ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

উত্তর চট্টগ্রামের সাত আসনেও আওয়ামী লীগের দৃঢ় অবস্থান

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

উত্তর চট্টগ্রামের সাত আসনেও আওয়ামী লীগের দৃঢ় অবস্থান

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক সাংগঠনিক জেলা উত্তর চট্টগ্রামের সাতটি আসনেও মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা খুবই তৎপর। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টির পাশাপাশি বিএনপিও থেমে নেই। নির্বাচন আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মাঝামাঝি যে কোন সময় হবে এ আশা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও মিত্র দলগুলোর মনোনয়ন পেতে আগ্রহীরা যেভাবে তৎপর, এর বিপরীতে বিএনপি ও এর মিত্র দলগুলোর প্রার্থীদের তৎপরতা অপেক্ষাকৃত কম। উত্তর চট্টগ্রামের এই সাত আসনে অর্ধশতাধিক নেতা সরকারী, বিরোধী দল ও মিত্রদের পক্ষ থেকে মনোনয়ন লাভে আগ্রহী। এসব আসনে পুরনোদের সঙ্গে নতুন মুখ বহু। কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সকলের লবিং যেমন চলছে, তেমনি স্ব স্ব এলাকায় প্রচারেও থেমে নেই। চট্টগ্রাম মহানগরীর মতো উত্তর চট্টগ্রামেও নির্বাচনী তৎপরতায় আওয়ামী লীগ এগিয়ে। এ সাংগঠনিক জেলায় আওয়ামী লীগ অতীতে যেমন মিত্র দলগুলোর কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেয়নি এবারও একেবারেই ক্ষীণ। তবে এবার মনোনয়ন প্রদানের ক্ষেত্রে নানা মেরুকরণ হওয়ার সম্ভাবনা প্রতীয়মান। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ভোটের হাওয়া বইতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। চলছে জয়লাভের সমীকরণের পাশাপাশি মনোনয়ন লাভের লক্ষ্যে নিজ দলে অবস্থান সংহত করার কাজটিও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তৃণমূলে গণসংযোগ এবং কেন্দ্রের সুদৃষ্টি লাভের চেষ্টায় তৎপর। নির্বাচনে জোট-মহাজোট কিংবা ঐক্যফ্রন্ট যাই হোক না কেন, মূল শক্তি আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এই দু’দলকে কেন্দ্র করেই মূলত ভোটের রাজনীতি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করলে এক ধরনের প্রত্যাশার জায়গা তৈরি হয়ে যায়। সে হিসেবে নেতারা কেন্দ্রের মন জয় করতে সকল ধরনের কৌশলই অবলম্বন করে চলেছেন। এখন চলছে একেবারে শেষ সময়ের চেষ্টা। মাঠে নেমে পড়েছেন মনোনয়ন প্রত্যার্শী অর্ধশতাধিক নেতা। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আমদানি-রফতানিসহ গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কারণে চট্টগ্রাম জেলা অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে থাকে। এই চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে দলগুলো পরিকল্পনা সাজায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে লালদীঘি মাঠের জনসভায় ঘোষণা করেছিলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজ হাতে নিলাম। সে থেকে একের পর এক গৃহীত এবং বাস্তবায়িত হতে চলেছে অনেক মেগা প্রকল্প। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি উভয় দলই প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে খুবই কৌশলী থাকবে, এটা ধারণাই করা যায়। মূল স্রোত বড় দুদলের হলেও শেষ পর্যন্ত জোট-মহাজোটের সমীকরণে ছোট দলগুলোও বড় দলের প্রতীক পেতে পারেন। সেই হিসাবটাও রেখেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা। উত্তর চট্টগ্রামে মোট আসন সাতটি। এর মধ্যে ৫টিতে আওয়ামী লীগ, ১টিতে জাতীয় পার্টি এবং একটিতে তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্য রয়েছেন। আগামী নির্বাচনে কারা প্রার্থী হতে পারেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা। চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) ॥ স্থলপথে চট্টগ্রামের প্রবেশদ্বার মীরসরাই উপজেলা। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এবং দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য। এবারও নৌকা প্রতীকে মনোনয়নের প্রধান দাবিদার প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা। তিনি ইচ্ছুক হলে অন্য কারও নাম কেন্দ্রে বিবেচিত হবে না, এমনই ধারণা তার অনুসারীদের। তবে মনোনয়নের আরেকজন জোরালো দাবিদার চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, মীরসরাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ গিয়াস উদ্দিন। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনিও পিছিয়ে নেই। