাংলা খাবারের পরিপূর্ণতা নিয়ে। এদিকে, ‘মেতে উঠি উৎসবে বৈশাখে আনন্দে’ এমন আনন্দের বাণী নিয়ে বাংলা খাবারের তালিকা নিয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিক পরিবারের জন্য আয়োজন করা হয়েছে বৈশাখের দুপুরে। জিভের স্বাদ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকির ভর্তায়। দুপুরের খাবারে যেন ফাটাফাটি অবস্থা সাংবাদিকদের জন্য। সেই আয়োজনে থাকছে বাংলার চিরায়ত পল্লী আর ভাওয়াইয়া গানের জমজমাট আসর। শনিবার বিকেলে সিআরবি শিরীষতলায় এসো হে বৈশাখ, এসো হে বৈশাখ ‘মেতে উঠি উৎসবে বৈশাখে আনন্দে’ এমন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বৈশাখকে বরণ করে নিতে চট্টগ্রাম শহরজুড়ে বাংলা সংস্কৃতির শত বছরের ধারা চলমান রয়েছে। বাংলার চিরায়ত সেই দিন একসময় গ্রাম বাংলায় প্রচলন থাকলেও এখন শহুরেরা আরও ভালভাবে পালনের উদ্যোগ নেয়। গ্রাম্য ঐতিহ্যে পহেলা বৈশাখ ও চৈত্রসংক্রান্তিতে হালখাতার মাধ্যমে বকেয়া আদায়ের চেষ্টা করত। কিন্তু গ্রামেও সেই প্রচলন হারিয়ে যেতে বসেছে আধুনিকতার ছোবলে। বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে চলছে শহুরে আয়োজন। নগরীর সংস্কৃতিপ্রেমীদের আরেক প্রাণকেন্দ্র ডিসি হিলের পাদদেশে দিনব্যাপী বাংলা মায়ের স্মরণে আয়োজন এখনও অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। শুধু ডিসি হিলই নয় সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিংয়ের (সিআরবি) সামনে থাকা শিরীষতলায়ও আয়োজন চলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখার নানা আয়োজন। আবার পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতকে ঘিরে কর্ণফুলীর মোহনায়ও বাংলা বর্ষ ১৪২৬ কে বরণের পালা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন রেস্তরাঁয় বৈশাখী আয়োজনের মধ্যে রয়েছে- পান্তাভাত, খুদের ভাত, সাদাভাত, ভুনা খিচুড়ি, আর খাসির তেহরিী। মাছের মধ্যে রয়েছে-মলা, ঢেলা, কই, ইলিশ, শিং, রুই, লইট্টা, মাগুর, বোয়াল, শোল, টাকি, বাটা, পোয়া ও পুঁটি মাছ। ভর্তার মধ্যে রয়েছে- চিংড়ি, শুঁটকির ভর্তা, ছুরি শুঁটকি ভর্তা, আনাজকলার ভর্তা, পেঁপে ভর্তা, থানকুনিপাতা ভর্তা, আলু ভর্তা, শিমের ভর্তা, চাপা শুঁটকি ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা, কাঁচা আমের ভর্তা, লইট্টা শুঁটকির ভর্তা, বৈশাখী ভর্তা। থাকছে সবজির পাঁচমিশালী ভর্তাও। ভাজার মধ্যে রয়েছে- লাল শাক, পালং শাক, ঢেঁড়শ, কুমড়া, পটল, কাঁকরল, পাটের শাক ও আলু ভাজা। মাংসের মধ্যে রয়েছে- হাঁস, গরু, মুরগি, কবুতর, কোয়েল পাখি ও খাসির মাংস। এছাড়া গরুর নলা এবং চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবানের মাংসও থাকছে দুপুর ও রাতের খাবারের সঙ্গে। পিঠা-পায়েশের মধ্যে রয়েছে- পাটিসাপটা পিঠা, পাক্কনপিঠা, ডিমেরপিঠা, চিতইপিঠা, নারকেলের পিঠা, সুজি পিঠাসহ বাঙালী ঘরানার নানা পিঠা। ভাত খাবার পর মিষ্টি খাবারের মধ্যে থাকছে- রসগোল্লা, হরেক রকমের মিষ্টি, শাহী জিলাপি, গুড়ের পায়েশ, মিষ্টি দই, টক দই, ফিরনিসহ নানা মিষ্টান্ন। খাবারের পর অনেকে মিষ্টান্ন খেতে পছন্দ করে না। তাই, দেশীয় ফলও আছে।
×