ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

চাষাবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষে

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯

চাষাবাদ ও উৎপাদনে শীর্ষে

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ দশ বছর আগেও রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের লাল মাটিতে সবজি চাষ ছিল কল্পনামাত্র। অথচ এখন সেই মাটিতেই ফলছে সব ধরনের সবজি। পুরো রাজশাহীতে এখন সবজি চাষে সবুজ বিপ্লব ঘটেছে কয়েক বছরের ব্যবধানে। রাজশাহী এখন সবজির ভা-ারে পরিণত হয়েছে। এবার সবজি উৎপাদনে দেশের শীর্ষে উঠে এসেছে বরেন্দ্র ভূমি খ্যাত রাজশাহী জেলা। গেল অর্থবছরে উৎপাদিত সবজির হিসাবে এই স্থান অর্জন করেছে রাজশাহী। গত ২৬ জানুয়ারি ঢাকার খামারবাড়িতে এই অর্জনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর। যদিও আগের অর্থবছরে শীর্ষ তিন জেলার স্থানেও ছিল না রাজশাহী জেলা। কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, লাভজনক হওয়ায় সবজি চাষে ঝুঁঁকছেন রাজশাহীর চাষীরা। অনুকূল আবহাওয়ায় ফলনও মিলেছে আশানুরূপ। বাজারে মিলছে ভাল দাম। এসব কারণেই সবজি উৎপাদন বাড়ছে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শামসুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সবজি উৎপাদনে জমির পরিমাণ বৃদ্ধি ও হেক্টর প্রতি সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সারাদেশের মধ্যে সবজি উৎপাদনে শীর্ষ জেলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাজশাহী। এর আগে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রাজশাহী প্রথম তিন জেলার ভেতরেও ছিল না। এবার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। কৃষি বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজশাহীতে হেক্টর প্রতি সবজি উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬ দশমিক ৬৯ মেট্রিক টন। ওই অর্থবছরে ২১ হাজার ৭২৩ হেক্টর জমিতে মোট সবজি উৎপাদন হয় ৩ লাখ ৬২ হাজার ৫৬৪ মেট্রিক টন। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে জমির পরিমাণ ও উৎপাদন দুই-ই বেড়েছে। হেক্টর প্রতি সবজি উৎপাদন বেড়েছে ১ দশমিক ৪৩ মেট্রিক টন। আর জমির পরিমাণ বেড়েছে ৫১২ হেক্টর। অর্থাৎ গত অর্থবছরে রাজশাহীতে ২২ হাজার ২৩৫ হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদন হয়েছে ৪ লাখ ২ হাজার ৭৯০ মেট্রিক টন। উপ-পরিচালক শামসুল হক বলেন, রাজশাহীর আবহাওয়া শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। কৃষকরাও সবজি উৎপাদনের বিষয়ে খুবই সচেতন। তারা জমিতে সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করেন। পোকামাকড় দমনের বিষয়েও সচেতন তারা। তাই এই অর্জন। তবে এই স্বীকৃতি মিলেছে আলুর উৎপাদন ছাড়াই। আলু যুক্ত করা হলে গড় উৎপাদন আরও বৃদ্ধি পাবে। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীর কৃষকরা এখন দানাজাতীয় শস্যের চেয়ে সবজি ও ফলমূল উৎপাদনের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। কারণ এই দুটোই লাভজনক। এগুলো চাষ করে কৃষকরা যেন লাভবান হন সে জন্য কৃষি কর্মকর্তারাও কাজ করে যাচ্ছেন। উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ শেখাচ্ছেন। রাজশাহীর অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখতে সফলতার এই ধারা তারা ধরে রাখতে চান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েক বছর থেকে রাজশাহীর পবা ও মোহনপুর উপজেলায় ‘সবুজ বিপ্লব’ ঘটেছে সবজি চাষে। বাড়ির আঙ্গিনা থেকে শুরু করে ফসলের মাঠ সবখানেই সবজি আর সবজি। বিশেষ করে লাউ, কুমড়া, পোটল, ঝিঙা, তরায়সহ সব ধরনের সবজিতে ভরপুর রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলা। রাজশাহীর ক্ষেতে ক্ষেতে চোখে পড়লে মিলবে ফসলের বিস্তীর্ণ মাঠ। সারি সারি লাউ কুমড়ার মাচান। মহাসড়কের পাশেও দেখা মিলবে মণকে মণ সবজির স্তূপ। আর হাটবাজারে যেন শুধুই সবজির ভা-ার। গত কয়েক বছর থেকে শীত আর গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করে আসছেন রাজশাহীর কৃষক। শীতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, পালং, মূলা, বরবটি, গাজর আর গ্রীষ্মে লাউ কুমড়া, বেগুন, পুঁই, পোটল ও করলা। স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে সবজির কদর এখন রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিন ট্রাকের পর ট্রাক সবজির চালান যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। কম খরচে লাভের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় প্রতিবছর দুই উপজেলায় বাড়ছে সবজি চাষের আওতা। বিপুল পরিমাণ সবজি চাষের কারণে ইতোমধ্যে পবা ও মোহনপুরের বিভিন্ন হাটে গড়ে উঠেছে বড় বড় আড়ৎ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকার ও ব্যবসায়ীদের তাই আনাগোনা থাকে বছরজুড়েই। এক সময় আলু ছাড়া তেমন ফসল হতো না। তবে এখন পাল্টে গেছে চিত্র। ধান পাটের পাশাপাশি বছরের সবসময় চাষাবাদ হচ্ছে সবজির। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, প্রতিবছর রাজশাহীর অঞ্চলে বাড়ছে সবজি চাষের আওতা। বিশেষ করে পবা ও মোহনপুরের কৃষক এখন ঝুঁকেছেন সবজি চাষে। বাড়তি আয়ও করছেন তারা।
×