ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেহাই পাননি প্রভাবশালীরাও

প্রকাশিত: ১০:৪০, ৩ এপ্রিল ২০১৯

রেহাই পাননি প্রভাবশালীরাও

শাহীন রহমান ॥ সরকারের কঠোর মনোভাবের কারণে উচ্ছেদ অভিযানের হাত থেকে এবার রেহাই পাননি প্রভাবশালীরাও। স্থানীয় অবৈধ দখলদারদের অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি। সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণে নদীর পাড়ে গড়ে ওঠা বহতল ভবনও মুহূর্তের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, দখল উচ্ছেদের পর শুরু হবে চার নদী ঘিরে সরকারের মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে। এরপরেই দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু করা হবে। সরকারের নেয়া মহাপরিকল্পনায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে চলছে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম। ইতোমধ্যে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদ দুই দফায় অভিযান চালানো হয়েছে। এপ্রিল থেকে শুরু হচ্ছে তৃতীয় দফায় অভিযান। বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, দুই দফায় নদী তীর দখল করে গড়ে তোলা প্রায় তিন হাজার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব স্থাপনার মধ্যে যেমন রয়েছে বহুতল ভবন, তেমনি পাকা আধাপাকাসহ নানাভাবে নদী দখল করে রাখা ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই অভিযানকালেও প্রভাবশালীরা তাদের দখল বজায় রাখতে চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি। কখনও জমির দলিল নিয়ে হাজির হয়ে দাবি করা হয়েছে এটা তাদের নিজস্ব জমি। আবার কখনও আদালতের নিষেধাজ্ঞার অজুহাত দেয়া হয়েছে। আবার কেউ অভিযোগ করেছেন তাদের নোটিস না দিয়েই উচ্ছেদ করা হয়েছে। এখন তাদের মাথাগোঁজার কোন ঠাঁই পর্যন্ত নেই। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে শুধু নদী দখল করে যেসব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল সেগুলোই কেবল উচ্ছেদ করা হয়েছে। এক পর্যায়ে উচ্ছেদ অভিযানে সাধারণ মানুষ সহায়তা করেছে। অনেক এলাকায় দখলদার আবার দখল ছেড়ে নিজেরাই চলে গেছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগকারীদের এসব অভিযোগের কোন সত্যতা মেলেনি। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলছেন, উচ্ছেদ অভিযানের আগেই এসব ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানকে একাধিকবার নোটিস দেয়া হয়েছে। ব্যক্তি উদ্যোগে সরে যেতে বলা হয়েছে। কিন্তু বারবার নোটিস দেয়ার পর কেউ তারা দখল ছেড়ে দেয়নি। এখন উচ্ছেদের সময় তারা নানাভাবে প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছে। বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ বলছে, আগে থেকে নোটিস দেয়নি। শেষ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে। এভাবেই এক শ্রেণীর দখলদার বছরের পর বছর নদীর দখল উচ্ছেদে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। কিন্তু এবার তারা কোনভাবেই পার পায়নি। সরেজমিনে দেখা গেছে শেষ দফায় উচ্ছেদের পর নতুন করে কেউ নদী দখল করতে সাহস পায়নি। এমনকি ভবন ভেঙ্গে দেয়ার পর সেগুলো নিজ উদ্যোগে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন গত ’১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। এখন চার নদী ঘিরে সরকার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই এই উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। এ কাজে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৮ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা। প্রকল্পের পুরো অর্থই সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটি গত জুলাইয়ে শুরু হয়ে ’২২ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তারা জানায়, দখলদার উচ্ছেদের পর ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর সীমানা চিহ্নিত করে ১০ হাজার পিলার স্থাপন করা হবে। এর আগে ’১১ সালে চার নদীতে সীমানা নির্ধারণের জন্য ৯ হাজার ৫৭৭ পিলার স্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু বেশিরভাগ পিলার নিয়ে আপত্তি ওঠায় এই পিলার স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়াও নৌ দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য ফতুল্লা ভিজি মুখ থেকে শুরু করে বাবুবাজার ব্রিজ পর্যন্ত ব্যাপক উন্নয়ন কাজ হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ঢাকা শহরকে যানজট মুক্ত ও নদীর পাড় সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নদীর দুই তীরে ৫২ কি.