ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সব বয়সীর সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

সব বয়সীর সমাগমে উৎসবমুখর পরিবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, জুম, রুটি, জেলি, মিষ্টি, দুধ কিংবা চাল ডালসহ নানা ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের সমাহার এগ্রো মেলায়। কেউ ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেউবা কিনে খাচ্ছেন অথবা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাসার জন্য। শতাধিকেরও বেশি খাবারের পণ্য দিয়ে সাজানো হয়েছে মেলার স্টলগুলো। ছোট বড় সব বয়সী মানুষের সমাগমে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ এই মেলায়। শুধু দেশী নয় বিদেশী ক্রেতাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই নিজেদের পণ্য নিয়ে এসেছেন বলে জানিয়েছেন অংশগ্রহণকারীরা। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘ষষ্ঠ বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপো-২০১৮’। এ এক্সপোর উদ্বোধন করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সকাল থেকেই সারাদিনই মেলায় মানুষের বেশ সমাগম দেখা গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সবই মেলায় মিলছে বলে প্রথম দিনই মেলায় বেশ সরগরম। আর বাজার মূল্যের চেয়ে মেলায় একটু কম দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকেই মেলা থেকে পণ্য কিনতেও দেখা গেছে। সাইদুল ইসলাম মেয়েকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মেলায় নানা পণ্য দেখিয়ে ফেরার পথে বিস্কুট, বিভিন্ন মসলা আর কিছু চিপস কিনে নিলেন। তিনি বলেন, এসব আমাদের নিত্যপণ্যই তবে এখানে একটু কম দামে পেলাম তাই নিয়ে নিলাম। মেলায় খাদ্যপণ্য দেখার পাশাপাশি কেউ কেউ ঘুরে দেখছেন এসব তৈরির মেশিনও। ক্রেতারা দর্শকদের মেশিন সম্পর্কে নানা ধারণা দিতেও দেখা যায়। বাংলাদেশ এগ্রো প্রসেসরস এ্যাসোসিয়েশন (বাপা) ও এক্সট্রিম এক্সিবিশন এ্যান্ড ইভেন্ট সলিউশনের উদ্যোগে এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত। মেলায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সঙ্গে জড়িত দেশী-বিদেশী ১৮৮টি প্রতিষ্ঠানে ২৫৮টি স্টল অংশগ্রহণ করছে। স্টলে স্টলে সাজানো নানা ধরনের খাদ্যপণ্য। দেশের স্বানামধন্য প্রতিষ্ঠানের পণ্য যেমন রয়েছে তেমনি ক্ষুদ্র ও নতুন প্রতিষ্ঠানের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যেও প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। বাপা সূত্রে আরও জানা গেছে, উৎপাদিত প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্যের মধ্যে জুস, ড্রিংকস, বিস্কুট, চানাচুর, বিভিন্ন ধরনের পটেটো, কনফেশনারি দ্রব্য, সকল ধরনের মসলা, জ্যাম-জেলি, চাটনি, সস, সেমাই, নুডুলস, ঘি, দুধ, কাসুন্দি বিশেষ উল্লেখ করার মতো। মেলায় ইন্সট্যান্ট নুডুলস বিক্রি হচ্ছে। মানুষ দেদারছে কিনে খাচ্ছেন। বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের পণ্যের প্রতি আকৃষ্ট করতে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ২০ বা তারও বেশি ছাড় দেয়া হচ্ছে। একটি বম্বে স্টলের সামনে দেখা গেল, কয়েকটি পণ্য প্যাকেজ করে বিক্রি হচ্ছে। পাঁচ-ছয়টি পণ্য একত্রে মূল্য আসে ১৩০ বা ১৪০ টাকা যা রাখা হচ্ছে এক শ’ টাকা করে। নিয়মিত কেনা পণ্য একটু সাশ্রয়ে পেয়ে ক্রেতারাও খুশি। জানা গেছে, দেশে প্রায় ৬৮২ লাখ টন প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য উৎপাদন হচ্ছে এবং প্রায় ১৭০ লাখ টন রফতানি হচ্ছে। এর আগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাপার সভাপতি ফখরুল ইসলাম মুন্সির সভাপতিত্বে মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইতোমধ্যে পাঁচবার অনুষ্ঠিত এই মেলায় আশাতীত সাফল্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশী প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও দর্শনার্থীদের সাড়া পড়ায় আমরা এবারও মেলায় সাফল্য নিয়েও অত্যন্ত আশাবাদী। চলতি অর্থবছরের (২০১৮-১৯) প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) এগ্রো প্রসেসিং পণ্য রফতানি আয় আগের বছরের তুলনায় ৯৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর এ তিন মাসে রফতানি আয় হয়েছিল ১৪ কোটি মার্কিন ডলার। সেটা এ বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরে হয়েছে ২৯ কোটি মার্কিন ডলার। নিজেদের কারণেই ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। এর জন্য ভারত দায়ী নয় জানান বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, নানা সময় ভারত থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করে দেশের সঙ্কট দূর করা হয়। এছাড়াও সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে বলেই ঐক্যফ্রন্টের মাধ্যমে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারতের নর্থ-ইস্ট অঞ্চলে বাংলাদেশী খাদ্যপণ্যের চাহিদা বাড়ছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী খাদ্য রফতানির সুযোগও বাড়ছে বলে জানান ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার। তিনি আরও বলেন, ভারতে খাদ্যপণ্য রফতানির সুযোগ করে দিতে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। তবে ভারতের বাজারে খাদ্য রফতানি করতে বাংলাদেশকে কিছু নিয়ম-নীতি মানতে হবে। বাংলাদেশী কিছু শিল্প কারখানাও ভারতে গড়ে উঠেছে। ভারতীয় হাইকমিশনার আরও বলেন, ভারতে খাদ্যপণ্যের বড় মার্কেট আছে। আসুন দ্বিপাক্ষিকভাবে বিনিয়োগ করি কোন প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে নয়। কৃষিপণ্য প্রসঙ্গে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশকে ভারত নানাভাবে সহযোগিতা করছে।
×