ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নেতৃত্ব দেবেন রওশন এরশাদ

এবারও সংসদে প্রধান বিরোধী দল থাকছে জাতীয় পার্টি

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২ জানুয়ারি ২০১৯

এবারও সংসদে প্রধান বিরোধী দল থাকছে জাতীয় পার্টি

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দ্বিতীয়বারের মতো বিরোধী দলে যাচ্ছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন দল জাতীয় পার্টি। গতবারের মতো এবারও প্রধান বিরোধী দলের নেতৃত্ব দেবেন রওশন এরশাদ। এবারের নির্বাচনে আসন কম পেলেও কমপক্ষে ছয়জন মন্ত্রী করার আশা দলের পক্ষ থেকে। জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে আসন কম পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পার্টির অনেক নেতাই। দলটি বিরোধী দলে যাবে কিনা এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও প্রেসিডিয়াম সদস্যদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে প্রথমে ১০০ আসন চাওয়া হয় আওয়ামী লীগের কাছে। তারপর ৩০টি ছাড় দিয়ে ৭০ আসনে প্রার্থী তালিকা পাঠান এরশাদ। তাতেও কাজ হয়নি। মহাজোটের সকল শরিক মিলিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ আসন ছাড় দেয় আওয়ামী লীগ। এ ঘটনায় বেঁকে বসেন এরশাদ। তিনি ও রওশন এক পর্যায়ে একাধিক আসনে প্রার্থী হলেও সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে বাধ্য হন। আসন বণ্টন ইস্যুতে টানাপোড়েনের মধ্যে হঠাৎ করেই অসুস্থ হন এরশাদ। তাকে দফায় দফায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ ডিসেম্বর রহস্যময় অসুস্থতা দেখিয়ে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় সিঙ্গাপুর। নির্বাচনের আগে তিনি দেশে ফিরলেও কোথাও বের হচ্ছেন না। নিজ বাসাতেই আছেন। এই অবস্থায় নির্বাচন ইস্যুতে এরশাদ নাটকের এখনও সুরাহা হয়নি। এর মধ্যে দলেও বেশ পরিবর্তন এসেছে। এবারের সংসদ নির্বাচনে জাপা ২২ আসন পেয়েছে। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মহাজোট থেকে তাদের ২৯টি আসন দেয়া হয়েছে। পরবর্তিতে বলা হয় ২৬টি। এর বাইরে জাপার পক্ষ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক আসনে প্রার্থী দেয়া হলেও একটিতেও জিততে পারেনি কেউ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৩৪ আসনে জয় পেয়েছিল জাতীয় পার্টি। সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে ৪০ এমপি নিয়ে বিরোধী দল গঠন করে এরশাদের দল। ২০০৮ এর সংসদ নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে মহাজোট ভেঙ্গে যায়। এবারের নির্বাচনে আবারও গাটছড়া বাঁধে দুই দল। মহাজোটে নির্বাচনে জাপার প্রত্যাশা ছিল সমঝোতায় বেশি আসন পাওয়া। কিন্তু খোদ এরশাদ তিন আসনে দাঁড়াতে চাইলে শেষ পর্যন্ত তাকে একটি দেয়া হয়। সব মিলিয়ে গত বারের চেয়ে কম আসন নিয়ে বিরোধী দলে যেতে হচ্ছে জাতীয় পার্টিকে। তবে সরকারে জাপার তিন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। দল প্রধান এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ দূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। এত অল্প আসন নিয়ে জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দল গঠন করতে পারবে কিনা এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা আছে রাজনীতির মাঠে। কিন্তু আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দ্বিতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেই সংসদে বিরোধী দল হওয়া সম্ভব। এক্ষেত্রে আসন সংখ্যার কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তাই জাতীয় পার্টি ২২ এমপি নিয়েই সংসদে বিরোধী দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে। এরসঙ্গে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে যোগ হবে আরও অন্তত তিনজন সংরক্ষিত নারী সাংসদ। এ বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, সংসদে প্রধান বিরোধী দল হতে অন্তত কত আসনে জয়ী হতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা দেশের কোন আইনে নেই। তবে ভারতীয় সুপ্রীমকোর্টের একটি রায় রয়েছে, যেখানে ২০টি আসনে জয়ী হলে প্রধান বিরোধী দল হতে বাধা থাকবে না