ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১১ নভেম্বর ২০১৮

সিরিজ বাঁচাতে মরিয়া টাইগাররা

মিথুন আশরাফ ॥ দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো এমন বিপদে পড়েছে বাংলাদেশ। প্রথমবার এমন হলো সিরিজের প্রথম টেস্টেই হেরে সিরিজ হারের মুখে পড়ে গেল বাংলাদেশ। এর আগে কখনই দেশের মাটিতে এমনটি হয়নি। এবার জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বিপর্যস্ত অবস্থায় পড়ে গেছে বাংলাদেশ। এ বিপদ থেকে মুক্ত হওয়ার একটাই পথ, আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে জিম্বাবুইয়েকে হারাতে হবে। টেস্ট সিরিজ ড্র করতে হলে এর বিকল্প আর কোন পথই খোলা নেই। যদি কোনভাবে দ্বিতীয় টেস্টও হারে বাংলাদেশ তাহলে সিরিজ হার হয়ে যাবে। ড্র করলেও সিরিজ হার হবে। সিরিজে ড্র করবে বাংলাদেশ না সিরিজ হারবে? বাংলাদেশ প্রধান কোচ স্টিভ রোডসের বিশ্বাস মিরপুর টেস্টে ছেলেরা ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি বলেছেন, ‘এই ছেলেরা ব্যাপারগুলো ঠিক করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আর বাংলাদেশের ড্রেসিং রুমের এই ব্যাপারটা আমার খুব ভাল লাগে। ওরা আমাকে বিস্মিত করে চলেছে। ওরা সবসময়ই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ওরা পরের টেস্টে লড়বে। ওরা ঘুরে দাঁড়াতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা ঢাকা টেস্টে জয়ের জন্য খেলব।’ প্রথম টেস্টে ব্যাটসম্যানরাই ডুবিয়েছেন। বোলাররা দুর্দান্ত বোলিং করেছেন। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা কিছুই করে দেখাতে পারেননি। তাতে করে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ ও দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক টেস্টেই ১৫১ রানে হারে বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে জিম্বাবুইয়ের কাছে ১৭ বছর পর কোন টেস্ট হারে বাংলাদেশ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে। কোচ মনে করছেন প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে খারাপ করাতেই এমন হাল হয়েছে, ‘প্রথম টেস্টে আমাদের একমাত্র যে ভুল হয়েছে সেটা হলো প্রথম ইনিংসে আমাদের ব্যাটিং। আমরা টস হেরেছিলাম আর উইকেটে যখন প্রায় কিছুই হচ্ছিল না তখনও ওদের ২৮২ রানে থামাতে পেরেছিলাম। এরপর আমাদের সাড়ে তিন শ’ থেকে চার শ’ রান দরকার ছিল। আর সেই রান করতে না পারলে সবসময়ই শেষ ইনিংস খুব কঠিন। আমরা ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে সুযোগ হাতছাড়া করেছিলাম। আমি পরিকল্পনায় কোন খুঁত দেখি না। আমাদের কৌশলেও কোন ভুল দেখি না। আমরা স্রেফ আমাদের প্রথম ইনিংসে তালগোল পাকিয়েছি।’ এবার মিরপুর টেস্টে কী করবে বাংলাদেশ? এই টেস্টেও বিপদমুক্ত বাংলাদেশ তা বলা যাচ্ছে না। মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেট একেক সময় একেক রকম আচরণ করে। তা সবারই জানা। তবে দিনশেষে দেখা গেছে স্পিনাররাই দাপট দেখিয়েছেন। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে এই মিরপুরেই জেতা গেছে। বল নিচু হয়ে আসে। স্পিনারদের দাপটে টেস্ট জেতা গেছে। তবে এবার দলে নেই সাকিব আল হাসান। এই এক ক্রিকেটার না থাকাতেই বিপদ আসতে পারে। তিনি যে বোলিং-ব্যাটিং দুইদিকেই সেরা। উইকেট যেমনই আচরণ করুক, ব্যাটিংয়েই যা করার করতে হবে। যদি উইকেটে গতি মিলে, তাহলে জিম্বাবুইয়ের পেসার জার্ভিস, চাতারা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। আর যদি পুরোপুরি স্পিনবান্ধব থাকে তাহলে সিকান্দার