ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে ৮ প্রকল্প অনুমোদন

রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার টন গম কেনা হচ্ছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ এক হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট আটটি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নতুন ব্যাংকের অনুমোদন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশ্লেষণ রয়েছে। তিনি বলেন, সংখ্যা বিবেচনায় না নিয়ে ব্যাংকিং খাত নিয়মকানুনের মধ্যে থেকে গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করতে পারছে না কি না, সেটাই মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত। ব্যাংকিং খাতে বড় সমস্যা খেলাপী ঋণ। এই ঋণ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে একটি বিশেষ অডিট করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে যোগ দেয়ার আগে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরই অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে সরকার রাশিয়া থেকে ৫০ হাজার মে.টন গম কিনবে। এ লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য এসব গম কিনতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সিঙ্গাপুরভিত্তিক এ্যাগ্রো ক্রপ ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির মাধ্যমে এসব গম কেনা হবে। সভা শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগম জানান, ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকে আটটি ক্রয় প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। তিনি জানান, সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এর আওতায় এলেঙ্গা-হাটিকুমরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেন উন্নীতকরণ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৭৬৯ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। সরকার ও এডিবির অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। একই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইল হতে এলেঙ্গার ১০ কিলোমিটার রাস্তা দুই লেন থেকে ৪ লেনে উন্নীতকরণের ভেরিয়েশন প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে। আগে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ১১৭ কোটি টাকা ব্যয় বাড়িয়ে ৪৭০ কোটি ৭৫ লাখ টাকা করা হয়েছে। নাসিমা বেগম বলেন, অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দুটি প্রস্তাব রয়েছে। সরকার দেশীয় কোম্পানি মেসার্স পোটন ট্রেডার্সের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় ৭০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগন গ্রানুলার ইউরিয়া সার চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে আমদানি করা হবে। একই সঙ্গে হারবারিয়া মংলা বন্দরের মাধ্যমে ৭০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৫ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগন প্রিল্ড ইউরিয়া সার ক্রয় করা হবে। সভায় অনুমোদিত অন্য প্রস্তাবগুলো হলো, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক বাস্তবায়িত ইনফো সরকার-২ প্রকল্প হতে ১৮ হাজার ১৩০টি সরকারী অফিসের লিজড লাইন নেটওয়ার্ক সার্ভিস, ইন্টারনেট ও ব্যাকবোন নেটওয়ার্ক সার্ভিস ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন। এতে মোট ব্যয় হবে ৯৩ কোটি ৪৫ লাখ ৮২ হাজার টাকা। তিনটি এনটিটিএন প্রতিষ্ঠান ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ এর মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া ঢাকার আজিমপুর সরকারী কলোনির অভ্যন্তরে সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য দুটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্পে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় দুটি ২০তলা ভবনে ১৫২ ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৯৫ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। কাজটি পেয়েছে জিকেবি কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। গ্রাহকসেবাই ব্যাংকিং খাতের মুখ্য বিষয়-অর্থমন্ত্রী ॥ নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে তার তেমন জানা নেই। তিনি বলেন, ব্যাংকের অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর এক্ষেত্রে দেশে কতটি ব্যাংক হলো সেই সংখ্যা মুখ্য বিষয় নয়। চাহিদা ও গ্রাহকসেবার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই সাধারণত ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে। নতুন যে তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দেয়া হয়েছে অবশ্যই এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজস্ব বিশ্লেষণ রয়েছে। তাই এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বেঙ্গল, পিপলস ও সিটিজেন’ নামের নতুন তিনটি ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। এই তিনটিসহ দেশে ব্যাংকের সংখ্যা বাষট্টিতে উন্নীত হতে যাচ্ছে। গত ’১২ সালেও বর্তমান সরকার আরও ১২ বেসরকারী ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছিল। লাইসেন্সপ্রাপ্ত সে সব ব্যাংকের মধ্যে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহকসেবা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট ব্যাংক পরিচালকদের বিরুদ্ধেও অনিয়ম পেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই বাস্তবতায় নতুন অনুমোদন পাওয়া ব্যাংক তিনটি ভাল চলবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সংশয় রয়েছে। যদিও সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মাল আবদুল মুহিত, ব্যাংক খাতের আকার বড় হয়ে যাওয়ায় তা সংকোচনের কথাও বলেছিলেন। এরপর গত কয়েক বছর ধরেই বিপুল পরিমাণ খেলাপী ঋণ, আর্থিক কেলেঙ্কারি, অনিয়ম আর তারল্য সঙ্কটে বারবারই আলোচনায় এসেছে দেশের ব্যাংকিং খাত। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, আমি এই মুহূর্তে এ বিষয়ে কোন কথা বলব না। কারণ অনুমোদন পাওয়া তিনটি ব্যাংক সম্বন্ধে আমাকে জানতে হবে। তিনি বলেন, গবর্নরের সঙ্গে আলাপ করলে তথ্য পাওয়া যাবে। আর তখনই কথা বললে ভাল হবে।
×