ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয়জনকে কবর দেয়ার অপেক্ষায় স্বজনরা

প্রকাশিত: ০৯:০২, ১৮ মার্চ ২০১৯

 প্রিয়জনকে কবর দেয়ার অপেক্ষায় স্বজনরা

হুসনে আরা পারভীনের স্বামী ফরিদ ২০ বছর আগে দুর্ঘটনায় আহত হন। এরপর থেকে ফরিদ হুইলচেয়ারে চলাফেরা করেন। স্বামীকে দেখাশোনা করতেন হুসনে আরা। দিন দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছিলেন ফরিদ। কিন্তু স্বামীর প্রতি যত্নের সামান্য ঘাটতি হয়নি হুসনে আরার। শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন তারা। মসজিদে হামলা চালায় শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদী সন্ত্রাসী ব্রেন্টন ট্যারেন্ট। ফরিদের দিকে গুলি ছোড়ে সে। গুলি উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শেষবারের মতো স্বামী ফরিদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন হুসনে আরা। গুলিতে নিহত হন তিনি। কিন্তু ফরিদ প্রাণে বেঁচে যান। ফরিদ এখন স্ত্রী হুসনে আরাকে কবরে শায়িত করার অপেক্ষায়। এটাই জীবন, এটাই নিয়তি। ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ থেকে নিউজিল্যান্ডে গিয়ে বসবাস শুরু করেন এই দম্পতি। বন্দুকধারীর হামলায় আহত ৩৪ জন ক্রাইস্টচার্চের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আহত বাংলাদেশীদের সহায়তা করতে রবিবার হাসপাতালের জরুরী বিভাগের দরজার বাইরে অপেক্ষা করছিলেন মাহমুদ খান। তিনি গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়াকে বলেন, নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের কোন কনস্যুলেট নেই। তাই আমি এখানে এসেছি। ফরিদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু এই মাহমুদ খান। তিনি বলেন, ‘ফরিদ ২০ বছর আগে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর থেকে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করতেন। সারাক্ষণ তার স্ত্রী হুসনে আরা তাকে সাহায্য করতেন। তার স্ত্রী মারা গেল। ফরিদ তার একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে ফেললেন। এটা খুবই মর্মান্তিক, খুবই বেদনার। রবিবার হাসপাতালে মাহমুদ খানের সঙ্গে দেখা করেন নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের অনারারী কনসাল শফিকুর রহমান অনু। তারা দু’জন মিলে নিহতদের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। ইসলামী আইন অনুসারে যত দ্রুত সম্ভব একজন মৃত ব্যক্তিকে কবর দেয়ার বিধান রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা চান মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের প্রিয়জনকে কবর দিতে। কিন্তু পুলিশ নিহতের স্বজনদের কোন দিকনির্দেশনা দেয়নি যে, কখন মৃতদেহ তাদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। মাহমুদের মতো কিছু লোক তাদের সান্ত¡না দেয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, ‘কবর দেয়াটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা মৃতদেহ নেয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি বলেন, ইসলামী রীতি অনুযায়ী কোন দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব মৃতব্যক্তিকে কবর দেয়ার বিধান রয়েছে। এটা হলো স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু এ রকম অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বিষয়টা একটু ভিন্ন। মাহমুদ আরও বলেন, নিহতদের অনেকের স্বজন বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তারা আসতে চান এবং লাশ দেখতে চান। সুতরাং এটা অস্বাভাবিক নয় যে, তারা লাশ দুই একদিন রেখে দেবেন না। তবে এটা নাও হতে পারে। তিনি বলেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে নিজ দেশে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হতে পারে। কারণ পুলিশী মামলার ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতার জন্য লাশ কয়েকদিন তারা রেখে দেন। এটা আমরা জানি, এটা আমরা বুঝি। তারপরও তারা যত দ্রুত সম্ভব মৃতদেহ নিয়ে যেতে চান। ক্রাইস্টচার্চের আল নূর মসজিদ ও লিনউড মসজিদে হামলার ৪৮ ঘণ্টারও বেশি ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা এখনও নিহতদের স্বজনদের লাশ ফেরত দেয়ার বিষয়ে কোন নির্দেশনা দিতে পারেনি। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, রবিবার রাতের মধ্যে কিছু মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ফরেনসিক কর্মকর্তা ও প্যাথলজিস্টরা সাক্ষ্য-প্রমাণের জন্য মৃতদেহ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। নিউজিল্যান্ডের পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেন, আমাদের যেটা করতে হবে সেটা হলো মৃত্যুর প্রকৃত কারণ শনাক্ত করা। তবে এক্ষেত্রে আমরা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বিষয়টিকে খুব সতর্কভাবে দেখছি। তাই যত দ্রুত সম্ভব সেটা আমরা করার চেষ্টা করছি। এ প্রক্রিয়ার জন্য কত সময় লাগতে পারে সেটা অনুমান করা সম্ভব কি না- এমন প্রশ্ন করা হলে বুশ বলেন, ‘না। বিষয়টিকে আমরা পেশাদারী মনোভাব নিয়ে দেখছি এবং যত দ্রুত সম্ভব করার চেষ্টা করছি। কারণ ন্যক্কারজন হামলায় নিহতদের বিষয়টি আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। -গার্ডিয়ান
×