ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দলিল উদ্দিন দুলাল

অভিমত ॥ ভোটের আগে সংশয়

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ৪ ডিসেম্বর ২০১৮

অভিমত ॥ ভোটের আগে সংশয়

ভোটের বাজনা বাজছে, গ্রামে-গঞ্জে-মহল্লায়। আগেও তাই হতো। এখন তা দেখা যাচ্ছে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায়। ভালই জমেছে। মনে হয় এবারের নির্বাচন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কারণ হলো ভোটাররা নির্দ্বিধায় তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারবে। এবার হবে ইতিহাস সৃষ্টির নির্বাচন। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন ভোটারদের অবদানে ২০০৮ সালে। তাদের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একবারে নির্বাচন দাবি করলেন। কিন্তু তার আগেই সুপ্রীমকোর্ট বলে দিয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলে কোন সরকার নেই। নির্বাচিত সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। ২০১৩ সালে বিরোধী দল নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগের সরকার বিরোধী দলের কাছে আবদার করেছিল, আসুন সবাই মিলে একটা নির্বাচন করি। বিরোধী দল নির্বাচনে না এসে জ¦ালাও-পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত হয়েছিল। তারপর যা হওয়ার তা সবাই দেখল। আজ সেই শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হতে যাচ্ছে এবং সবাই অংশগ্রহণ করার জন্য নির্বাচন কমিশনে নমিনেশন পেপার সাবমিট করেছে। শেখ হাসিনা সকল দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে বাধ্য করেছেন। এবার উন্নয়নের রাজনীতির ওপর মানুষ দেখেশুনে ভোট প্রদান করবে। অনেকদিন পর দেখতাম যে, বিলগ-হস্তি (বিলগাজনা) দিয়ে বর্ষা মৌসুমে নৌকায় পারাপার হতো। শুকনা মৌসুমে পায়ে হেঁটে মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে ৬-৭ মাইল সুজানগর-সাতবাড়ীয়া যাতায়াত করত। এখন সাতবাড়ীয়ার চিনাখরা সৌন্দর্যময় পাকা সড়ক হয়েছে। এরপর সড়কের মাঝখানে উন্নতমানের সেতু বা ব্রিজ হয়েছে কয়েকটি। এটি অবশ্যই ভোটারদের মন জয় করার মতো। উন্নয়ন কর্মকা-ের ফলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার জনগণের ব্যাপক আস্থা অর্জন করেছে। চলতি নির্বাচনে দেশজুড়ে এই আস্থার প্রতিফলন ঘটবে বলে সাধারণ জনগণ অনেকটাই আশাবাদী। এক সময় বর্ষা মৌসুমে নৌকা দিয়ে যাওয়ার সময় অনেক জানমালের ক্ষতি ও হতাহতের ঘটনা ঘটত। আজকাল ২৪ ঘণ্টা নির্বিঘেœ ওই সড়কে মোটরযান চলাচল করছে। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর পাবনার কাশিনাথপুর হাটসহ সন্ধ্যার পর চুরি ও ছিনতাইয়ের জন্য সেখানে লোকজন যাতায়াত করতে পারত না। জিনিস রেখে কোন কাজ সম্পন্ন করতে গেলে চোখের পলকে তা উধাও হয়ে যেত। কিন্তু বর্তমানে রাস্তাঘাট প্রশস্ত হওয়ার কারণে চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি, মাদকদ্রবসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এখন শহর-বন্দরের সঙ্গে রাস্তাঘাট, প্রতিটি গ্রামের সঙ্গে পাকা সড়ক তৈরি হয়েছে। এখন গ্রামের মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমায়। মহাজোটের নেতারা মনে করেন এবার জোটের পক্ষে ভোট পড়বে। কারণ মহাজোট গত দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থাকায় নানা ক্ষেত্রে অগ্রগতির সূচকে উন্নয়নের কৃতিত্ব দেখিয়েছে। এবার সবচেয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক ঘটনা হচ্ছে নেতাদের ডিগবাজি ও আদর্শচ্যুতির খেল। জাতির পিতাকে যারা ভালবাসেন, তাঁর দল এবং আদর্শকে যারা লালন-পালন করেন, তারাই আদর্শচ্যুত হয়ে গেলেন! ড. কামালের কথা বাদই দিলাম, তিনি তো পাকিস্তানের জামাই। কিন্তু বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী একজন খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধু কর্তৃক বঙ্গবীর উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এক সময় তাঁকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিএনপি আখ্যা দিয়ে দেশে প্রত্যাবর্তনে বাধা দিয়েছিল। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর গ্রামে-গঞ্জে তাঁর মুক্তির দাবিতে জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে আন্দোলন, মিছিল, মানববন্ধন করেছিল। রব সাহেব স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করার দাবি করেন। মান্না সাহেব সেদিনকার মানুষ। ড. অধ্যাপক আবু সায়ীদ স্বনামধন্য ব্যক্তি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে মনেপ্রাণে বিশ^াস করেন। তিনি এতদিন বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সৈনিক ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভিমান করে জামায়াত ও বিএনপি সমর্থিত ঐক্যফ্রন্টে যোগদান করলেন। ভুল কতবার করবেন। তার অনুসারীরা কি করবেন? খেসারত দিতে হবে প্রজন্মের পর প্রজন্মে। ডিগবাজির রাজনীতি ভবিষ্যত প্রজন্ম এবং রাজনীতিবিদদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছে তা হয়ত খেয়াল করে দেখেননি তারা। ৩০ ডিসেম্বর তথা বিজয়ের মাসে এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই এবারের নির্বাচন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে ভিন্ন অর্থ বহন করবে এটাই স্বাভাবিক। এবার মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় দিবসে, বাঙালীর বিজয় দিবসে যেন বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয় তার প্রতি আগেই সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সতর্ক থাকতে হবে, যাতে সকল প্রকার নাশকতামূলক কর্মকা- প্রতিহত করা যায়। কতিপয় বিপথগামী রাজনীতিবিদের জন্য শহীদদের স্মৃতি যেন মলিন না হয়, সরকার ও সরকারী বাহিনী এবং দেশবাসীকে এ বিষয় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। একাত্তর সালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, ইপিআর হেডকোয়ার্টার, সেনাবাহিনীর লোকজন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা মৃত্যুবরণ করেছে, মা-বোনদের সম্ভ্রমহানি হয়েছে। তাঁদের সম্মান যাতে কোন অবস্থাতেই ম্লান না হয় তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। রাজাকারদের সঙ্গে যারা মিশে গেছে তারা সব করতে পারে। অতএব, ভবিষ্যত প্রজন্ম সাবধান! লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক কমান্ডার
×