ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ অক্টোবর ২০১৮

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে গ্রেনেড হামলা মামলার রায়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্বরোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের খবর বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে। বুধবার আদালতের রায়ে ১৯ জনের মৃত্যুদ- ও ১৯ জনের যাবজ্জীবনের খবর ফলাও করে প্রকাশ করেছে বিবিসি, রয়টার্স, আনন্দবাজার, আল জাজিরা, এপি, দা গালফ টুডে, হিন্দুস্তান টাইমস, সিনহুয়াসহ প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। অধিকাংশ গণমাধ্যমই এটি একটি রাজনৈতিক ও পরিকল্পিত হামলা উল্লেখ করে তারেক রহমানের যাবজ্জীবনের খবরকে গুরুত্ব দিয়েছে। বলা হয়েছে, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে। রায়ের পরপরই খবর প্রকাশ করে বিবিসি। খবরে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ২০০৪ সালে রাজনৈতিক সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনার দায়ে ১৯ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।’ ‘২০০৪ সালে সমাবেশে ভয়াবহ হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদ-’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ওই সময়ে ক্ষমতায় থাকা বিএনপির বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে তার অনুপস্থিতিতে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমাবেশে ওই হামলা চালনা হয়। দলটির নেতা শেখ হাসিনা এখন দেশটির প্রধানমন্ত্রী।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের শিরোনাম ছিল ‘২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার রায়ে বিরোধী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছেন বাংলাদেশের আদালত।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০০৪ সালের ২১ আগস্টের হামলার ২৪ জন নিহত হন। আহত হন পাঁচ শতাধিক। হতাহতরা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছিলেন। রায়ের বিষয়ে সরকার পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, এ রায়ে তারা সন্তুষ্ট নন। এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীমকোর্টে আবেদন করবেন তারা। তারেক রহমানের ফাঁসি চাইবেন। অপরদিকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন এই রায় প্রত্যাখ্যান করছেন তারা।’ সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংবাদ মাধ্যম দা গলফ টুডে তে শিরোনাম করা হয় ‘২০০৪ এর হামলায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদ-’। খবরে বলা হয়, আজ বুধবার বাংলাদেশের একটি আদালত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় ১৯ জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন। বিরোধীদলের শীর্ষ পলাতক নেতাকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির খবরে শিরোনাম ছিল ‘রাজনৈতিক সমাবেশে হামলার ঘটনায় বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদ-’। খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনা অল্পের জন্য ওই সময় প্রাণে বেঁচে যান। এপির খবরে রায়ের খবরের পাশাপাশি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রতিক্রিয়া ও রায়ের সময়ের পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, রায় দেয়ার সময় দুই বার বিদ্যুত সংযোগ চলে যাওয়ায় বিচারককে বাধা পেতে হয়। রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের বাইরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ছিল। লুৎফুজ্জামান বাবরের প্রতিক্রিয়া তুলে ধরে বলা হয়, সাংবাদিকদের কাছে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ‘আল্লাহ সবকিছু জানেন। আমি এর সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’ কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ২০০৪ সালের হামলার ঘটনায় ১৯ জনের মৃত্যুদ-। দ্বিতীয় শিরোনামে ছিল, ২০০৪ সালের হামলার ঘটনায় বিরোধীদলের নেতা তারেক রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিল বাংলাদেশের আদালত। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগ আয়োজিত শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ হামলা হয়। দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা শেখ হাসিনার চারপাশে একটি মানব ঢাল তৈরি করে তাকে রক্ষা করেন। এ ঘটনায় নির্মমভাবে নিহত হন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা আইভি রহমান। মামলার নথিতে বলা হয়, বিএনপির দ্বারা এটি একটি ‘পরিকল্পিত হামলা’ ছিল। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট ২০০৪ সালের ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাদের সংবাদ শিরোনাম ছিল ‘রাজনৈতিক সমাবেশে আক্রমণের জন্য বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদ-।’ খবরে বলা হয়, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণের জন্য ১৯ জনের মৃত্যুদ- দিয়েছেন বাংলাদেশের একটি ট্রাইব্যুনাল আদালত। ‘হাসিনার ওপর হামলা : মৃত্যুদ- ১৯, খালেদাপুত্রসহ যাবজ্জীবন ১৭ জনের’ এই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আনন্দবাজার। পত্রিকাটির অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে খুনের চেষ্টার দায়ে তৎকালীন খালেদা জিয়া সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। যাবজ্জীবন কারাদ- হয়েছে খালেদা জিয়ার দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও খালেদাপুত্র তারেক রহমানসহ ১৭ জনের। এই হামলার তদন্তে শুরু থেকে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের চেষ্টা চালানো হয়।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। বেরিয়ে আসে অনেক অজানা তথ্য। ২০০৮ সালের জুনে বিএনপি সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই তাজউদ্দীন, জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদের (হুজি-বি) নেতা মুফতি হান্নানসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সিআইডি। তদন্তে বেরিয়ে আসে শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই ওই হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় ব্যবহৃত আর্জেস গ্রেনেড এসেছিল পাকিস্তান থেকে। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, ‘২০০৪ শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলায় বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলেকে যাবজ্জীবন দ- দেয়া হয়েছে, মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে ১৯ জনকে।’ আরও বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পলাতক ছেলে তারেক রহমানকে ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানকে (৫০) বিচারক পলাতক হিসেবে রায় ঘোষণা করেছেন। তিনি এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন। ধারণা করা হচ্ছে সেখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। যদিও ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ তার অভিবাসন অবস্থা সম্পর্কে কোন তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া ২১ আগস্টের হামলার রায় নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে। সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘২০০৪ সালে হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার জন্য বাংলাদেশে ১৯ জনের মৃত্যুদ-, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রের যাবজ্জীবন। ভারতের আরেক গণমাধ্যম দ্য হিন্দুর সংবাদে বলা হয়, বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানের পৃষ্ঠপোষকতায় জঙ্গী সংগঠন হরকাতুল জিহাদ-আল-ইসলাম (হুজি) এই গ্রেনেড হামলার আয়োজন করে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। সিনহুয়া ও আশাহি শিম্বুন পত্রিকার পৃথক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার ১ ঘণ্টার দীর্ঘ রায় দেন বিচারক। রায়ে দেয়ার সময় দুইবার বৈদ্যুতিক গোলযোগ ঘটে। রায়ের পর মৃত্যুদন্ড পাওয়া আসামি ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আল্লাহ সব জানেন। আমি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই। দোষীরা উচ্চ আদালতে আপলী করার জন্য ৩০ দিন সময় পাবেন।
×