ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৬ নবেম্বর পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত

সাংবিধানিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ২৮ অক্টোবর ২০১৮

সাংবিধানিক সঙ্কটে শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মৈত্রীপালা সিরিসেনা শুক্রবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে রনিল বিক্রমাসিংহকে বরখাস্ত ও তার স্থলে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসেকে বসিয়েছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর সিরিসেনা পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করেন। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে এটি কার্যকর হয়। বিবিসি ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। সাংবিধানিক সঙ্কটে পড়তে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কা। বিক্রমাসিংহেকে বরখাস্ত করে সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বসানোর পর এই সঙ্কট শুরু হয়। বিক্রমাসিংহে সবেমাত্র তিন দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফেরার পরই বরখাস্ত হন। তার দাবি, তাকে এভাবে বরখাস্ত করা অবৈধ। ২২৫ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সদস্যের বেশিরভাগ তাকে সমর্থন করেন। ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) প্রধান বিক্রমাসিংহে জোর দিয়ে বলেছেন, তিনি এখনও দেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়েছেন, পার্লামেন্টেই তার ভাগ্য নির্ধারিত হবে। তবে পার্লামেন্ট ভেঙ্গে না দিয়ে অধিবেশন স্থগিত করেছেন সিরিসেনা। রাজাপাকসেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করার কয়েক ঘণ্টা আগে সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম এ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ- এর মধ্যে তার শ্রীলঙ্কা ফ্রিডম পার্টি এসএলএফপি রয়েছে) ও অন্যান্য ছোট দল ক্ষমতাসীন জোট থেকে সরে যায়। বিক্রমাসিংহে ভারত সফরে নয়াদিল্লীর সমর্থন নিয়ে আসেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিরিসেনার এই সিদ্ধান্তে তার দেশের অনেকেই বিস্মিত হয়েছে। পাশাপাশি বিস্মিত হয়েছে নয়াদিল্লীও। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এতে ভারতকে কোণঠাসা করার পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। সিরিসেনা ২০১৫ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে বিক্রমাসিংহের ইউএনপির সঙ্গে জোট গড়েন। তিনি তাকে প্রধানমন্ত্রী করেছিলেন। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে রাজাপাকসের নবগঠিত শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) বিপুল বিজয় লাভ করার পর সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। দেশটির মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনাকার্নে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট অধিবেশন সাসপেন্ড করেছেন। শনিবার দুপুর ১২টা থেকে এটি কার্যকর হবে।’ পার্লামেন্টের কর্মকর্তারা বলেছেন, মৈত্রীপালা ১৬ নবেম্বর পর্যন্ত ২২৫ সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্ট স্থগিত করেছেন। ইউপিএফএ ও এসএলপিপির পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠেছে। ২২৫ সদস্যের পার্লামেন্টে এই দুই দলের মোট আসন ৯৫টি। আর ইউএনপির রয়েছে ১০৬ জন সদস্য। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩টি আসন। রাজাপাকসেকে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। কয়েক সপ্তাহ ধরে এসএলএফপি-এসএলপিপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে কয়েক সপ্তাহ ধরে সিরিসেনা ও রাজাপাকসের মধ্যে আলোচনা হলেও তা এত দ্রুত ঘটে যাবে বলে কেউ ভাবেনি। অর্থমন্ত্রী মঙ্গলা সামারভাইরা বিক্রমাসিংহের বরখাস্ত হওয়া মেনে নিতে পারেননি। তিনি বিবিসিকে বলেছেন, ‘এটি একটি গণতন্ত্রবিরোধী অভ্যুত্থান। সাংবিধানিকভাবে প্রেসিডেন্ট রনিলকে পদচ্যুত করতে পারেন না। রনিল এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী।’ সিরিসেনা ২০১০-১৪ সালে রাজাপাকসের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে রাজাপাকসেকে পরাজিত করতে তিনি বিক্রমাসিংহের সঙ্গে জোট বাধেন। অর্থনৈতিক নীতি এবং সরকারের প্রতিদিনের কর্মকা- নিয়ে সিরিসেনা ও বিক্রমাসিংহের মধ্যে অনেকদিন ধরেই বিরোধ ছিল। মে মাসে এই ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অবসানের জন্য বিক্রমাসিংহে সিরিসেনার প্রতি আহ্বান জানান। বিক্রমাসিংহে বলেছিলেন জোট সরকার প্রতিশ্রুত সংস্কার করতে ব্যর্থ হয়েছে। গত সপ্তাহে ভারতকে একটি টার্মিনাল ভাড়া দেয়াকে কেন্দ্র করে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দু’জন বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। বিক্রমাসিংহে ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) সমর্থনে প্রেসিডেন্ট হন। সিরিসেনার ইউপিএফএ শুক্রবার ঘোষণা দেয়, তারা বর্তমান সরকারের জোটটি ভেঙ্গে দিতে চায়। এরপরই এ জোটের পতন ঘটে।
×