ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি আমদানিতে সঞ্চয়

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

এলএনজি আমদানিতে সঞ্চয়

প্রাকৃতিক গ্যাসের অপ্রতুলতা দুশ্চিন্তার একটা অন্যতম কারণ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে জ্বালানি সঙ্কট নিরসনে বহুমুখী চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এলএনজি আমদানির মধ্যে একটি। শিল্পক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে জ্বালানি গ্যাসের অবদান ব্যাপক। গত বছরের এপ্রিল মাসে প্রথম এলএনজি আমাদের জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হয়। ওইধাপে ১৩৩০০০ কিউবিক মিটার গ্যাস আমদানি করা হয়। কাতার ভিত্তিক র‌্যাস গ্যাস নামক কোম্পানি এ গ্যাস সরবরাহ করে। এ বছর সুইজারল্যান্ডের অঝঞজঅ ঞৎধহংপড়ৎব ঊহবৎমু, অঙঞ নামক আরেকটি কোম্পানি গ্যাস সরবরাহের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এবং শেষ ধাপে রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায় গ্যাস আমদানিতে আগের কোম্পানি থেকে অঝঞজঅ ঞৎধহংপড়ৎব ঊহবৎমু কোম্পানির নিকট হতে ইউনিট প্রতি ৬৫ সেন্ট কম মূল্যে কেনার দর ঠিক হয়েছে। যা মোট মূল্যের উপর বড় অঙ্কের সঞ্চয় হবে। এছাড়া র‌্যাস গ্যাসকে মূল্য পরিশোধ করতে হতো ১৫ দিনের মধ্যে। সেখানে এই কোম্পানিকে মূল্য পরিশোধ করতে সময় পাওয়া যাবে ৪৫ দিন। এখানেও অনেকটা সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অঝঞজঅ ঞৎধহংপড়ৎব ঊহবৎমু ১.২৫ মেট্রিকটন এলএনজি সরবরাহ করবে আগামী ১৫ বছরে। তবে সরকার আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি দিন ২০০০ মিলিয়ন কিউবিক ফিট এলএনজি জাতীয় গ্রীডে যুক্ত করতে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। এলএনজির সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, যখন প্রাকৃতিক গ্যাসকে সাধারণ বায়ুম-লীয় চাপে তরল করে ফেলা হয়। তখন এর আয়তন কমে যায় প্রায় ৬০০ গুণ। অর্থাৎ ৬০০ লিটার গ্যাসকে এলএনজিতে রূপান্তরিত করে মাত্র এক লিটারের ছোট্ট একটা বোতলে ভরে ফেলা যায়। এ জন্যই এলএনজি জাহাজে পরিবহন করা সুবিধাজনক। একসঙ্গে অনেক বেশি জ্বালানি পরিবহন করা যায় পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে। এলএনজি সরবরাহ কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের উত্তোলন থেকে আরম্ভ করে এলএনজিতে রূপান্তর, সামুদ্রিক পরিবহন, পুনরায় গ্যাসে রূপান্তর এবং বণ্টন- এই পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয় এলএনজি যোগান শৃঙ্খল (ইংরেজী খঘএ ঝঁঢ়ঢ়ষু ঈযধরহ)। এই শৃঙ্খলের ধাপগুলো হচ্ছে- প্রাকৃতিক গ্যাসের অনুসন্ধান, আহরণ ও যোগান, এলএনজি উৎপাদন ও সংরক্ষণ, এলএনজি পরিবহন, সংরক্ষণ ও পুনঃগ্যাসিকরণ, গ্যাস বণ্টন/বিপণন। প্রথম তিনটি সংঘটিত হয় এলএনজি বিক্রেতার পক্ষ থেকে। পরিবাহিত এলএনজি ক্রেতার রিসিভিং টার্মিনালে পৌঁছালে পুনঃগ্যাসিকরণ ও বণ্টনের দায়িত্ব ক্রেতার নিজের। এলএনজি শৃঙ্খলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল দুটি ধাপ হচ্ছে এলএনজি উৎপাদন ও পরিবহন। একটি এলএনজি উৎপাদন পয়েন্টে এক বা একাধিক স্বয়ংসম্পূর্ণ তরলীকরণ ইউনিট থাকে, যাদেরকে এলএনজি ট্রেন বলা হয়। বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এলএনজি ট্রেন কাতারে অবস্থিত। একটি ট্রেন কিংবা পয়েন্টের বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতাকে এমএমটিএ (মিলিয়ন টন পার এনাম) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কাতারগ্যাস অপারেটিং কোম্পানির (ছধঃধৎমধং) সাম্প্রতিককালে নির্মিত দ্বিতীয় সাইট কাতারগ্যাস (ওও) পয়েন্টে দুটি এলএনজি ট্রেন আছে যাদের প্রত্যেকটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ৭.৮ মিলিয়ন টন। পৃথিবীর অন্যান্য বৃহৎ এলএনজি ট্রেনের মধ্যে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোতে আটলান্টিক এলএনজি নির্মিত ট্রেন-৪র্থ-এর উৎপাদন ক্ষমতা ৫.২ এমএমটিএ, এবং মিসরে অবস্থিত সিগ্যাস এলএনজি পয়েন্টের উৎপাদন ক্ষমতা ৫ এমএমটিএ। বাংলাদেশ সরকারের গ্যাস সেক্টর মাস্টারপ্ল্যান ২০১৭ অনুযায়ী, দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদার তুলনায় ঘাটতির পরিমাণ বছরে প্রায় ১০ বিলিয়ন কিউবিক মিটার (এলএনজির হিসাবে যা দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৭৫ মিলিয়ন টন)। ২০১৮ সালে গ্যাসের মোট চাহিদার ১৭ ভাগ এলএনজি আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়েছে এবং ২০২৩ সালে দাঁড়াবে ৪০ ভাগ, ২০২৮ সালে দাঁড়াবে ৫০ ভাগ এবং ২০৪১ সালে দাঁড়াবে ৭০ ভাগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সেই হিসাবে ২০৪১ সালে এলএনজি আমদানির পরিমাণ প্রতিবছর ৩০ মিলিয়ন টন হতে পারে। জ্বালানিবিষয়ক পরামর্শ ও গবেষণা ব্যবসায়ী কোম্পানি উড ম্যাকেঞ্জি ২০১৭ সালের এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দিয়েছে যে ২০২০,২০২৫ ও ২০৩০ সালে প্রতিবছর বাংলাদেশের এলএনজির চাহিদার পরিমাণ হবে ৪ মিলিয়ন টন, ৮ মিলিয়ন টন ও ১১ মিলিয়ন টন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করতে পারলে শিল্পক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করেন বিশেষজ্ঞরা।
×