ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মতানৈক্যে নির্বাচন কমিশনের কাজে প্রভাব পড়বে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৭ অক্টোবর ২০১৮

মতানৈক্যে নির্বাচন কমিশনের কাজে প্রভাব পড়বে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও নির্বাচনে এর প্রভাব পড়বে না। সংসদ নির্বাচনের কাজ পরিচালনা করাও কঠিন হবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচনের জন্য করণীয় সব কিছুই করবে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে জেলা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সভায় ভোটার তালিকার সিডি যাচাই ও মুদ্রণ, ভোটকেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ এবং ক্ষেত্রমতে প্রতিষ্ঠানের বিশেষ সংস্কার, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুত এবং প্রশিক্ষণের আয়োজন, নির্বাচনী দ্রব্যাদি সংগ্রহ, বিতরণ ও বাজেট প্রণয়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, মাঠ পর্যায়ে সার্বিক প্রস্তুতি সন্তোষজনক। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে নির্বাচনের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি লক্ষ্য করেছি। তিন চারটি বিষয়ে তাদের মন্তব্য জানতে চেয়েছি। তা হলো ভোটার তালিকার সিডি, ভোটকেন্দ্রের অবস্থা। এসব বিষয় নিয়েই আলেচনা হয়েছে। তারা ইতোমধ্যে ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। কোন সমস্যা থাকলে তা সমাধানে কাজ করছে। দুর্গম এলাকায় কোথায় কিভাবে ভোটের মালামাল নেয়া যাবে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। এ সময় সাংবাদিকরা সিইসির কাছে কমিশনারদের মধ্যে মতবিরোধের বিষয়ে বিশেষ করে মাহবুব তালুকদারের সভা বর্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তার সভা বর্জন নিয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে বলেছেন, এতে নির্বাচন কমিশনের কাজে কোন প্রভাব পড়বে না। নির্বাচন করাও কঠিন হবে না। গত সোমবার কমিশনের সভায় নিজের প্রস্তাবসমূহ আলোচনার জন্য গৃহীত না হওয়ায় কমিশনের সভা বর্জন করেন ইসি মাহবুব তালুকদার। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কমিশনের সভায় তার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না দেয়ায় অপমানিত বোধ করছি। এ কারণে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান। তিনি বলেন, সভায় কথা বলতে না দেয়া বাক স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে তার। এ বিষয়ে সিইসির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিষয় আগের দিনের (সোমবারে) ঘটনা, এ নিয়ে তো গণমাধ্যমে সব রিপোর্ট হয়েছে। ওটা নিয়ে আমি কথা বলব না। আমাকে আর এ বিষয়ে জোরাজুরি করবেন না। নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার থাকবে, সেটার জন্য তফসিল পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন কী না জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘অবশ্যই। আমরা দেখি না সংসদ সদস্যদের কীভাবে রাখেন। সরকারের অবস্থান কী থাকবে, এমপিদের অবস্থান কী থাকবে। এটা নিয়ে বৈঠকে কোন কথা হয়নি। নির্বাচনী আচরণবিধি প্রসঙ্গে বলেন, আচরণবিধির কিছু কিছু বিষয়ে পরিবর্তন আসছে। তবে কি বিষয়ে পরিবর্তন আসছে তা এখনও বলার সময় আসেনি। কমিশনার কবিতা খানম বিষয়টি দেখছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে সামনে তিন চার দিন পর পর কমিশনের সভা রয়েছে। সভায় এটি নিয়ে আলোচনা হবে উল্লেখ করেন। বলেন, মাঠপর্যায়ের অবস্থা ভাল। কর্মকর্তাদের যে দায়িত্ব তারা তা যথাযথভাবে পালন করছেন। এ ক্ষেত্রে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়াও পুলিশের সহযোগিতা, জেলা পরিষদের সহযোগিতা এগুলো তারা প্রচুর পাচ্ছেন। তাদের এ পর্যন্ত যে প্রস্তুতি তা ভাল বলেও উল্লেখ করেন। নির্বাচনে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের বিষয়ে বলেন, তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় এখনও আসেনি। চট্টগ্রামে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা খারাপ, সেখানে বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হবে। সে বিষয়ে তারা অবহিত করেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির বৈঠকে আঞ্চলিক ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চার কমিশনার ইসি সচিবসহ ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রায় দেড় মাস পর গত সোমবার অনুষ্ঠিত হয় ইসির ৩৬তম সভা। সভায় মতবিরোধ দেখা দেয়ায় ইসি মাহবুব তালুকদার বৈঠক বর্জন করেন। তবে সোমবার বৈঠক বর্জন করলেও মঙ্গলবার মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির বৈঠকে তিনি অংশ নেন। এ সময় ইসি কর্মকর্তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করায় এ সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক মাহবুব তালুকদারকে বৈঠকে ধন্যবাদ জানান সিইসি। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ সদস্যের কমিশন যোগ দেয়ার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফা নোট অব ডিসেন্ট ও আনঅফিসিয়াল নোট দিয়ে সভা বর্জন করেছেন মাহবুব তালুকদার। সর্বশেষ সোমবারের সভা বর্জনের বিষয়টি সারাদেশে আলোচনায় আসে। এর আগে ৩০ আগস্টও কমিশন সভায় অংশ নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জন করেন।
×