ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পুনর্বাসন স্বপ্নের ঠিকানায়

মায়ের কোলে সন্তান যেভাবে নিরাপদ থাকে বাঙালী জাতি শেখ হাসিনার কাছে তেমনি নিরাপদ ॥ কালাম মাস্টার

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

মায়ের কোলে সন্তান যেভাবে নিরাপদ থাকে বাঙালী জাতি শেখ হাসিনার কাছে তেমনি নিরাপদ ॥ কালাম মাস্টার

মেজবাহউদ্দিন মাননু, কলাপাড়া, ২৭ অক্টোবর ॥ শনিবার থেকে ‘স্বপ্নের ঠিকানার’ বাসিন্দা আবুল কালাম মাস্টার। তিনি বললেন, ‘মায়ের কোলে যেভাবে সন্তান নিরাপদ থাকে, তেমনি বাঙালী জাতি শেখ হাসিনার কাছে নিরাপদ। তিনি যা বলেছিলেন তা করেছেন।’ পুনর্বাসিত দাশের হাওলা গ্রামের মাহফুজা বেগম বলেন, ‘আজকের দিনটি আমার কাছে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী তার পাওয়া ঘরটিতে ঢুকে তার সঙ্গে কথা বলেন। কেমন হয়েছে- জিজ্ঞেস করেছেন। তার হাতের স্পর্শ পেয়ে এই নারী অভিভূত। ভাবতেই পারছেন না। উর্ধশ^াসে এমন অভিব্যক্তি জানালেন মাহফুজা বেগম। পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে জমিসহ বাড়িঘরহারা পুনর্বাসিত ১৩০ পরিবারের অনেকেরই খোঁজ-খবর নিলেন মানবতার মা শেখ হাসিনা। যেন নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিশে গেলেন সরকারপ্রধান। কিছুক্ষণের জন্য শেখ হাসিনাকে কাছে পেয়ে স্বপ্নের ঠিকানার মানুষগুলোও স্বপ্নের ঘোরে ছিলেন। পেলেন তাদের স্বপ্নের ঠিকানা। এ পুনর্বাসন পল্লীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুরে তিনি এ পল্লীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। চাবি ও ঘরের দলিল জমিহারাদের কাছে হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক সুধী সমাবেশে ১৭ মিনিট ভাষণ দেন। এর আগে তিনি ‘স্বপ্নের ঠিকানার’ পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন। রোপণ করেন একটি নারিকেল চারা। ঘুরে দেখেন পুনর্বাসিত আবুল কালাম মাস্টার ও মাহফুজা বেগমের ঘর। ঘরে ঢুকে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। সুধী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এশিয়া মহাদেশের এটি একটি নিদর্শন এই পুনর্বাসনপল্লী ‘স্বপ্নের ঠিকানা।’ সরকারের হঠাৎ কোন উন্নয়ন প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে প্রকল্প চালুর আগেই পুনর্বাসন করা হলো। পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া-মধুপাড়া মৌজায় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি ও বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজে ’১৬ সালে ১০০২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এতে বসতভিটা হারায় ১৩০ পরিবার। যাদের আজ আধুনিক সুবিধা সংবলিত ‘স্বপ্নের ঠিকানার’ চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়। শেখ হাসিনা এসময় এই স্বপ্নের ঠিকানার মানুষদের দুর্যোগকালীন আশ্রয়ের জন্য একটি বহুমুখী সুবিধা সংবলিত সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণের নির্দেশ দেন। বলেন, এখন থেকে যেখানেই পুনর্বাসন পল্লী করা হবে সেখানেই একটি করে আশ্রয়কেন্দ্র করারও নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের ঠিকানা ছাড়াও বরগুনাবাসীকে উপহার দেন ২১ প্রকল্প পায়রা বন্দর এলাকার প্রায় ছয় কি.মি. দীর্ঘ পায়রা বন্দর শেখ হাসিনা ফোর লেন সড়ক, পায়রা সমুদ্র বন্দর মসজিদ, পায়রা বন্দরের মাল্টি পারপাস ভবন, অফিসার্স গেস্ট হাউস, পায়রা বন্দরের স্টাফ ডরমেটরি ভবন, কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রী কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজ ও আলহাজ জালাল উদ্দিন ডিগ্রী কলেজের তিনটি চারতলা নবনির্মিত একাডেমিক ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন করেন পায়রা বন্দর প্রকল্প এলাকার সার্ভিস জেটির। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সমুদ্র বন্দরের মূল চ্যানেল রাবনাবাদ পাড়ের চারিপাড়ায় প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ টার্মিনাল নির্মাণ কাজের। যেখানে সরাসরি মাদার ভেসেল পণ্য খালাসের সুযোগ পাবে। