ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গণশুনানিতে পরাজিত প্রার্থীদের বিবরণ

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে বই প্রকাশ করছে ঐক্যফ্রন্ট

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে বই প্রকাশ করছে ঐক্যফ্রন্ট

শরীফুল ইসলাম ॥ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির সময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীদের দেয়া অনিয়মের বিবরণ শীঘ্রই বই আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। এর পর নির্বাচনের অনিয়ম সম্পর্কে জনমত তৈরি করতে এ বই দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে দেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ বিষয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সূত্র মতে, শুক্রবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে গণআদালতের আদলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচিত ৪৩ জন পরাজিত প্রার্থী তাদের নিজ নিজ এলাকার ভোটের অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন। এ ছাড়া জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পরাজিত প্রার্থীদের মধ্যে যারা বক্তব্য রাখেননি তাদের কাছ থেকেও লিখিত রিপোর্ট নেয়া হয়। ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন ও এর আগে-পরের সকল অনিয়মের কথা রেকর্ড করা হয়। জানা যায়, গণশুনানিতে উঠে আসা জাতীয় সংসদের অনিয়মের বিবরণ রেকর্ড করে এখন একটি বই আকারে প্রকাশের কাজ চলছে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতা সকল অনিয়মের চিত্র সমন্বয় করে বইয়ের জন্য একটি খসড়া তৈরি করছেন। পরে এটি ড. কামাল হোসেনের কাছে দেবেন। তিনি এটি গণশুনানিকালে তার সঙ্গে থাকা ৭ সদস্যের সঙ্গে বসে আইনগতবিষয়সহ বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয়গুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বই প্রকাশের জন্য চূড়ান্ত করবেন। তার পর এটি কোন একটি ছাপাখানায় যাবে। সূত্র মতে, নির্বাচনের অনিয়মের বিবরণ সম্বলিত বই প্রকাশের পর তা সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে জনসম্মুখে ছড়িয়ে দেয়া হবে। এ ছাড়া ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও আন্তর্জাতিক সংস্থা অফিসে এ বই পৌঁছে দেয়া হবে। দেশের বাইরেও বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তির কাছে এ বই পাঠানো হবে। এভাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম সম্পর্কে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে জনমত তৈরি করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। উল্লেখ্য. গণশুনানি কেন্দ্র করে রাজধানীতে বড় ধরনের শোডাউন করতে চেয়েছিল জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জন্য বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতিটি শরিক দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। পূর্বনির্ধারিত সময় ২৪ ফেব্রুয়ারি এ গণশুনানি করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও মহানগর নাট্যমঞ্চসহ যে ক’টি ভেন্যু পছন্দ করা হয়েছিল গণশুনানি করার জন্য সেসব ভেন্যু না পাওয়ায় দুই দিন আগে ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান করা হয়। কিন্তু এটি বিচারাঙ্গনের ভেতর স্পর্শকাতর জায়গা হওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নিয়ে শোডাউন করা সমীচীন হবে না বলে তারা সাদামাটাভাবেই গণশুনানি কর্মসূচী পালন করেন। অভিজ্ঞ মহলের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট রাজনৈতিক অঙ্গনে যে সাড়া ফেলে নির্বাচনে ভরাডুবির পর তা স্তিমিত হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তারা সরকার বিরোধী আন্দোলন কর্মসূচী দিয়ে রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু বিএনপিসহ জোটের শরিক দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আন্দোলন কর্মসূচী পালনের বিষয়ে সায় না দেয়ায় ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচী নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটি। এরই অংশ হিসেবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় অনিয়ম নিয়ে গণশুনানি কর্মসূচী পালন করেন তারা। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানির আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি প্যানেল ছিল। ৭ জনের প্যানেল মঞ্চে বসে গণশুনানি পরিচালনা করেন। ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে প্যানেলে আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী, আ ক ম আনিসুর রহমান খান, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মহসিন রশিদ ও অধ্যাপক আসিফ নজরুল। শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে দুপুরে এক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলে গণশুনানি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচনে অংশ নেয়া ৪৩ জন প্রার্থী এ শুনানিতে অংশ নেন। তবে যারা বক্তব্য রেখেছেন এবং যারা রাখেননি তারাও লিখিতভাবে নিজ নিজ এলাকার ভোটের অনিয়মের চিত্র সম্বলিত রিপোর্ট জমা দেন। সূত্র মতে, বিএনপি এখনই আন্দোলন করতে পারছে না এমনটি মাথায় রেখে লন্ডন প্রবাসী বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তারেক রহমান জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে গণশুনানি কর্মসূচী পালন করার পরামর্শ দেন। এ কর্মসূচী পালনের পর নির্বাচনে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে যে বই প্রকাশ করা হচ্ছে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার পরামর্শও তারেক রহমানের বলে জানা গেছে। তবে গণশুনানিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থীরা বার বার নির্বাচনে অনিয়ম ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন কর্মসূচী দাবি করলেও আপাতত সেদিকে যাচ্ছে না জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ জোটের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও আপাতত আন্দোলন না করার পক্ষে। তাই গণশুনানির তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যে বই প্রকাশ করা হবে আপাতত তা সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেই সময় কাটাতে চান এ জোটের নেতাকর্মীরা।
×