ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল্লাহ হারুন জুয়েল

শফিপুর থেকে পিলখানা ॥ বিদ্রোহ দমনের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল

প্রকাশিত: ০৯:১৭, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শফিপুর থেকে পিলখানা ॥ বিদ্রোহ দমনের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল

আমাদের ইতিহাসজুড়ে একদিকে রয়েছে ভয়াবহ ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসঘাতকতা ও বর্বরতার কলঙ্ক, অন্যদিকে রয়েছে জনগণের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। আমরা কখনও ক্রসফায়ারে নিহত হলে আনন্দিত হই, আবার ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে মানবিকও হয়ে উঠি। এদেশে রক্ত ঝরেছে স্বাধীনতার জন্য, আবার ক্ষমতায় টিকে থাকতে অন্তত ২১টি ক্যুতে রক্ত ঝরেছে হাজার হাজার সেনাসদস্য ও মুক্তিযোদ্ধার। ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে যে হত্যাকান্ড হয় তা ছিল ঘৃণিত ও নিন্দনীয়। বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করা উচিত ছিল- এই মর্মে কেউ কেউ যখন মন্তব্য করেন তখন মনে পড়ে বিস্মৃতির আড়ালে ঢাকা ৯৪ সালের আনসার বিদ্রোহের কথা। বিডিআর বিদ্রোহে সুস্পষ্টই একটি গোষ্ঠীর সক্রিয় ইন্ধন ও সংশ্লিষ্টতা ছিল, কিন্তু আনসার বিদ্রোহে ছিল না কোন রাজনৈতিক প্রভাব। কেন এই বিদ্রোহ বা কেন স্বার্থান্বেষী মহল বিদ্রোহ সৃষ্টির সুযোগ পাবে তা বিবেচনা করা প্রয়োজন। সামরিক, আধাসামরিক বা বেসামরিক বাহিনীগুলোতে নিয়োজিত সদস্যদেরও ব্যক্তিগত জীবন আছে। দেশসেবার ব্রত নিয়ে কোন বাহিনীতে যোগ দিলেও নিজের ও পরিবারের চাহিদা মেটানোর মতো সন্তোষজনক নিশ্চয়তা সুষ্ঠু কর্মদক্ষতার অন্যতম প্রধান শর্ত। ফলে বিডিআর সদস্যদের মধ্যেও যে অসন্তোষ ছিল তা অস্বীকার করা যাবে না। ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৯, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে তাদের দাবি-দাওয়া পূরণের ও জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমন অবস্থায় একটি গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে বিদ্বেষ ছড়িয়ে বিদ্রোহের দাবানল ছড়িয়ে দিয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু যারা এখনও এ ঘটনায় সামরিক অভিযানের পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করে যাচ্ছেন তাদের জন্য দুটি ঘটনা উল্লেখ করছি। ১৯৯৪ সালের আনসার বিদ্রোহ ১৯৯৪ সালের ৩০ নবেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত শফিপুর আনসার একাডেমিতে আনসার সদস্যরা বিদ্রোহ করে। জীবনধারণের জন্য যেটুকু প্রাপ্য তার দাবি নিয়ে আনসার সদস্যরা সংগঠিত হয়ে কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করলেও হত্যা বা আহত করেনি একজনকেও। দেশের সুশীল সমাজ ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধিদের কেউ তাদের দাবি অযৌক্তিক বলেননি। কিন্তু এ বিদ্রোহ দমনে তৎকালীন বিএনপি সরকার আলোচনার কোন উদ্যোগ না নিয়ে বিডিআর ও পুলিশ বাহিনীর সমন্বয়ে বর্বরোচিতভাবে অভিযান পরিচালনা করে। সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশে কঠোর শর্ত আরোপ করা হয়। অভিযানে সরকারীভাবে চার আনসার সদস্য নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হওয়ার কথা বলা হলেও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, সাংবাদিক ও গবেষকদের মতে শতাধিক আনসার সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল। অন্তত দুই শতাধিক গুলিবিদ্ধ ও আহত হন। পঙ্গুত্ববরণ করেন অনেকে। আড়াই হাজারের বেশি আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ও চাকরিচ্যুত করা হয়। ফরহাদ মজহারের ভাষায়- ‘There is no one in this cruel society to listen to the Ansars. In this intolerable environment, this