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন দুটি কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ কাজের। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী পায়রা সমুদ্রবন্দরের ভূমি অধিগ্রহণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের লালুয়া, চান্দুপাড়া (উত্তর), চান্দুপাড়া (দক্ষিণ), লেমুপাড়া, ধুলাসার ও লোন্দা মৌজায় জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ছয়টি পুনর্বাসন প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এই অঞ্চলের মোট ২১ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থানীয় এমপি সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলহাজ মাহবুবুর রহমান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের উন্নয়ন করতে গিয়ে কোন মানুষের জীবন মানের যেন ক্ষতি না হয় তার ব্যবস্থা করেছি। আবেগপ্রবণ হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল দেশের প্রতিটি মানুষ যেন শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান, খাদ্যনিরাপত্তা পায়। প্রত্যেকের জীবনমানের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের বাস্তবায়নে তিনি ও তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণাঞ্চল ছিল সবচেয়ে অবহেলিত। এই জনপদের উন্নয়নে যত সেতু দরকার তা আমরা করেছি। আমরা ’২১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করব, ইনশা আল্লাহ। ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল এই দশ বছরে বাংলাদেশকে বিশে^ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত করা হয়েছে। বিদ্যুতের উৎপাদন চারগুণ বাড়ানো হয়েছে। কোন লোডশেডিং নেই। বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে এই এলাকায় আরও একাধিক বিদ্যুত প্ল্যান্ট করার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানান তিনি। এ সময় পায়রা পোর্টের উন্নয়ন অগ্রগতির সামগ্রিক চিত্র ভিডিও দৃশ্যে উপস্থাপন করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’২১ সালে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু করা হবে। টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শেষ হলে ১০ মিটার নাব্য মাদার ভেসেল সরাসরি পণ্যখালাস করতে পারবে। ’২৫ সালে বিশে^র মধ্যে একটি আধুনিক সমুদ্র বন্দরে পরিণত হবে পায়রা। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতার এক পর্যায়ে বলেন, স্বৈরাশসক জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনীদের রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন করেছেন। মন্ত্রী বানিয়েছেন। দেশ এজন্য পিছিয়ে গেছে। সেই দেশকে আমরা উন্নত দেশে পরিণত করতে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আগামী ’২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার আশা করছি। পাশাপাশি ’২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে তার সরকারের পরিকল্পনায় রয়েছে। নির্মাণ করা হবে গভীর সমুদ্র বন্দর। এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা থাকতে হবে বলে সকলকে সজাগ করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, নৌমন্ত্রী শাজাহান খান, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ আসম ফিরোজ, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত ও জ¦ালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ বিভাগীয় ও জেলা উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ ছয় শতাধিক সুধী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ হাতে এক এক করে স্বপ্নের ঠিকানাবাসীর কাছে স্বপ্নের চাবি হস্তান্তর করেন। সুধী সমাবেশে বক্তব্যের পরে তিনি হাত উঁচিয়ে দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। পরে তিনি তালতলীর জনসভার জন্য কলাপাড়া ত্যাগ করেন।
×