ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শাহজালাল বিমানবন্দর

আমদানিকারকদের গাফিলতি, কার্গো হাউসে পণ্যের স্তূপ

প্রকাশিত: ১০:৫৫, ৩০ মার্চ ২০১৯

 আমদানিকারকদের গাফিলতি, কার্গো হাউসে পণ্যের স্তূপ

আজাদ সুলায়মান ॥ শত শত টন পণ্যের স্তূপ জমলেও কার্গো হাউস থেকে খালাস করছেন না আমদানিকারকরা। এতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাহত হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। বার বার তাগিদ দেয়া হলেও সেটা আমলে নিচ্ছেন না আমদানিকারক ও সিএ্যান্ডএফ এজেন্টসরা। এ বিষয়ে সর্বশেষ গত শনিবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনফারেন্স রুমে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকেও তাগিদ দেয়া হয় দ্রুত মাল খালাসের জন্য। তারপরও সেটা আমলে নিচ্ছেন না আমদানিকারকরা। দীর্ঘদিনের এ সমস্যার সমাধানে সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সবধরনের সেবা নিশ্চিত করলেও সেটা কাজে লাগাচ্ছেন না আমদানিকারকরা। এতে বদনামের ভাগিদার হতে হচ্ছে বিমান ও সিভিল এভিয়েশনকে। জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, আমরা সব ধরনের সুবিধা ও সেবা নিশ্চিত করার পরও আমদানিকারকরা নানা অজুহাতে মাল খালাস করছে না। তারা নানা এলসি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকায় মাল খালাস করতে পারছেন না বলে তারা নানা অজুহাত দেখান। সেজন্য সপ্তাহে এ দুদিন মাল খুব কম খালাস হয়। বিমান জানিয়েছে, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টন কার্গো মাল আমদানি হয়ে আসে। এ মাল উড়োজাহাজ থেকে নামিয়ে সরাসরি নেয়া হয় বিমানের কার্গো হাউসে যা ইমপোর্ট কার্গো হিসেবে পরিচিত। খালাসের আগ পর্যন্ত মালগুলো এখানেই স্তূপাকারে জমা থাকে। প্রতিদিনই মাল আসে। এমনকি শুক্র ও শনিবারও একই পরিমাণ আসে। এ মাল খালাস প্রক্রিয়া আগে বেশ জটিল ছিল। আগে সপ্তাহে শুধু অফিস খোলার দিনই মাল খালাস করা হতো। এ জন্য সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার যে পরিমাণ মাল আসে- তা খালাস করা হতো না। এতে মালের স্তূপ জমত। সপ্তাহের দুদিনে যদি ৪শ’ টন মালের স্তূপ জমে, মাসে সেটা ১৬শ’ টনের মতো হয়। যা সপ্তাহের ৫দিন দিনরাত কাজ করেও সব খালাস সম্ভব হতো না। এতে কার্গো হাউসের মালের স্তূপ ছড়িয়ে যেত আশপাশের এপ্রোন এরিয়ায় এবং খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকত সেই মাল। এতে অন্যান্য স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হতো। এ অবস্থায় সম্প্রতি বেসামরিক বিমান মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নির্দেশে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্র ও শনিবারও কার্গো হাউস খোলা রেখে মাল ডেলিভারি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সে মোতাবেক সিভিল এভিয়েশন, বিমান ও কাস্টমস ছুটির এ দুদিনেও কার্গো হাউস খোলা রাখার ব্যবস্থা নেয়। সার্বক্ষণিক কার্গোর ব্যাংক শাখা খোলাসহ অন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় সেবা ও সুবিধা নিশ্চিত করে সিভিল এভিয়েশন। কিন্তু তারপরও সেই মাল খালাসের জন্য আগ্রহী নন আমদানিকারকরা। মূলত এ কারণেই সব সুবিধা দেয়ার পরও কার্গো হাউসে মালের স্তূপ জমছে বলে জানিয়েছেন বিমানের পরিচালক আশরাফুল আলম। তিনি বলেছেন,বিমানের দিক থেকে কোন ধরনের গাফিলতি বা অবহেলা নেই। ছুটির দিনেও প্রয়োজনীয় জনবল সেখানে কর্মরত থাকে। এখন যদি আমদানিকারকরা তুচ্ছ অজুহাতে মাল না সরিয়ে নেন- তাহলে তো অন্য কারোর পক্ষে সেটা বের করে ফেলা দেয়া সম্ভব নয়। বিমান জানিয়েছে শুক্র ও শনিবার যেই মাল আসে, খালাস হয় তার দশভাগের একভাগ। ছয় শ’ টন মাল আসলে, মাত্র ৬০ টন খালাস হয়। বাকি সব থাকে খালাসের অপেক্ষায়। এ হিসেবে তো সপ্তাহে ৫৪০ টন এমনিতেই জমে যায়। মাসে তখন যে পরিমাণ কার্গো জমে থাকে সেটা তো বাকি ৫ দিনেও সম্ভব নয় সরানো। এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক ম্ঙ্গলবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, মাল খালাসের জন্য যে ধরনের লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার তার সবই দেয়া হচ্ছে শুক্র ও শনিবারও। সিভিল এভিয়েশন ও বিমানের প্ক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এদের ওপর দায় চাপানোর কোন সুযোগ নেই। এখন আমদানিকারকরা যদি সেই মাল খালাস না করেন তাহলে তো সেখানে সাময়িক স্তূপ জমাটাই স্বাভাবিক। তবে এ জন্য খুব শিগগির আমদানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করা হবে। তাদের আমদানি পণ্য খালাসে উদ্বুদ্ব করা গেলে কার্গো হাউসে আর স্তূপ জমবে না। এ বিষয়ে একজন আমদানিকারক বলেন, আমরাও পণ্য খালাস করতে চাই। সিভিল এভিয়েশন আর বিমান সেবা দিলেই তো সব হয় না। আমরা যেই ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে আমদানি করি সেই ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট শাখাও তো খোলা রাখতে হবে। আমি সোনালী ব্যাংকের মতিঝিলের একটি শাখার মাধ্যমে এলসি খুলে পণ্য আমদানি করি। পণ্য খালাসের দিন তো সেই ব্যাংক খোলা রাখতে হবে। সেটা তো স¤ভব নয়। তারপরও বিশেষ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যায় কিনা সেটা আগে বের করতে হবে।
×