uprising was inevitable. At the same time, we want to say with emphasis that the rebellion was also completely legal. Khaleda Zias government put down the revolt after massive bloodshed. At the last count, even the most neutral news sources put the number of Ansar dead is at least thirty. বিবেকবোধ নিয়ে চিন্তা করলে পরিচালিত সেই অভিযান কি যৌক্তিক মনে হয়? আলোচনার উদ্যোগ না নিয়ে অভিযান পরিচালনার কারণে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারকে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। উল্লেখ না করলেই নয় যে, আনসার বিদ্রোহের সময় বিরোধী দল আওয়ামী লীগ যদি তৎকালীন বিএনপি সরকারকে পর্যুদস্ত করতে অপরাজনীতি করার চেষ্টা করত তাহলে পরিস্থিতি হতো ভয়াবহ। ১৯৭৭ সালের বিমান ছিনতাই ১৯৭৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে পাঁচজন সন্ত্রাসী ভারত থেকে প্রায় ১৫৬ জন যাত্রীকে জিম্মি করে জাপান এয়ারলাইন্সের একটি বিমান ছিনতাই করে ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন তেজগাঁও বিমানবন্দরে অবতরণ করে। জেআরএ নামের সন্ত্রাসী সংগঠনটি তাদের ৯ জন আটক সদস্যের মুক্তি ও ৬ বিলিয়ন ডলার দাবি করে। অপহরণের পঞ্চম দিনে ২ অক্টোবর, ৭৭ এয়ার ভাইস মার্শাল মাহমুদের মধ্যস্থতায় ৬ জন সন্ত্রাসী মুক্তি ও দাবিকৃত অর্থ দেয়া হলে ১১৮ জন যাত্রীকে মুক্তি দেয়া হয়। পরবর্তী সময় কয়েক ধাপে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেয়া হয়। আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ঘটনা চলাকালে প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে অনুষ্ঠান ট্রান্সমিশন করা বিটিভি পাঁচদিন ধরে সরাসরি এ ঘটনা লাইভ সম্প্রচার করে। গোটা জাতি যখন বিটিভির সামনে মগ্ন তখন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে জিয়ার নির্দেশে ক্যু-এর নামে হত্যা করা হচ্ছিল শত শত বিমান ও সেনা সদস্যকে। একদিকে রাজনৈতিক, অন্যদিকে সামরিক কৌশল। জাপান সরকার যখন দেড় শ’ জীবনের জন্য সন্ত্রাসীদের মুক্তি ও বড় অঙ্কের টাকা পরিশোধ করছিল তখন বাংলাদেশের সামরিক সরকার ছয় শ’ সেনা সদস্যকে হত্যা করেছিল। এমনই ছিল আমাদের জীবনের মূল্য। ডেডলাইন ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ছিল সুপরিকল্পিত। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, প্রেক্ষাপট ও তথ্য বিশ্লেষণ করলে স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র প্রতীয়মান হয়। ঘটনার দিন (একটি ফুটেজে দেখা যায়) ৯টা ১ মিনিটে বিডিআর প্রধান শাকিল আহমেদ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়ার কথা উল্লেখ করে বক্তব্য দেয়ার সময় এক সিপাহী (মাঈন) আকস্মিকভাবে মঞ্চে উঠেই ডিজির দিকে অস্ত্র তাক করে ধরে। ডিজি মাথা ঘুরিয়ে তাকালে ওই সৈনিক প্রায় অজ্ঞানের মতো হয়ে পড়ে যায়। তারপরই গুজব ছড়ানো হয় যে, ওই সৈন্যকে অফিসাররা হত্যা করেছে। বিদ্রোহের পরপর দেয়াল টপকে বেরিয়ে আসা মেজর নাজমুল ইত্তেফাকে প্রকাশিত সাক্ষাতকারে বলেন, ‘মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের সঙ্গে কোন সৈনিকের বাকবিতন্ডা হয়নি। ডাল-ভাত কর্মসূচী নিয়ে কিছুটা ক্ষোভ ছিল, তবে তা এতটা ভয়ঙ্কর রূপ নেয়ার মতো ছিল না।’ সভা শুরু হওয়ার মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে পূর্ব, পশ্চিম ও উত্তর দিক থেকে গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়। সংঘবদ্ধ একটি দল অস্ত্র লুট করতে যায়। পরিকল্পিতভাবে অপপ্রচার করা হয় যে, বিডিআর সৈন্যদের হত্যা করা হবে। বিডিআর জোয়ানরা একে অপরকে বলতে থাকে অফিসারদের ধর। মাত্র দেড় ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। সংশ্লিষ্টদের একটি অংশ ঘটনা ঘটিয়েই পালিয়ে যায় বলে জানা যায়। গণমাধ্যমের সামনে একদিকে দাবি-দাওয়া