বলে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, রবিবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জাতীয় পার্টি বিএনপির থেকে বেশি আসনে জয় পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দল হতে পারে। জাপার নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন, নীলফামারী-৩ রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, লালমনিরহাট-৩ জিএম কাদের, রংপুর-১ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-৩ এইচ এম এরশাদ, কুড়িগ্রাম-২ পনিরউদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মুজিবুল হক চুন্নু, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, ফেনী-৩ মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশিদ, বরিশাল-৬ রত্না আমিন হাওলাদার, বরিশাল-২ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ ও বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার। একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের আসনে বসতে যাচ্ছে- এমনটাই জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে বিএসআরএফ মিডিয়া সেন্টারে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম আয়োজিত সংলাপে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। বিরোধী দল হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত আসন অন্যরা পায়নি, এই অবস্থায় সঙ্কট হবে কি না- জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা আপাতত কোন সঙ্কট দেখছি না। জাতীয় পার্টি দলগতভাবেই ২২ আসন পেয়েছে। তারাই বিরোধী দলের আসনে বসবে। তাদের বিরোধী দল হতে কোন সমস্যা দেখছি না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহাজোট সরকার তাদের সরকারেও আমন্ত্রণ জানাতে পারে। তিনি বলেন, আমরা গত দশ বছর রাজনৈতিক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একসঙ্গে পার করেছি। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি মহাজোটের সঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকারে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের বিরোধী দলের আমন্ত্রণ জানালে তার বিরোধী দলেও ছিল, সরকারেও ছিল। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ধরনের নজির আছে। সুতরাং একাদশ সংসদে জাতীয় পার্টি চাইলে বিরোধী দলের আসনে বসবে। চাইলে সরকারেও আসতে পারে। নির্বাচনের ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট নই- রাঙ্গা ॥ জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেছেন, নির্বাচনের ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট নই, জাতীয় পার্টির আরও আসনে জয়ী হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি এখন দ্বিতীয় বৃহত্তম ও শক্তিশালী দল। আগামী দিনে জাপাকে একটি গণতন্ত্রিক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করব আমরা। দলকে আরও সংগঠিত করাই হবে এখন প্রধান কাজ। যাতে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় যেতে পারে, সেজন্যও প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে দলটির ৩৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় রাঙ্গা এ কথা বলেন। সভায় এরশাদ দেশে থাকলেও উপস্থিত ছিলেন না। ভোটের দিন নিজ আসন রংপুরেও যাননি তিনি। নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর একদিন নিজ এলাকায় না যাওয়ায় এরশাদের কর্মী সমর্থকরা সবাই হতাশ। এ নিয়ে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। যদিও স্থানীয় নেতারা এরশাদের অসুস্থতার কথা বলে সবাইকে বুঝিয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে মসিউর রহমান রাঙ্গা আরও বলেন, আজ বুধবার বেলা ১১টায় পার্টি চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হবে জাতীয় পার্টি সরকারে নাকি বিরোধী দলে থাকবে। তিনি বলেন, এরপর মহাজোটের সঙ্গেও আলোচনা হবে এ বিষয়ে। সভায় বক্তব্য রাখেন- প্রেসিডিয়াম সদস্য মাসুদা এম রশীদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান- রওশন আরা মান্নান, আলমগীর সিকদার লোটন, বাহাউদ্দিন বাবুল, নুরুল ইসলাম নুরু, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, জহিরুল ইসলাম রুবেল, ফখরুল আহসান শাহজাদা, বেলাল হোসেন প্রমুখ।
×