ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রবের বাড়িতে বৈঠকে সিদ্ধান্ত

২৩ অক্টোবর সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

২৩ অক্টোবর সিলেটে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সাত দফা দাবি আদায়ের আন্দোলন কর্মসূচী কি হবে তা নিয়ে দোটানায় পড়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ফ্রন্টে বিএনপির অংশ চাচ্ছে সরকারবিরোধী কঠোর কর্মসূচী দিতে। অপরদিকে অন্যান্য শরিকরা চাচ্ছে জনমত সৃষ্টি করে সরকারে কাছ থেকে দাবি আদায় করতে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপিকে নিয়ে জোট গঠনের পর এবার সরকারবিরোধী কর্মসূচী চূড়ান্ত করার চেষ্টা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের। আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেটে মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচী শুরু করবে নবগঠিত এই ফ্রন্ট। এর পর প্রথমবারের মতো কামাল হোসেন-বিএনপি জোট সমাবেশ করবে। মঙ্গলবার বিকেলে উত্তরায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রবের বাড়িতে ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান। দুই ঘণ্টার বেশি সময় রুদ্ধদ্বার এই বৈঠক চলে। নানা নাটকীয়তার পর গত শনিবার যুক্তফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা বিকল্পধারাকে বাদ দিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বিএনপিকে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের যাত্রা শুরু করে। জামায়াত ইস্যুতে ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়নি বিকল্পধারা। যদিও জামায়াত ইস্যুতে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন কামাল হোসেন। শেষ পর্যন্ত জামায়াতকে বাদ না দেয়া হলেও বিএনপির সঙ্গে তিনি ঐক্যে হাত মিলিয়েছেন। বিএনপি, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গড়া এই জোটের নেতারা বেলা সাড়ে ১২ টায় উত্তরায় আ স ম আবদুর রবের বাসায় বৈঠকে বসেন। এর আগেও তারা গত রবি ও সোমবার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। যদিও গত দুই দিনের বৈঠকে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, তবে মঙ্গলবারের দীর্ঘসময় ধরে চলা বৈঠকে কর্মসূচীর বিষয়ে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি নেতারা। এই বৈঠকে শরিক দলগুলোকে এককাতারে আনতে পূর্ণাঙ্গ লিয়াজোঁ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন করা যায়নি। আর তাই বুধবারও এসব অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে আলোচনায় বসবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। মঙ্গলবারের বৈঠক শেষে রব সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম কর্মসূচী হচ্ছে আগামী ২৩ অক্টোবর সিলেট সফর। এই সফরে মাজার জিয়ারতসহ জনসভা বা সমাবেশ হতে পারে। মাজার জিয়ারতের পাশাপাশি জনগণের উদ্দেশে কিছু বলার জন্য আমাদের কর্মসূচী থাকবে। এরপরে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ সব বিভাগীয় শহরে কর্মসূচী দেয়া হবে। আমরা আশা করব আমাদের কর্মসূচী যাতে সফল করতে পারি সে জন্য জনগণ সহযোগিতা করবেন। তিনি সরকারের উদ্দেশে বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচী পালন করতে চাই। এজন্য সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ধরনের অসহযোগিতা হবে বলে আশা করি না। তিনি আরও বলেন, আজ বুধবার আবারও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক আছে। আজকের বৈঠকে ২ টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক সব দল থেকে লোক নিয়ে একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন, যারা আগামীদিনের আমাদের কর্মসূচী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে। তবে কারা এই কমিটিতে থাকবে এই বিষয়ে পরে জানানো হবে। আ স ম আবদুর রব বলেন, জনগণ এখন তাদের আকাক্সক্ষা পূরণের জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে, বৈঠকের একটি সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক গুলশানে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এছাড়া বৈঠকে ছিলেন তানিয়া রব, আবদুল মালেক রতন, এস এম আকরাম, শহীদুল্লাহ কায়সার, ডাঃ জাহেদ উর রহমান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, বিএনপি নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী। সিলেটে কী ধরনের কর্মসূচী দেয়া হবে এমন প্রশ্নে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, প্রথমে মাজার জিয়ারত, এরপর জনসভা হবে। এছাড়া অন্যান্য কর্মসূচীর বিষয়ে বুধবার জানানো হবে। বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার রায়ের তারিখ একেবারেই সরকারের নির্দেশে করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে বলেন, প্রথম থেকেই চেষ্টা করা হয়েছে বিনাবিচারে বা ন্যায়বিচার ছাড়াই তাকে (খালেদা জিয়া) সাজা দেয়ার। আদালতকে সেভাবেই সিদ্ধান্ত জানিয়েছে বা আদালতকে ব্যবহার করছে। আদালতে খালেদার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজ চালানো ও রায় ঘোষণা করা সম্পূর্ণ বেআইনী। আমি মনে করি, বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে, এটা তারই প্রমাণ। তিনি বলেন, যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বিষয়, আত্মপক্ষ সমর্থনের বিষয়সহ বিভিন্ন বিষয় বাকি ছিল। তা আদালত নেয়নি। বিচার পরিপন্থী এ রকম কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানাই আমরা। আগামী ২৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ সিলেটে অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঐক্যফ্রন্টের দায়িত্বশীল একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে মাহির সদ্য টেলিফোন সংলাপ এবং অতীতে বিএনপি নেতা ও সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে মান্নার টেলিফোন সংলাপের মতো অতীতের ঘটনাগুলো কামাল হোসেনকে ভাবিয়ে তুলেছে। কামাল হোসেন বিষয়টি জেনে বলেছেন, মাহমুদুর রহমান মান্নার সঙ্গে ওঠাবসাই উচিত নয়। এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মধ্যে চলছে নানান গুঞ্জন। আগামী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে মাহমুদুর রহমান মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানা যায়। একই সঙ্গে, সেনাপ্রধানকে নিয়ে ডাক্তার জাফরুল্লাহর মন্তব্যের বিষয়টি নিয়েও চিন্তিত ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। ফ্রন্টের একটি পক্ষ বি. চৌধুরীকে ঐক্যফ্রন্টে আনতে চায়। কিন্তু অধিকাংশই এ ব্যাপারে একমত নয়। এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মোস্তাফা আমিন বলেন, আমরা গণতন্ত্র চাই। ভোটাধিকার চাই। সেটা দেশের প্রতিটি মানুষই চায়। এ অধিকার আদায় করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্য দিয়েই করতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্য ফ্রন্টের মাধ্যমেও তা করা যায়।
×