ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

উন্নত দেশের মতো পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া সহজ হবে

কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার খসড়া করেছে সরকার

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৬ নভেম্বর ২০১৮

 কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার খসড়া করেছে সরকার

মশিউর রহমান খান ॥ সারাদেশের সকল প্রকারের কঠিন বর্জ্যরে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ‘কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০১৮’-এর খসড়া প্রণয়ন করেছে সরকার। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের তৈরি এ খসড়া বিধিমালার সঠিক বাস্তবায়ন করা গেলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে পথের ধারে, রাস্তার ওপর, ফুটপাথে, নদী-নালা, ড্রেন, খাল-বিল, বাড়ির আশপাশেসহ সকল স্থানকে কঠিন বর্জ্যমুক্ত রাখা অনেক সহজ হবে। বিধিমালার সঠিক বাস্তবায়নে উন্নত দেশের ন্যায় পরিচ্ছন্ন দেশ গড়া সহজ হবে। খসড়া বিধিমালায় যেসব পণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হয় বা ডিসপোজেবল এমন পণ্য প্রস্তুতকারীদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আর্থিক সহায়তা করা, জাতীয় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সুষ্ঠু পৌর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রতিষ্ঠায় পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানি কর্তৃক জন সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা, সব স্থানে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য পৃথক করে আলাদা পাত্রে রাখা, ভ্যান বা গাড়িতে সংগ্রহের সময় বর্জ্যরে প্রকারভেদে পৃথক পাত্র রাখা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সফলতা আনতে ভাল কাজের স্বীকৃতি দিতে পরিচ্ছন্নতা তথা পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে ভাল কাজের স্বীকৃতি দিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা, নির্দিষ্ট কিছু পণ্য বিক্রির সময় গ্রাহককে ডিসপোজেবল থলে বা মোড়ক সরবরাহ করাসহ বিভিন্ন সুবিধার কথা বলা হয়েছে। সকল বর্জ্য সৃষ্টিকারীকে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষকে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করার কথাও বলা হয়েছে। একই সঙ্গে খসড়া বিধিমালা অনুযায়ী, আইন বা বিধিমালা অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ে দ-িত হবেন। একই অপরাধ আবার করলে প্রতিবার সর্বোচ্চ চার হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশে কঠিন বর্জ্যরে গঠন প্রকৃতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্জ্যরে মধ্যে রয়েছে খাদ্য এবং শাকসবজি, কাগজ দ্রব্যাদি, প্লাস্টিক, লেদার, রাবার, মেটাল, গ্লাস ও সিরামিক, কাঠ/খড়/পাতা, মেডিসিন বা কেমিক্যাল, পাথর ও ধুলি। এছাড়া টিন, গ্লাস, প্লাস্টিক প্যাকেজিং, মোড়ক, বোতল, ক্যানসহ যেসব পণ্য ব্যবহারের পর ফেলে দিতে হয় (ডিসপোজেবল) এমন পণ্যই কঠিন বর্জ্য। পরিবেশ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সারাদেশের কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে শহরাঞ্চলে যেখানে প্রতিদিন প্রায় নয় হাজার ৮শ’ ৭৩ টন বর্জ্য উৎপাদিত হতো। পরে ২০০৪ সালে তা বেড়ে প্রায় ১৬ হাজার ৩শ’ ৮২ টন বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে বলে ধারণা করা হয়। বর্জ্য বাড়ার পরিমাণ বাড়া অনুযায়ী এ হার বাড়তে থাকলে আগামী ২০২৫ সালে উৎপাদিত বর্জ্যরে পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪৭ হাজার ৬৪ টন। যা সামলানো সরকারের পক্ষে অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার এই কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি গুরুতর সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দ্রুত নগরায়ণের ফলে অতি দ্রুত যত্রতত্র শিল্পায়ন গড়ে উঠছে। এছাড়া আমাদের দেশে জমির তুলনায় অধিক জনসংখ্যার কারণে বিভিন্ন ধরনের কঠিন বর্জ্যরে বিপুল অংশ উন্মুক্ত জায়গায়, রাস্তার দু’পাশে বা নদী-নালায় নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এর ফলে শহরের নিম্নাঞ্চল, জলাভূমি, এমনকি শহরের পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছে। বর্তমানে শুধু যত্রতত্র স্থানে কঠিন বর্জ্য ফেলার কারণে রাজধানীর আশপাশের চারটি নদী ও ঢাকার সকল খাল, নালা, জলাধার, ড্রেনসহ সকল জলাধারের পানির প্রবাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে ও মারাত্মক পরিবেশ দূষণের শিকার হচ্ছে। একইসঙ্গে সামান্য বর্ষায় ডুবে যাচ্ছে ঢাকা ও এর আশপাশ। এর প্রধান কারণ হিসেবে সুষ্ঠু কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা না থাকা। বিধিমালায় স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান এবং এর বাইরে বা গ্রামে বসবাসরত স্থায়ী ও অস্থায়ী বাসিন্দাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে, নিজ নিজ কর্মস্থল বা আবাসস্থল বা অবস্থানস্থলে সৃষ্ট সকল বর্জ্য ও উচ্ছিষ্ট সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংগ্রহ করবেন এবং ব্যবস্থাপনা করবেন।
×