উত্থাপন করা হয়, অন্যদিকে সেনা কর্মকর্তাদের কয়েকটি পরিবারের ওপর চালানো হয় নির্মম নৃশংসতা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার কৌশল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সকাল ৯টা থেকে তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে পরামর্শ করতে শুরু করেন। ৯টা ৫১ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী সেনাপ্রধানকে ৪৬ ব্রিগেড নিয়ে অভিযানের প্রস্তুতির নির্দেশও দেন। বিবেচ্য বিষয় ছিল বিডিআর সদর দফতরে আটকে পড়া কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা। অভিযান চালালে সম্ভাব্য যে ঝুঁকি ছিল সেগুলো এমন- ১. ১৯৯৪ সালে আনসার বিদ্রোহ দমনে শফিপুরে পরিচালিত অভিযান ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। দেশের ক্রান্তিলগ্নে রাজনৈতিক ফায়দা লাভের চেষ্টা ছিল অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক। সাবেক বিডিআর প্রধান ফজলুর রহমান, সাদেক খানসহ কয়েকজন বিএনপি নেতা ও কয়েকটি গণমাধ্যম সরাসরি বিডিআর সদস্যদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর খালেদা জিয়া মিডিয়ার সামনে আসেন। তিনি ও সাকা চৌধুরী অভিযান পরিচালনার পক্ষে মন্তব্য করেন। অভিযান পরিচালনা করলে যে তারা নিশ্চিতভাবে অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেন তা বুঝতে কষ্ট হয় না। প্রশ্ন করা যায়, ১৯৭৭ সালে ক্যান্টনমেন্ট সংলগ্ন লোকবসতিহীন স্থানে পাঁচ বিমান ছিনতাইকারীর সঙ্গে আপোস না করে কেন অভিযান পরিচালনা করা হয়নি? যদি জাপান সরকারের প্রসঙ্গ আনা হয় তাহলে বলব, অর্থ-সম্পদে ধনী হওয়া অনেক কিছুর ওপর নির্ভরশীল, কিন্তু মানবিক গুণাবলীতেও কি আমরা জাপান থেকে পিছিয়ে ছিলাম? আসলে যাদের অতীত রক্তে রঞ্জিত তাদের কাছে কোন বাহিনীর সদস্যদের জীবনের মূল্য নেই। ২. লাঠিকে সম্বল করে যাদের অবস্থান নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ সেই আনসার বাহিনীর ওপর রিমোট এলাকা শফিপুরে অভিযান পরিচালনা করা আর ধানম-ি-হাজারীবাগ-জিগাতলার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আধাসামরিক বাহিনী বিডিআরের ওপর অভিযান পরিচালনা করা কোনভাবেই এক নয়। এ বিদ্রোহ সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলেছিল। সিলেট, সাতক্ষীরাসহ কয়েকটি এলাকায় বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল এবং রংপুরে তিনজন সেনা কর্মকর্তাকে জিম্মিও করা হয়েছিল। অভিযান পরিচালনা করা হলে এ ঘটনা দুটি বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ হিসেবে রূপ নেয়ার ও সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। ৩. আটকে পড়াদের অবস্থা সম্পর্কে ধারণা ছাড়া সেনা অভিযান হলে প্রাণহানি ঘটত অগণিত মানুষের। এছাড়া পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের সকলে পালিয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যেত। ফলে এ ধরনের অন্য ঘটনাগুলোর মতোই এটি রহস্যাবৃত থাকত ও প্রকৃত দোষী এবং নির্দোষ পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ত। আইনের শাসন তো তাকেই বলে যেখানে একজন অপরাধী ছাড়া পেলেও নির্দোষী যেন শাস্তি না পায়। ৪. সেনা অভিযান না চালিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ও হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার সিদ্ধান্তই যে সঠিক ছিল তার প্রমাণ হচ্ছে, ৯টা ৪৭ মিনিটেও ডিজি বিডিআরের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ হয়েছিল। