ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চট্টগ্রামেই সীমাবদ্ধ

এলএনজি ঢাকায় সরবরাহ করা হয়নি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ জানুয়ারি ২০১৯

এলএনজি ঢাকায় সরবরাহ করা হয়নি

রশিদ মামুন ॥ চট্টগ্রামের মধ্যেই সরবরাহ হচ্ছে তরলীকৃত আমদানি গ্যাস (এলএনজি)। পাইপ লাইন তৈরির পরেও দেশের অন্য এলাকায় সরবরাহ করা যাচ্ছে না এলএনজি। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এলএনজি দেশের অন্য এলাকাতে আনতে হলে আরও বেশি পরিমাণে আমদানি করা প্রয়োজন। সেই জোগান পাওয়া যাচ্ছে না। রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি এবং চট্টগ্রাম এলাকায় গ্যাস বিতরণকারী কোম্পানি কর্ণফুলী সূত্র বলছে, প্রতিদিন তিন শ’ মিলিয়ন ঘনফুট বা তার কিছু কম এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। এই গ্যাসের পুরোটাই চট্টগ্রামের চাহিদা মেটাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু কথা ছিল প্রতিদিন টার্মিনালটি ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করবে। গত কয়েক মাস ধরে কোন দিনই এলএনজি ঢাকায় সরবরাহ করা হয়নি। পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান মোঃ রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা তো এলএনজিকে গ্যাস হিসেবে দেখছি। চট্টগ্রামে যে গ্যাস দেয়ার কথা ওই গ্যাস তাদের দিতে হচ্ছে না। এটা তো অন্য এলাকাতে সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের কথা সরবরাহ হচ্ছে ৩০০ মিলিয়ন। এতে ঢাকার দিকে এলএনজি আসছে না। কেন এই সরবরাহ কম জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের আরও একটি টার্মিনাল আসার কথা রয়েছে। সেটি আসলে হয়ত তখন ঢাকার পথে এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। একই প্রশ্ন জ্বালানি বিভাগের একজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে করা হলে তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তখন কিভাবে কি পরিকল্পনা করেছিলেন সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন আগে প্রকল্প করার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল তা সঠিক ছিল না। গত বছর ১৮ আগস্ট থেকে দেশে এলএনজি সরবরাহ শুরু করা হয়। এরপর প্রায় ৬ মাস কেটে গেছে। কিন্তু চট্টগ্রামের বাইরে এলএনজি সরবরাহ শুরু করা সম্ভব হয়নি। শুরুতে আনোয়ারা-ফৌজদারহাট পাইপ লাইনের কর্ণফুলী নদী পারাপারের কাজ শেষ না হওয়াকে এলএনজি ঢাকার পথে না আসার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গত ২৮ নবেম্বর এলএনজি ঢাকায় আনার জন্য আনোয়ারা ফৌজদারহাট পাইপ লাইনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়। ওই দিন রাতেই এলএনজি সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা ৩০ কিলোমিটারের পাইপ লাইনটি পরীক্ষার কাজও শেষ করা হয়। ওই দিন থেকেই ঢাকায় এলএনজি আসার কথা ছিল। কিন্তু গত দুই মাসেও ঢাকার পথে এলএনজি সরবরাহ শুরু হয়নি। জানতে চাইলে আরপিজিসিএল-এর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, যে পরিমাণ এলএনজি আনা হলে ঢাকায় সরবরাহ সম্ভব তা আনা যাচ্ছে না। এ কারণেই এলএনজি সরবরাহের ক্ষমতা থাকলেও এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, কাতারের বাইরে থেকেও বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি আনা হচ্ছে। মার্কিন এক্সিলারেট এ্যানার্জি ভাসমান টার্মিনালটি মহেশখালিতে স্থাপন করেছে। এই টার্মিনাল দিয়ে শুধু বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা তরলে গ্যাসে রূপান্তর করে গ্রিডে সরবরাহ করা হবে। এখানে এক্সিলারেট এ্যানার্জিকে প্রতি ইউনিট এলএনজি রূপান্তরের জন্য ৪৯ সেন্ট করে দিতে হবে। এর বাইরে সব ধরনের কর পেট্রোবাংলা পরিশোধ করবে। তবে গ্যাসে রূপান্তর করা হোক, না হোক এক্সিলারেট এ্যানার্জিকে ঠিকই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। ফলে পেট্রোবাংলা যদি এলএনজির জোগান বাড়াতে না পারে তাহলে এক্সিলারেট এ্যানার্জিকে ঠিকই ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। মার্কিন এই কোম্পানিটি দুই বছরের চেষ্টায় মহেশখালিতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করে। তবে এর বাইরে দেশীয় কোম্পানি সামিট গ্রুপও পৃথক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করছে তারাও এক্সিলারেট এ্যানার্জির মতোই শুধু এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করবে। এক্ষেত্রেও এলএনজি আমদানি করবে পেট্রোবাংলা। এখন প্রতিদিন যা রূপান্তরের ক্ষমতা তার অর্ধেকের কিছুটা বেশি এলএনজি জোগাড় করছে। ভবিষ্যতে কি আরও একটি এলএনজি টার্মিনালের চাহিদা পূরণের মতো এলএনজি সরবরাহ করতে পারবে পেট্রোবাংলা তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।
×