ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেসিস দ্বিমত করলেও সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারছে না

সফটওয়্যার রফতানি থেকে আয় কমেছে

প্রকাশিত: ০৭:০৭, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সফটওয়্যার রফতানি থেকে আয় কমেছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশে তৈরি সফটওয়্যার রফতানি থেকে আয় কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ২০১৭-১৮ অর্থবছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন (১১.৯২) ডলারের সফটওয়্যার রফতানি কম হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। যদিও সরকার এই তথ্য মানতে নারাজ। সরকার বলছে, ইপিবির এই তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়। সফটওয়্যার নির্মাতাদের সংগঠন বেসিসও এই তথ্য মানতে নারাজ। ইপিবির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯৩.৯৩ মিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়েছে। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৮২.০১ মিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি হয়েছে। যদিও সরকার এবং বিভিন্ন সংগঠন বরাবরই দাবি করে আসছে, ইপিবির দেয়া এই তথ্য কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা সফটওয়্যার ও সেবা পণ্যের রফতানির সামগ্রিক হিসাব নয়। এই হিসাবের বাইরে আউটসোর্সিং খাতের আয়, কলসেন্টার, মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনসহ অন্যান্য খাতের আয় রয়েছে, যা ইপিবির হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নেই। বরং সরকার মনে করে সফটওয়্যার রফতানিতে লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে দেশ। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ এবং সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতাগুলোর বিভিন্ন সংগঠনের হিসাবে, গত বছরেই ৮০০ মিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানি করেছে বাংলাদেশ। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ তা এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো যে তথ্য দেয় তার কোনটিই গ্রহণযোগ্য নয়। গত অর্থবছরে দেশে কোনও ধরনের সমস্যা হয়েছে বলে জানা নেই। যা হয়েছে তা ইতিবাচক। এ খাতে ব্যক্তিগত আয় বেড়েছে, আউটসোর্সিং থেকেও আয় বেড়েছে। ফলে কোনভাবেই রফতানি আয় কমেছে তা বলা যাবে না।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘জাপান ও আফ্রিকায় আমাদের একসেস বেড়েছে। সেখানে দেশের বাজার বড় হচ্ছে। ফলে সফটওয়্যার রফতানি আয় কমেছে তা বলার কোনও যৌক্তিক কোনও কারণ আমি দেখি না।’ মন্ত্রী বলেন, ‘সফটওয়্যার রফতানিতে ১০ শতাংশ প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণার পর থেকে এই খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন ও অগ্রগতি দেখেছি। ফলে এই খাতের নেতিবাচক তথ্য কোনভাবেই মানা সম্ভব নয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দেশ থেকে কেবল একসেঞ্জার চলে গেছে। এটাকে নেতিবাচক ধরলেও ইপিবির তথ্যকে মানা যায় না। একসেঞ্জার দেশের মধ্যে কাজ করত। তাদের পণ্য ও সেবা দেশেই ব্যবহার হতো। ফলে সফটওয়্যার রফতানির এই চিত্রকে স্বাভাবিক বলা যাবে না।’ মোস্তাফা জব্বার গত ২২ ফেব্রুয়ারি সফটওয়্যার মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘আমরা সফটওয়্যার তথা তথ্যপ্রযুক্তি রফতানিতে ৮০০ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছি। চলতি বছরের বাকি সময়ে এক বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যাব।’ প্রসঙ্গত, সরকারের টার্গেট ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন এবং ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য রফতানি করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারসহ বিভিন্ন পক্ষের ঘোষিত ৮০০ মিলিয়ন ডলার রফতানি আয় নিয়ে অনেকের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। কারণ, এই ঘোষণার সঙ্গে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাবের বিশাল ফারাক। এক বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার রফতানির টার্গেট কতটা বাস্তবসম্মত তা নিয়ে এরইমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ, সফটওয়্যার রফতানির যে আয়ের কথা বলা হয় তার তথ্য কিছুটা প্রাতিষ্ঠানিক, বাকিটা (বড় অংশ) অনুমান নির্ভর। প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুমানিক ধারণার যোগফলে ‘রফতানির পরিমাণ’ নিয়ে তাই বরাবরই সন্দেহ থেকে গেছে। অন্যদিকে সফটওয়্যার রফতানির কোনও ফরমাল (আনুষ্ঠানিক) গবেষণাও নেই। নেই কোনও প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য। যারা বলছেন, প্রকৃত রফতানির পরিমাণ আরও বেশি, তারা তার সঠিক কোন পরিসংখ্যানও দিতে পারছেন না। আর রফতানি আয়ের অর্থ যদি বৈধপথে দেশে না আসে তাহলে ওই পরিসংখ্যানেরও কোন ভিত্তি নেই। এতে দেশের কোন লাভ হবে না। সফটওয়্যার ও সেবাপণ্য নির্মাতাদের সংগঠন বেসিসের সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর জানান, ইপিবি যে হিসাব দেয় তার সঙ্গে ফ্রিল্যান্সার, সফটওয়্যার ডেভেলপার ও কল সেন্টারগুলোর সেবা রফতানি আয় যুক্ত করে ৮০০ মিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়। তিনি জানান, বেসিসের যে ইনফরমাল সার্ভে রয়েছে তাতে দেখা যায় সফটওয়্যার ও সেবা পণ্যের রফতানির পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, ‘বেসিস থেকে একটি ফরমাল সার্ভে করা হবে। ওই সার্ভের পরেই প্রকৃত চিত্র বোঝা যাবে।’ ইবিপি সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে দেশ থেকে সফটওয়্যার রফতানি হয়েছে প্রায় ১৯৩. ৯৩ মিলিয়ন ডলারের। ইপিবি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি রফতানি আয় ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
×