ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নির্ভর করছে আদালতের ওপর ॥ ইসি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ অক্টোবর ২০১৮

খালেদার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নির্ভর করছে আদালতের ওপর ॥ ইসি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার দুই মামলায় দণ্ডিত হওয়ার পর এখন তার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তবে ইসি বলছে খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোন সিদ্ধান্ত দেবে না। আদালত সিদ্ধান্ত দিলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। আর প্রার্থী হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। আদালত কি সিদ্ধান্ত দেয় সেটাই অনুসরণ করবে ইসি। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া দুটি মামলায় দ-িত হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। এই রায় মাথায় নিয়ে তিনি কারাগারে বন্দী রয়েছেন। এরপর গত সোমবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তাকে নতুন করে আরও ৭ বছরের সাজার ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও আদালতের নির্দেশনা অনুসারে যেদিন থেকে তিনি গ্রেফতার হবেন সেদিন থেকেই এই মামলায় রায় কার্যকর হবে। গত ফেব্রুয়ারিতেই গ্রেফতার আছেন তিনি। সেদিন থেকেই তার আগের মামলার রায় কার্যকর হবে। সোমবার থেকে তার দ্বিতীয় মামলার রায়ের কার্যকারিতাও শুরু হবে। নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, দুই মামলায় দ-িত খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন কি না, সে বিষয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই অনুসরণ করবে ইসি। খালেদা নির্বাচন করতে পারবেন কি না, তা নির্ভর করবে আদালতের ওপর। উচ্চ আদালত নির্দেশ দিলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন উল্লেখ করেন। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশের বেশ কয়েকটি ধারায়ও প্রার্র্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে যোগ্যতা, অযোগ্যতার বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে আরপিও ১২(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে একজন প্রার্থী অযোগ্য হবেন, যদি তিনি- ক. কোন সংসদীয় আসনে ভোটার না হন (খ) নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের মনোনীত না হন বা স্বতন্ত্র প্রার্থী না হন, (গ) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের কিংবা সংবিধিবদ্ধ কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকেন, (ঘ) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৭৩, ৭৪, ৭৮, ৮৪ এবং ৮৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ন্যূনপক্ষে দুই বছরের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন এবং মুক্তিলাভের তারিখ হতে পাঁচ বছর অতিক্রান্ত না হয়, (ঙ) গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৬৩ (১) (সি) (ডি) এবং (ই) অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল করা হয় এবং বাতিলের তারিখ হতে তিন বছর অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অযোগ্য হবেন। আগামী ডিসেম্বরেই একাদশ সংসদ নির্বাচনের জোর প্রস্তুতি চলছে নির্বাচন কমিশনে। নবেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আইন অনুযায়ী আগামীকাল মঙ্গলবার থেকেই নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু করছে নির্বাচন কমিশন। আগামী বছরের ২৮ জানুয়ারির মধ্যেই সংবিধান অনুযায়ী কমিশনকে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে এলে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত রয়ে গেছে। সরকার ও বিরোধীদলের আইনজীবীরা এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে দুর্নীতির মামলায় সাজা ঘোষণার পর থেকে তিনি এখনও জেলে বন্দী রয়েছেন। আগের মামলায় এখনও তার জামিন হয়নি। এই অবস্থায় সোমবার আরও একটি মামলায় তাকে ৬ বছরের কারাদ- ঘোষণা করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন আগামী নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার ছাড়া পাওয়া বিষয়টি এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় তার নির্বাচনে অংশ নেয়া অনিশ্চিত। তবে তার আইনজীবীরা বলছেন, বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে এবং উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ ও নজির রয়েছে। তবে এ বিষয়টি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে। কেউ বলছেন উচ্চ আদালতে আপীলের পর উচ্চ আদালত যদি নি¤œ আদালতের রায় স্থগিত করেন তবেই তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। সাজা স্থগিত না হলে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন না। আবার কারও মতে উচ্চ আদালতে আপীলের পর তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। আইনের এই বিষয় তুলে ধরে ইসি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এটা শুধু খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে নয়। দেশের যে কোন নাগরিকের জন্য প্রযোজ্য। এটা আদালতের ওপর পুরোপুরি নির্ভর করবে। শুধু খালেদা জিয়ার কথা বলছি না, সবার জন্য বলছি, যদি কোন ব্যক্তি প্রার্থী হতে চান, কোন দ-ে দুই বছরের বেশি দ-িত হয়েছেন পূর্বে, এরকম কোন লোক একটি নির্দিষ্ট সময় পার না হলে পার্থী হতে পারেন না। যারা এখন দ-িত হয়ে দ- ভোগ করছেন, তাদের ক্ষেত্রে দ-টার যদি আপীল না থাকে, আপীলে যদি তাকে নির্বাচনে একেবারে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়টা যদি নির্দিষ্ট করা না থাকে, তাহলে ওনারা কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু যদি বলা থাকে আপীলে সাজাটাকে স্থগিত করা হয়নি, তাহলে কিন্তু আমাদের পক্ষ থেকে তাকে নির্বাচনে অংশ নিতে দেয়া সম্ভব হবে না। বিএনপি যদি আইনী লড়াই চালায়, সেক্ষেত্রে কী হবে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা আবারও আদালতের কাছে যেতে পারেন। আদালত বিচার-বিশ্লেষণ করে খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বহাল রাখতেও পারে। এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, উনি আপীল করবেন কি না? আপীল করলে সেখান থেকে কী ধরনের রায় আসবে? এটা আদালত নির্ধারণ কওে দেবে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, যদি আইনী কাঠামো না পায়, তাহলে সংসদ ভোটে ইভিএম ব্যবহার করার প্রশ্নই আসে না। আইনী কাঠামো পেলে পরীক্ষমূলকভাবে হলে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলার প্রয়োজনে যদি সেনাবাহিনী নির্বাচনে আনতে হয়, তাহলে আমরা আনব। এটা প্রতিটি নির্বাচনেই হয়।
×