ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিকৃত বাচন নয়;###;আরিফ হোসাইন হিয়া

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ মাতৃভাষায় দূষণ

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ মাতৃভাষায় দূষণ

বাংলা ভাষার ইতিহাস বাঙালী জাতির গর্বের ইতিহাস, প্রতিবাদের ইতিহাস বাঙালী জাতির পরাধীনতার শৃঙ্খল ভঙ্গের ইতিহাস। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য রক্ত দিয়েছিল আমাদের ভাই রফিক, জব্বার, সালাম বরকত; কিন্তু আমরা কি সেই মর্যাদা সমুন্নত রাখায় আন্তরিকতার পরিচয় দিতে পেরেছি? আমরা কতটুকু লালন করতে পেরেছি তা আমার বোধগম্য নয়। ভাষার শুদ্ধতা আমাদের মানসিক শক্তিকে বিকশিত করে কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, যখন আমরা দেখি এই বাংলা ভাষাকে ব্যঙ্গ করা হয়, বিকৃত করে উচ্চারণ করা হয়। বিশেষ করে আমাদের টিভি চ্যানেল ও এফ এম রেড়িও এর উপস্থাপকরা উপস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করে উচ্চারণ করছে তখন বুঝতে খুব কষ্ট হয় যে তারা বাংলায় উপস্থাপন করছে নাকি ইংরেজীতে উপস্থাপন করছে। অনেক সময় রাতে যখন ঘুম আসে না তখন অনুষ্ঠান শুনি সেখানে তারা এমনভাবে বাংলা ভাষাকে ব্যঙ্গ করে উচ্চারণ করে সেটা বলার মতো নয়। আবার অধিকাংশ নাটকের সংলাপে একই দৃশ্য লক্ষ্য করা যায়। শুধু যে বিভিন্ন ধরনের নাটক বা উপস্থাপনায় বাংলা ভাষাকে বিকৃত করা হচ্ছে তা নয় বরং সিনেমা, সাহিত্য রচনা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ভাষার বিকৃত করা হয়। আর এই বলার ধরনটা অনেকটা ইংরেজী সংস্কৃতি ধারা প্রভাবিত হচ্ছে। যা সত্যিই জাতির জন্য লজ্জা ও অপমানের। এরকম আংশিক ও অবান্তর মন-মানসিকতা দিয়ে জাতি কখনও ভাল কিছু আশা করতে পারবে না। আমরা যদি আমাদের ভাষাকে যথাযথভাবে উচ্চারণ না করে বিদেশী ভাষার ঢঙে উচ্চারণ করি তাহলে এই লজ্জা গোটা জাতির ওপর বর্তায়। কেননা ভাষা বিকৃতি ও অপচর্চার মধ্যে দিয়ে হীনম্মন্যতার পরিচয় বহন করে। একটা বিষয় আমাদের সবারই ভাল করে জানা দরকার যে, পৃথিবীতে এমন কোন দেশ খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা তাদের নিজ মাতৃভাষার জন্য যুদ্ধ করেছে এবং শত শত মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছেন। এখন আমাদের কাছে সহজেই অনুমেয় যে, ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ আমাদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। ২১ ফেব্রুয়ারিতে শহীদ মিনারে ফুল দিলেই তাদের প্রতি ভাষার সম্মান দেখানো হয় না, সম্মান দেখাতে হবে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি। ভাষার লালন ও পালন করতে হবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। তাহলেই বেঁচে থাকবে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতি। আমরা এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ও প্রতিকার চাই। আমার বাংলা ভাষার শুদ্ধ প্রয়োগ চাই। যারা বাংলা ভাষাকে বিকৃত ও ব্যঙ্গ করে যাচ্ছে তাদের দ্বারা নতুন প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। ফলে শুদ্ধ ভাষা চর্চায় তাদের উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। যারা এমনটা করে যাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। এছাড়াও এর শাস্তি হিসেবে নতুন আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে। যখন এই আইনের বাস্তবায়ন হবে এবং শাস্তি ভোগ করবে তখন কিছুটা হলেও ভাষাকে বিকৃতভাবে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকবে বলে মনে করি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×