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে প্রায় সকলকে হত্যা করা হয়। উসৃঙ্খল সৈন্যদের গুলিতে চারজন পথচারীও নিহত হন। তাই অভিযান চালালে জীবিত উদ্ধারকৃত শতাধিক জীবন বিপন্ন হতো, নিরপরাধ বিডিআর সদস্য ও সাধারণ মানুষ নিহত এবং আহত হতো। ফলে নিশ্চিতভাবে অবস্থার অবনতি ঘটত ও পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করত। ৫. এ ঘটনায় সবচেয়ে উৎকণ্ঠার বিষয় ছিল ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক জঙ্গী ঘাঁটি ছিল, যা আইএসআই ও ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমন্বয়ে পরিচালিত হতো। সামগ্রিক অবস্থা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী আবেগের বশে কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিলে দেশে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা ছিল। পরিবার-পরিজন বা বন্ধু ও সহকর্মীদের হারানো অবশ্যই আবেগের সঙ্গে জড়িত এবং এজন্য কারও হয়ত ক্ষোভও থাকতে পারে। কিন্তু নিজের জীবনের চেয়ে দেশ ও জনগণের স্বার্থ যখন উর্ধে থাকে সেখানেই একজন সৈনিকের, একজন নাগরিকের জীবনের সার্থকতা। বিশ্বের ইতিহাসে সামরিক বা আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র রূপ নেয়া অসন্তোষগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নিয়ন্ত্রণে সময়সাপেক্ষতা ও ব্যাপক প্রাণহানি। শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনাক্রমে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং বাস্তবতার নিরিখে দূরদর্শী ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে মাত্র ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সঙ্কট নিরসন সম্ভব হয়। এ ঘটনার পরপরই নেপথ্যের ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে এফবিআই ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, কোন কোর্ট মার্শাল বা বিশেষ আদালতে গোপন বিচার না করে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় সাধারণ আদালতে অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। ভূমিকায় বিদ্রোহের নেপথ্য কারণ সম্পর্কে লিখেছিলাম যে, স্বার্থান্বেষী মহল কেন বিদ্রোহ সৃষ্টির সুযোগ পাবে! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কারণটি বিবেচনায় রেখে অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন। স্বাধীনতার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ শূন্য কোষাগার নিয়ে যাত্রা করেও বঙ্গবন্ধু নিরাপত্তা কাঠামো দাঁড় করাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন সুশৃঙ্খল ও সমৃদ্ধ একটি সামরিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। ৭৫-এর পর আমরা একটি বিশেষ শ্রেণীর কাছে সব সময়ই শুনেছি যে, দেশের বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় নিরাপত্তা খাতে। গুটিকয়েক ব্যক্তি হয়ত লাভবান হয়েছিলেন, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে কর্মরত সদস্যদের জীবনযাত্রার মান খুব বেশি সন্তোষজনক ছিল না। ১৯৯৮ সালের আগে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের জন্য একবেলা মোটা চালের ভাত এবং ২০০৯ সাল পর্যন্ত একবেলা আমিষ বরাদ্দ ছিল- এ তথ্য অনেকেরই অজানা। বাংলাদেশে সামরিক বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জীবনমান উন্নয়নের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিডিআরকে বিজিবি নামকরণ করে ও সম্পূর্ণরূপে ঢেলে সাজিয়ে যুগোপযোগী একটি বাহিনীতে রূপান্তর করেছেন। অত্যাধুনিক বর্ডার ফোর্স হিসেবে প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে সুশৃঙ্খল চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠায় অনন্য অবদান রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। বিগত কয়েক বছর ধরে দক্ষ ও মেধাবী সেনা কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে বিজিবি কৃতিত্বের সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করছে- এই আশা জাগানিয়া সুন্দর সত্যটি কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। লেখক : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কলামিস্ট
×