মি. রাস্তা তৈরি করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও এ প্রকল্পে থাকছে তিনটি ইকোপার্ক, সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে, আরসিসি ওয়াল, স্টেপিং, পার্কিংসহ বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্যবর্ধন কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালুনদীর তীরভূমিতে পিলার স্থাপন, তীররক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ (২য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্প। বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদে দু’দফায় অভিযানে কামরাঙ্গীরচর, ছাতামসজিদ, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল, কিল্লার মোড়, শ্মশানঘাট এলাকায় যেসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়, অভিযানকালে নদীর জায়গা দখল করে পুনরায় গড়ে তোলা টিনের ঘর, আধাপাকা, পাকা বহুতল ভবন, বিভিন্ন স’মিল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠানের স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান বলেন, নদী দূষণ ও দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। দখলদার যত শক্তিশালী হোক না কেন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। নদী দখল করে সবচেয়ে বড় যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছিল তার নাম আমিন মোমিন হাউজিং। আগে যতবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানকে বারবারই বাঁচিয়ে দেয়া হয়েছে। এমনকি সীমানা পিলার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবৈধ দখলের বৈধতা দেয়া হয়েছিল। সেই সীমানা পিলারকে কাজে লাগিয়ে তারা গড়ে তোলে হাউজিং প্রতিষ্ঠান। অনেকের কাছে তারা প্লট বিক্রি করতে সক্ষম হয়। এবারের অভিযানে তাদের সেই চেষ্টা ভেস্তে গেছে। সরেজমিন দেখা গেছে নদীর প্রায় অর্ধেক জায়গা ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছিল আমিন মোমিন হাউজিং। টন টন বালি ফেলে নদী ভরাট করায় চ্যানেল পর্যন্ত ঘুরে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাশেই একটি হাউজিং কোম্পানি গড়ে তোলা হলে এর পাশেই তারা নদী ভরাট করে আরেকটি হাউজিং কোম্পানি গড়ে তোলে, নাম দেয়া হয় আমিন মোমিন হাউজিং। নদীর ভেতরে প্রায় ৩৮ বিঘা জমি তারা বালি ফেলে ভরাট করে গড়ে তোলে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর বিআইডব্লিউটিআইর এক শ্রেণীর কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে তারা নদী ভরাট অংশে সীমানা পিলার বসিয়ে দখলের বৈধতা নেয়। ফলে বারবার অভিযান চালানো হলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এমনকি আগে কখনও তাদের দখল উচ্ছেদও করা হয়নি। শেষ দফায় এবার রক্ষা পায়নি আমিন মোমিন হাউজিং। এবারও নানা কৌশলে তারা দখল উচ্ছেদ রোধ করতে চেষ্টার কম করেনি। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, এমন কাগজপত্র দেখানোর চেষ্টা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে একজন আইনজীবী উচ্ছেদে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। পরে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের জেরার মুখে লোকটি স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে তিনি প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে নিয়োগ করা কোন আইনজীবী নন। তিনি এখনে একটি প্লট কিনেছিলেন। কোম্পানির এক ব্যবস্থাপক নিজেকে ওই কোম্পানির লিগ্যাল এ্যাডভাইজার পরিচয় দিয়ে অভিযানও বন্ধ করতে বলে। এ সময় সে কিছু কাগজপত্র দেখিয়ে বলে আমরা হাইকোর্টের মাধ্যমে এই জায়গা পেয়েছি। এই জায়গায় ৪৫ বছর আগে ইটভাঁটি ছিল। পরে জায়গাটি আমরা কিনেছি। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক তার ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে জোর করে উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক কেএম আরিফ উদ্দিন লিগ্যাল এ্যাডভাইজার হিসেবে তার আইডিকার্ড শো করতে বললে তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হন। পরে সেখান থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। সরেজমিনে দেখা গেছে আমিন মোমিন হাউজিংয়ের দখল স্থাপনা উচ্ছেদের পর এখন বালু অপসারণের কাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তারা জানান, ভরাট বালু অপসারণের পর তুরাগের চ্যানেল তৈরির কাজ হচ্ছে। ইতোমধ্যে চ্যানেলটিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তুরাগ নদের বসিলায় মোমিন হাউজিং এলাকায় ভরাট মাটি অপসারণে এখন ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়াও দখল উচ্ছেদকালে নানাজন নানা অজুহাত, জমির দলিলসহ কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু কোন অজুহাত এবার তাদের রক্ষা করতে পারেনি। এমনকি পুনরায় কেউ নদী দখল করার সাহস দেখায়নি। চলমান অভিযানের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ এনে তা বন্ধের জন্য বারবার নানা ধরনের ছকও কষছে প্রভাবশালী মহল। কয়েকটি হাউজিং কোম্পানির মালিক এবং কয়েক ব্যক্তি বিআইডব্লিউটিএ’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, বিআইডব্লিউটিএ জোরপূর্বক এবং ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তাদের স্থাপনাগুলো ভেঙ্গে দিচ্ছে। এমনই একটি অভিযোগ করা হয় চন্দ্রিমা হাউজিংয়ের উচ্ছেদের সময়। কয়েক বাড়ির মালিক কিছু কাগজপত্র নিয়ে হাজির হয়। এ সময় তারা বলে আমরা নদীর সীমানার বাইরে বাড়ি করেছি। এই যে তার বৈধ কাগজপত্র। