ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধানকাটা শুরু

নবান্ন আর নির্বাচনী উৎসব মিশছে এক হয়ে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

নবান্ন আর নির্বাচনী উৎসব মিশছে এক হয়ে

সমুদ্র হক ॥ দুয়ারে নবান্ন। সোনালি ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায় লুকোচুরির খেলা। নতুন ধানের ম ম গন্ধ। আঙিনা ও ঘরদোর ঝকঝকে করতে কিষানবধূর ব্যস্ততা। গোধূলীর হলদেটে আভায় নামে সন্ধ্যা। উর্ধাকাশে তখন জ¦লজ¦লে লুব্ধক তারা। ¯িœগ্ধ আলোয় আকাশে চাঁদের হাসি। নতুন ধান কেটে ঘরে তোলার আয়োজন প্রায় শেষ। আগাম আমন ধান কাটা শুরু। সোনাতলার রানীরপাড়া গ্রামের কৃষক বাসেত বললেন ‘এবার ধান ভালো হইছে। দামও ভালো পাওয়া যাবি।’ পাশের আরেক কৃষক আবলু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল ‘বাউর টাউর (ঝড়বৃষ্টি) হবি ন্য তো। আকাশ মনে হয় কালো হচ্ছে।’ প্রতিউত্তর দিল বাসেত। বলল ‘ওই ব্যআক্কল এই সমে বাউর হয় নাকি রে (এই বোকা এই সময়ে ঝড় বৃষ্টি হয় নাকি)।’ জলবায়ুর পরিবর্তনের বিষয়গুলো এখন গ্রামের লোকও জানে। তারাও প্রস্তুতি নিতে শিখেছে। তবে এবারের আমন মাড়াই কাটাইয়ের সময়ে আকাশ যে ভাল থাকবে তা আবহাওয়া বিভাগ জানিয়েছে। যদিও বঙ্গোপসাগরে গাজা নামের ঝড়ের উৎপত্তি হয়েছে তা প্রভাব ফেলবে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, এবারের আমনের ফলন খুব ভাল। এদিকে দেশজুড়ে এবার নবান্নের উৎসবের সময়টাতেই নির্বাচনী আমেজে নির্বাচনী উৎসবের ঢাক বেজে উঠেছে। সাধারণ নির্বাচন মানেই পাঁচ বছর অন্তর মহোৎসব। এই উৎসবে শিশু, নারী-পুরুষ, ছেলে-বুড়ো সবাই যোগ দেয়। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে নির্বাচনী জ¦রে কাঁপতে থাকে সাধারণ মানুষ (আম জনতা)। এবার নির্বাচন হচ্ছে এমন সময়ে যখন একদিকে নতুন ধানের ফিরনি পায়েশে নবান্নের উৎসব। আরেক দিকের শীতের পিঠা পুলি খাওয়ার ধুম। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে মেয়ে জামাই ও নাতি নাতনিদের নাইওর যাওয়ার পালা। মেয়েদের বাপের বাড়ি যাওয়ার আনন্দ। তার মধ্যেই প্রতিটি এলাকায় প্রার্থী ও সমর্থকদের ভোট চাই ভোট চাই ভোট চাই ভাই..... এমন সুরের উষ্ণ ধ্বনীতে শীতও পালাই পালাই সুর তুলবে। গ্রামের পথে পা বাড়ালে এখনই চোখে ভেসে আসে প্রায় প্রতিটি ঘরেই যেন উৎসবের আমেজ। কিষানবধূ পানিতে মাটি ছেনে কাদার মতো করে আঙিনা লেপে নিচ্ছে। গ্রামে এখন আর কুঁড়ে ঘর চোখে পড়ে না। হয় টিনের ঘর, না হয় টিনের চালায় আধাপাকা ঘর। বাড়ির বাইরের উঠানে (স্থানীয় কথা খুলি) ধানের আঁটি গোল করে সাজিয়ে তিন চারটি গরু দিয়ে খুঁচিয়ে ধান মাড়াইয়ের দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন বগুড়ার অনেক গ্রামে হারভেস্টিং যন্ত্রে জমিতেই ধান কেটে মাড়াই করে বস্তায় ভরে বাড়ির উঠানে আনা হয়। ধান কাটার জন্য ছোট হারভেস্টারও এসেছে। যাদের যন্ত্র নেই তারা ভাড়ায় নেয়া যন্ত্রে ধান কাটে। অনেক কৃষক ধানকে সম্মান দেখিয়ে সেদিনের মতো ধান কেটে কাঁধে করে আনে। অনেক কৃষক এখন ধান কেটে দিনা কয়েক জমিতে রেখে শুকায়। তারপর নিয়ে যায় আঙিনায়। কোন কৃষক কাঠের ঢোলের মতো ঘূর্ণায়মান ড্রামে ধানে আঁটি ধরে ধান ছাড়িয়ে নেয়। নবান্নকে ঘিরে নানা অনুষ্ঠানের পালা শুরু হয়েছে গ্রামে। গাঁয়ের বধূদের অনেকে নবান্নের দিনগুলোতে নেচে গেয়ে উদযাপন করবে। এ যুগের তরুণ তরুণীরাও নানা আয়োজনে ব্যস্ত। বিশেষ করে নদী তীরের গ্রামগুলোতে নাবান্নের উৎসবের পালা শুরু হয় নৌকা করে নদীর ভেতরে গিয়ে। এই সময়টায় নদী অনেক শান্ত। শান্ত নদীর অল্প ঢেউয়ে নৌকার বৈঠা বইয়ে নদীতে ভ্রমণের আনন্দ আলাদা। অনেকে নৌকার মধ্যে বাদ্য বাজিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে। কেউ যায় চরের গ্রামে। যেখানে ভরা চাঁদের আলোয় নিসর্গের আরেক ভুবন তৈরি হয়। এর মধ্যেই কেউ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে। নিসর্গের এমন ভুবনের মধ্যে নির্বাচনী উৎসবের আনন্দের ভুবন তৈরি হতে যাচ্ছে।
×