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বয়সে অনেক প্রবীণ হওয়ায় নতুন নেতৃত্ব হিসেবে গিয়াস উদ্দিনকে নিয়ে এগোতে চান তার সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত মীরসরাইয়ে প্রার্থিতা বদল হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, এমনই আভাস রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলও রয়েছেন মনোনয়ন দৌড়ে। কোন কারণে পিতা নির্বাচন করতে না পারলে তিনিই প্রার্থী হবেন, এমন আশা মোশাররফ অনুসারীদের। তবে প্রার্থী বদল হলে গিয়াস উদ্দিনই পাবেন নৌকা প্রতীক, এমন আশায় মাঠ গোছাচ্ছেন তার সমর্থকরা। বিএনপি থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী। এবার এলাকায় তার তৎপরতা কম। বয়সের ভারে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মাঠে নেমেছেন ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম ইউসুফ। তিনি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সহ-সভাপতি। এলাকায় নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। তিনি মনোনয়ন লাভের বিষয়ে তার দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া অনেক আগেই তাকে প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। সে অনুযায়ী তিনি ধানের শীষ প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্রস্তুত। চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) ॥ এ আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য যুদ্ধাপরাধের জন্য দ-িত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। বর্তমানে সংসদ সদস্য তরিকত ফেডারেশনের সভাপতি নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন। এবারও নৌকা প্রতীকে ১৪ দলের মিত্র হিসেবে তিনিই মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাবেক এমপি রফিকুল আনোয়ারের ভাই ফখরুল আনোয়ার ও মেয়ে খদিজাতুল আনোয়ার সনি, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ড. মাহমুদ হাসানের পুত্র চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ সদস্য আখতার উদ্দিন মাহমুদ পারভেজ এবং শিল্পপতি সাদাত আনোয়ার সাদী। তবে আওয়ামী লীগের মধ্যে এত বিভেদের পাশাপাশি জোট সংহত করার জন্য শেষ পর্যন্ত আবারও মনোনয়ন পেয়ে যেতে পারেন নজিবুল বশর মাইজভা-ারী। বিএনপিতে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাকা চৌধুরীর ছোট ভাই দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া দলের সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফায়েজী এবং ফাঁসির রায়ে দ-িত সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীও বিএনপি বা জোটের মনোনয়ন চাইতে পারেন। চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) ॥ চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের মাহফুজুর রহমান মিতা। তিনি দ্বীপবন্ধু খ্যাত মোস্তাফিজুর রহমানের পুত্র। বর্তমান এমপি হিসেবে তার দাবি সবচেয়ে বেশি। তবে নিজ দলের মধ্যেই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন এই নেতা। উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর মেয়র এবং দলের অনেক ইউপি চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কেন্দ্রে তাদের বক্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী আরও যারা রয়েছেন তারা হলেন সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাহজাহান বিএ এবং বিএমএ’র সাবেক নেতা ডাঃ জামাল উদ্দিন। বিএনপি থেকে মনোনয়ন দৌড়ে যারা রয়েছেন তারা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা, বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বাবুল এবং কাতার প্রবাসী ব্যবসায়ী নুরুল মোস্তফা খোকন। ইতোমধ্যেই মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দোয়া আশীর্বাদ চেয়ে এলাকায় গণসংযোগ শুরু করে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন সীতাকু- চট্টগ্রামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। শিল্প এলাকা হিসেবে সীতাকু-ের বেশ পরিচিতি রয়েছে। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের মোঃ দিদারুল আলম। তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র এম মঞ্জুর আলমের ভাইপো। সীতাকু-ে এবার আওয়ামী লীগ থেকে কে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। বর্তমান এমপি দিদারুল আলম রাজনীতির ক্ষেত্রে খুব বেশি পটু না হলেও দুর্নাম নেই। তিনি মনোনয়ন চাইবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। তবে আর যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তার হলেন সাবেক এমপি এবিএম আবুল কাশেমের পুত্র বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এসএম আল মামুন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া। তবে এর বাইরে যে নামটি উঁকি দিচ্ছে তিনি হলেন সাবেক চসিক মেয়র এম মঞ্জুর আলম। মাঝে বিএনপির সমর্থন মেয়র হলেও পরিবারটি আওয়ামী পরিবার হিসেবে পরিচিত। চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ॥ এ আসনে রয়েছে জোট-মহাজোটের সমীকরণ। বর্তমান এমপি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন সমঝোতায় তিনি এমপি হয়েছেন দশম জাতীয় সংসদে। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গেই থাকবে, এমন ঘোষণা রয়েছে। সে হিসেবে আনিসুল ইসলামই লাঙ্গল প্রতীকে আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচন করবেন। তবে যদি আওয়ামী লীগ একক প্রার্থী প্রদান করে সেক্ষেত্রে মনোনয়ন চাইবেন চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এমএ সালাম। এছাড়া আরও যারা প্রার্থী হতে চান তারা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল এবং উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউনুস গণি চৌধুরী। হাটহাজারী আসনে বিএনপি থেকে বার বার নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। তিনি প্রয়াত হওয়ায় আলোচনায় এসেছে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দিনের নামটি। তবে সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের কন্যা ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানাও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন। তবে এক্ষেত্রে জোটের সমীকরণও রয়েছে। ২০ দলীয় জোটের নেতা হিসেবে মনোনয়ন চাইতে পারেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন নির্ভর করছে জোটের আসন ভাগাভাগির ওপর। চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) ॥ চট্টগ্রামের রাউজান মাস্টার দা সূর্যসেনসহ ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামীদের স্মৃতিধন্য এক জনপদ। চট্টগ্রাম বলতে সবার আগে রাউজান নামটি এসে যায়। এ উপজেলা ধারণ করছে মুক্তিযুদ্ধ এবং পাশাপাশি পাক হানাদার ও দোসরদের নির্যাতনে নিহত শত শত শহীদের গণকবর। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী। তিনি রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি এই আসনের এমপি। এ সময়ের মধ্যে এলাকায় অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। বৃক্ষ রোপণ ও পরিবেশ রক্ষায় কার্যক্রমের জন্য জাতীয়ভাবে পুরস্কৃতও হয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ থেকে তিনিই মনোনয়নের প্রধান দাবিদার। তার মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত, এমনই ধারণা অনুসারীদের। তবে মনোনয়ন পেতে চান আরও কয়েকজন নেতা, যাদের কেন্দ্র পর্যায়ে ভাল যোগাযোগও রয়েছে। নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন দৌড়ে আরও যে দুই নেতা রয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন। বিএনপিতে এ আসন থেকে বরাবরই নির্বাচন করে আসছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। দলের মধ্যে বিরোধ থাকলেও তিনিই ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেতে শক্ত প্রার্থী। তবে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আরও দুজনের নাম শোনা যায়। তাদেরও রয়েছে পরিচিতি এবং জনভিত্তিক। বিএনপির আর যে নামটি আলোচিত তিনি হলেন সাবেক রাষ্ট্রদূত ও কেন্দ্রীয় নেতা গোলাম আকবর খন্দকার। এছাড়া সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহর নামটিও আছে আলোচনায়। তবে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে বর্তমান সেনাপ্রধান নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে তিনি ফেঁসে গেছেন। প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনাও করেছেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে সেনাসদরের পক্ষ থেকে জিডিও করা হয়েছে। জিডির অভিযোগ প্রমাণিত হলে এটি মামলায় রূপান্তরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে তার অবস্থান একেবারেই নড়বড়ে। নির্বাচন করে জয়লাভ তো দূরের কথা এখন তার অবস্থা ‘কুল রাখি না শ্যাম রাখি’ অবস্থা। এদিকে, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুর বাড়িও রাউজানে। লাঙ্গল প্রতীকে তিনিও প্রার্থী হতে পারেন। তবে জাতীয় পার্টির এ নেতা দশম সংসদ নির্বাচনে এমপি হয়েছেন চট্টগ্রাম নগরীর একটি আসন থেকে। চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনীয়া) ॥ চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া আসনটির বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। এ আসনে আগে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-ে দ-িত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এবার বিএনপিতে নতুন মুখ নিশ্চিত হলেও আওয়ামী লীগে হাছান মাহমুদই থাকছেন, এমন ধারণা এলাকায়। কেননা, আসনটিতে দলের বিকল্প নেতা সেভাবে উঠে আসেনি। এছাড়া হাছান মাহমুদের প্রচেষ্টায় এলাকায় দৃশ্যমান উন্নয়ন যে হয়েছে একথা অস্বীকার করার জো নেই। এছাড়াও তিনি দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত। অতীতে মন্ত্রীও ছিলেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের জন্য আগ্রহী কেউ থাকলেও প্রার্থিতা বদল হবে, এমন আশা কেউ করছেন না। বিএনপিতে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী না থাকায় নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। সে নতুন প্রার্থী সাকা পরিবার থেকেই হতে পারে, এমন মনে করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক্ষেত্রে তার পুত্র হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শওকত আলী নুরও এ আসন থেকে প্রার্থী হতে চান। নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের প্রচার দৃশ্যমান হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে তৎপরতা এখনও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
×