ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

২০৪৫ সালের মধ্যে ইচ্ছামৃত্যু!

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ৩১ অক্টোবর ২০১৮

২০৪৫ সালের মধ্যে ইচ্ছামৃত্যু!

অনলাইন ডেস্ক ॥ বার্ধক্য হচ্ছে শরীরবৃত্তীয় এবং সামাজিক আচরণসমূহের সমষ্টিগত পরিবর্তন। শরীরের বিভিন্ন জৈবিক এবং বিপাকীয় ক্ষমতা হ্রাসের কারণে আমরা ধীরে ধীরে বুড়িয়ে যেতে থাকি। বয়োবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গস্থ কিছু কিছু কোষকলা অধঃপতিত হতে থাকে। কোষকলাস্থ এনজাইমগুলোর সক্রিয়তা পূর্বের তুলনায় অনেকাংশে কমে যায়, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণে অধিক সময় ব্যয় হয় এবং ক্রমে এগুলো মরে যেতে থাকে। বেঁচে থাকা অবশিষ্ট কোষকলাগুলোও তেমন সক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে বিভিন্ন অঙ্গের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকে শরীর। আর পরিণতি হিসেবে এক সময় নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাই আমরা। কিন্তু এবার একদল গবেষক জানিয়েছেন, বার্ধক্যের জন্য মানুষের মৃত্যু হবে না! শুধু দুর্ঘটনা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ইচ্ছামৃত্যুর মাধ্যমে অবসান ঘটাতে হবে জীবনের। আর এই দিনের জন্য অপেক্ষার প্রহরও শেষ পর্যায়ে, ২০৪৫ সালের মধ্যেই নাকি মানুষ বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুর থেকে লাভ করবে নিষ্কৃতি। এমনটাই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) জিনতত্ত্ববিদ অধ্যাপক জোসে লুই কর্দেইরো ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের অধ্যাপক ও জিনতত্ত্ববিদ ডেভিড উড। মৃত্যুরথ থামিয়ে দেওয়ার এই রহস্যের কথা অবশ্য কোনো আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নালের গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়নি। তাদের প্রকাশিতব্য বই ‘দ্য ডেথ অব ডেথ’-এর মাধ্যমে এই দাবি করেছেন দুই বিজ্ঞানী, শীঘ্রই বইটি ইংরেজি ছাড়াও ছাপা হবে স্প্যানিশ, পর্তুগিজ ও কোরীয় ভাষায়। এই দুই জিনতত্ত্ব বিজ্ঞানী দাবি করেছেন, ২০৪৫ সাল নাগাদ মানুষ আর কোনো প্রাকৃতিক কারণে বা রোগে ভুগে মারা যাবে না। সব রকমের স্বাভাবিক মৃত্যুকে জয় করে ফেলবে মানুষ। জন্মের মতো মৃত্যুও আর স্বাভাবিক থাকবে না। বার্ধক্য বলতে তখন মানুষ শুধু বুঝবে রোগকে। আর সেই রোগ সারিয়ে মানুষকে বার্ধক্য থেকে ফেরানো যাবে ‘যৌবনে’। স্পেনের বার্সেলোনায় ইকোয়েস্ট্রিয়ান সার্কেলে তাদের এই দাবির পক্ষে বলতে গিয়ে কর্দেইরো ও উড জানিয়েছেন, জিনের ওপর মানুষের নিয়ন্ত্রণই এই অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলবে। এই পদ্ধতিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং। জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর জিনগুলোকে সারিয়ে ফেলা যাবে। জিন প্রযুক্তি কাজ করবে একটা ‘সংশোধনাগার’ হিসেবে! বিগড়ে যাওয়া, বখে যাওয়া কোষগুলোকে ‘সুস্থ, সামাজিক স্রোত-এ ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক করে তোলা হবে। স্টেম সেল দিয়ে শরীরের বিভিন্ন রোগজীর্ণ অংশ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোকে অনায়াসে সারিয়ে ফেলা যাবে। হৃৎপিণ্ড, কিডনি, ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়ের মতো দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে অনায়াসে বদলে দেওয়া যাবে ‘থ্রিডি প্রিন্টেড’ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দিয়ে। জন কর্দেইরোর বক্তব্য, ‘ঠিক করেই ফেলেছি, আমি মরব না। ৩০ বছর পর তো আর মরার কথাটাই ভাবব না।’ অন্য বিজ্ঞানী ডেভিড উডের বক্তব্য, ‘এক দিন সেটাই বাস্তব হবে। ২৭ বছর পর সেটাকেই আমরা সবাই ‘একমাত্র সত্যি’ বলে মেনে নেব। কর্দেইরোর দাবি, ‘যৌন কোষ ও রক্তের কোষ ছাড়া শরীরের প্রতিটি কোষেই থাকে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম। শরীরের ক্রোমোজোমে যে ডিঅক্সি-রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড (ডিএনএ) থাকে, তার একটা ‘লেজ’ থাকে যার নাম ‘টেলোমেয়ার’। আমরা যতই বার্ধক্যের দিকে এগোতে থাকি, ততই আকারে ছোট হতে থাকে সেই টেলোমেয়ার। আমরা যদি সেই আকারে ছোট হয়ে যাওয়া টেলোমেয়ারকে জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে ইল্যাস্টিকের মতো টেনে বাড়িয়ে দিতে পারি, তাহলেই বয়সের হিসেবে আমরা বার্ধক্যের দিকে এগিয়ে যেতে থাকলেও, দেহে ও মনে চিরযুবাই থাকতে পারব।’-থিঙ্কস্পেন ডট কম
×