রাজা, মাভুতা, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা বিপদ আনতে পারেন। সেই তুলনায় বাংলাদেশ দলে পেসারদের মধ্যে মুস্তাফিজুর রহমান, আবু জায়েদ রাহি ও খালেদ আহমেদ আছেন। এ টেস্টে খালেদকে দেখাও যেতে পারে। মুস্তাফিজও খেলতে পারেন। তাতে করে প্রথম টেস্ট খেলা রাহির একাদশে সুযোগ নাও মিলতে পারে। আর স্পিনারদের মধ্যে তাইজুল ইসলাম, নাজমুল ইসলাম অপু, মেহেদী হাসান মিরাজরাই যথেষ্ট। তাতে বোঝাই যাচ্ছে বোলাররা আবারও নিজেদের মেলে ধরতে পারেন। যা করার ব্যাটসম্যানদেরই করতে হবে। প্রথম টেস্টের মতো যে দলের ব্যাটসম্যানরা নিজেদের সামর্থ্য শুরুতেই দেখাতে পারবেন তাদেরই জয় হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বাংলাদেশের কাছে কোন অপশন নেই। সিরিজ বাঁচাতে হলে জিততেই হবে। এমন পরিস্থিতি এর আগে দেশের মাটিতে কখনই তৈরি হয়নি। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে এ সিরিজের আগে ৭টি টেস্ট সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ের মাটিতে চারটি ও দেশের মাটিতে তিনটি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। কখনই সিরিজের প্রথম টেস্টেই হেরে সিরিজ হারের মুখে পড়েনি বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে ২০০১ সালে প্রথম জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। এরপর ২০০৫ সালে ও ২০১৪ সালে খেলে। ২০০১ সালে প্রথম টেস্ট ড্র করার পর দ্বিতীয় টেস্টে হেরে সিরিজ হার হয়। ২০০৫ ও ২০১৪ সালেতো বাংলাদেশই সিরিজ জিতে। ২০০৫ সালে প্রথম টেস্ট জিতে বাংলাদেশ। ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টেস্ট জিতে। পরের টেস্ট ড্র করে সিরিজ জিতে। ২০১৪ সালেতো তিন টেস্টেই জিম্বাবুইয়েকে হারায়। দেশের মাটিতে সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরেই সিরিজ হারের বিপদে এর আগে কখনই পড়েনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের বিপক্ষে বাংলাদেশের মাটিতে এর আগেতো টেস্টই একবার জিততে পেরেছে জিম্বাবুইয়ে। এবার বড় বিপদেই পড়ে গেল দল। বাংলাদেশ এখন ক্রিকেটে অনেক উন্নত দল। এমন মুহূর্তে জিম্বাবুইয়ের কাছে সিরিজ হারটি দলের ওপর ভালভাবেই প্রভাব পড়বে। প্রথম টেস্ট হারেই প্রভাব দেখা যেতে পারে। এখন এখান থেকে নিজেদের মুক্ত করার পথ শুধু জয় দিয়েই খুলতে হবে। বাংলাদেশ কী পারবে সেই কাজ করতে? অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আগেই জানিয়েছেন তা সম্ভব। বলেছেন, ‘আমাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরও বাড়াতে হবে। বিগত কয়েকটা ম্যাচ আমরা খুব বাজেভাবে ব্যাটিং করেছি। আমাদের অবশ্যই এই পরস্থিতি থেকে বের হতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সামর্থ্য আছে। অবশ্যই ঘুরে দাঁড়াতে পারব। টপঅর্ডার থেকে বড় রান আসতে হবে। কিন্তু আমরা টপ থেকে লো অর্ডারে সবাই ব্যর্থ হচ্ছি। এটা যদি ঠিক করতে পারি তাহলে ঢাকা টেস্টেই দেখবেন আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগেও এমন সময় এসেছে তখনও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আশাকরি সবাই মিলে আবার ঘুরে দাঁড়াব। আমার মনে হয় একটা ইনিংসই যথেষ্ট। মিরপুর টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখবেন ইনশাল্লাহ।’ ভিন্ন বাংলাদেশ, পারফর্ম করা বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের দেখা মিললেই এখন হলো। ক্রিকেটারদের ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্যে এখন জয় তুলে নিয়ে সিরিজ ড্র করা গেলেই রক্ষা। না হলে সিরিজ হার হবে।
×