ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

প্রকাশিত: ১২:০০, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ

নিখিল মানখিন ॥ ফের জেঁকে বসেছে শীত। বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ। গত তিন দিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হ্রাস পেয়েছে প্রায় পাঁচ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তবে এই শৈত্যপ্রবাহ ও শীতের তীব্রতা মাত্র কয়েকদিন স্থায়ী হবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। দু’দিন ধরে বিকেল থেকে পরদিন সকাল দশটা পর্যন্ত রাজধানীতেও অনুভূত হচ্ছে মাঝারি ধরনের শীত। দিনভর বয়ে যায় ঠা-া বাতাস। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে। তবে বাড়বে দিনের তাপমাত্রা। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে শীতের তীব্রতা ও ঘন কুয়াশা অব্যাহত রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য আবার বেড়েছে। ঘন কুয়াশা, তাপমাত্রা হ্রাস ও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণেই মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, ফেব্রুয়ারি মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসের প্রথমার্ধে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১ টি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। মাসের প্রথমার্ধে দেশের নদ-নদী অববাহিকা ও অন্যত্র সকালের দিকে হালকা/ মাঝারি ধরনের কুয়াশা থাকার সম্ভাবনা আছে। দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১/২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদরা জানান, মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বইলেও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য আবার বেড়েছে। বইছে ঠা-া বাতাস। অব্যাহত আছে ঘন কুয়াশা। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশে শীতের আবহ থাকতে পারে। তবে তীব্র শীত অনুভূত হবে না। গত দু’দিনে রাজধানীতে দিনের অধিকাংশ সময় শীত অনুভূত হচ্ছে। বেলা এগারোটার আগে সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য সূর্য দেখা গেলেও তেমন তেজ ছিল না। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা বিরাজ করে দিনভর। বিকেল সাড়ে তিনটার পর রাজধানীতে বেড়ে যায় ঠা-া বাতাসের প্রবাহ। অধিকাংশ লোকজনকে দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে। নগরীর শীতবস্ত্রের দোকানে ছিল উপচেপড়া ভিড়। শীতবস্ত্রের দামও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সিলেটে ২৭.৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন চুয়াডাঙ্গায় ৭ ডিগ্রী সে: রেকর্ড হয়। আর ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ২৪.৭ ও ১৪.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কয়েকদিন ধরে দেশের প্রায় সব সেন্টারের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৭ থেকে ২৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে অবস্থান করছে। আবহাওয়াবিদ একেএম রুহুল কুদ্দুস জনকণ্ঠকে বলেন, দেশের বিভিন্ন জায়গায় দিন এবং রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পাবে। ফলে সারাদেশেই আরেকটি হালকা থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে। তবে এটির স্থায়ীত্ব বেশিদিন হবে না। আগামী কয়েকদিন থেকে আবার তাপমাত্রা বাড়তে পারে। এটিই হতে পারে মৌসুমের শেষ শৈত্যপ্রবাহ। এর পর দেশে আর কোন শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা নেই। এর পরই এই বছরের মতো শীত বিদায় নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান একেএম রুহুল কুদ্দুস। স্টাফ রিপোর্টার দিনাজপুর থেকে জানান, হিমালয়ের পাদদেশের জেলা হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরে মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া শৈত্যপ্রবাহের কারণে জনজীবন বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছে। ঠা-া বাতাস ও কুয়াশার কারণে জেঁকে বসেছে শীত। শীত নিবারণে পুরাতন কাপড়ের মার্কেটে নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত মানুষের ভিড় বেড়েই চলছে। কনকনে ঠা-ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোখলেসুর রহমান জানান, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ভা-ার থেকে ইতোপূর্বে ৩৭ হাজার ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে ৬৫ হাজার পিস কম্বল পাওয়া যায়, যা দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় বিতরণ করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ভা-ারে কিছু শীতবস্ত্র রয়েছে, যা জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের লোকজন রাতে শীতার্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করেছেন। তিনি জানান, শীতের তীব্রতা থেকে অসহায় মানুষকে রক্ষার জন্য আরও ৫০ হাজার কম্বল চেয়ে জরুরী বার্তা পাঠানো হয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে আবারও শুরু হয়েছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বুধবার সকালে কুড়িগ্রাম ও আশপাশের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর কনকনে ঠা-ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্ভোগে পড়েছে শিশু,বৃদ্ধ, নিম্ন আয় ও চরাঞ্চলের মানুষ। হঠাৎই ঠা-াজনিত রোগের প্রার্দুভাব হয়েছে। অনেক মানুষ খড়কুটো জ¦ালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। শীতের এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে ইরি-বোরো মৌসুমের বীজতলা নষ্ট হচ্ছে। জেলার অনেক এলাকায় বীজতলা নষ্ট হয়ে যাবার কারণ বীজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
×