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তা ও উপস্থিত সাংবাদিকরা তৎক্ষণাৎ জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা একে একে পালিয়ে যায়। আমিন বাজার সেতুর নিচে কয়েক’শ টন কয়লার গাদা নিলামে তুললে মালিক পক্ষের একজন অভিযোগ করে নদীর প্রকৃত সীমানা না থাকায় তিনি ওই জায়গায় প্রায় একযুগ ধরে ব্যবসা করে আসছেন। তাকে কোন ধরনের নোটিস ছাড়াই হঠাৎ কয়লা সরিয়ে নেয়ার কথা বলা হয়। তৎক্ষণাৎ সরাতে না পারায় বিআইডব্লিউটিএ তার কয়লার গাদা নিলামে তোলে। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র সহকারী পরিচালক নূর হোসেন জানান, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ওই ব্যক্তিকে কয়েক দফা নোটিস দেয়া হয়েছে। এক মাস আগে থেকে তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। এছাড়া মাইকিং করে সতর্ক করা সত্ত্বেও তিনি নির্দেশ মানেননি। তাই ওই কয়লার গাদা অপসারণ করতে নিলাম ডাকতে বাধ্য হয়েছি। বছিলার ঝাউচর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানের সময় এক মহিলা ও তার স্কুল ছাত্রী মেয়েকে আহাজারিও করতে দেখা যায়। ওই মহিলা চিৎকার করে বলে সকালে সে তার মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গিয়েছিল। মেয়ের বাবা গেছে রিক্সা চালাতে। সহায়সম্বল সবকিছু বিক্রি করে তারা বাড়িটি কিনেছে। কিন্তু তারা এখন সর্বস্বহারা। পথের ফকির। তার আর বাঁচার আশা নেই। এ সময় কান্নারত ওই মহিলাকে পাশের লোকজনকে সান্ত¡না দিতে দেখা যায়। তার অভিযোগ বিআইডব্লিউটিএ তাকে কিছু না জানিয়ে তার বাড়িটি ভেঙ্গে দিয়েছে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা বলেন, যারা নদীর জায়গা দখল করেছে কেবল সেসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সাভার এলাকায় তুরাগ নদের উচ্ছেদ অভিযানের সময়ও স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের বাধার মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা। তারা জানান তুরাগের তীর দখল করে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গেলে কাউন্দিয়ার স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বাধার মুখে পড়তে হয়। এক পর্যায়ে চেয়ারম্যানের মারধরের শিকার হতে হয় উচ্ছেদকারীদের। পরে তাকে আটকের পর মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়া হয়। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, এবার কোন অভিযোগ আমলে নেয়া হচ্ছে না। তাদের এই অভিযানে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। ২০০১ সাল থেকে নদীরক্ষায় বহুবার অভিযান চালানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিবার আইনের ফাঁকগলে প্রভাবশালীরা নিজেদের রক্ষা করতে পেরেছেন। এর বাইরেও উচ্ছেদ অভিযানের পর কোন প্রকার সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় সেগুলো বারবারই দখল করা হয়েছে। এমনকি দখলের হাত বদলেছে অনেকবার। ফলে নদী রক্ষায় কোন উদ্যোগই কাজে আসেনি। শেষ পর্যন্ত আদালত নদীর রক্ষায় ২০০৯ সালে একটি যুগান্তকরী রায় দেয়। সেখানে নদীর দখল রোধ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, সীমানা পিলার স্থাপন এবং এর চারপাশে বনায়নের জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশও দেয়। এরপর এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের হিমশিম খেতে হয়েছে বারবার। এমনকি আদালতের রায় মেনে নদীর সীমানা পুনঃজরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়। সে অনুযায়ী সীমানা পিলার বসানো হয়। কিন্তু সীমানা পিলার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে বিআইডব্লিউটিএ। তবে নদী রক্ষায় কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি রয়েছে। ২০ কিলোমিটার পথ জুড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ, বিভিন্ন স্থানে পাড় বাঁধাইয়ের কারণে সৌন্দর্য যেমন ফিরে এসেছে তেমনি দখল রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে তুরাগের বিশাল অংশে ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকা-ও শুরু হয়েছে। এর আগেও ২০ কি.মি ওয়াকওয়ে ছাড়াও একটি ইকোপার্ক নির্মাণ করা হয়েছে শ্যামপুরে। মূলত সরকারের নেয়া মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই চলছে উচ্ছেদ অভিযান। ইতোমধ্যে সদরঘাট নৌ টার্মিনালে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। আগে পার্কিং ছিল না, বর্তমানে বিশাল পার্কিং ইয়ার্ড করা হয়েছে। যাত্রী নিরাপত্তার জন্য তৈরি হয়েছে সুন্দর আধুনিক ওয়েটিং লাউঞ্জ। দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তারা জানান, উচ্ছেদ অভিযানের পরে দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হবে।
×