স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্যাগের মহিমায় দেশজুড়ে উদযাপিত হলো পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। এবারের ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে সব আয়োজন নিরাপদে অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ ঈদের জামাত ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ছিল সতর্ক নজরদারি। ঈদের দিন বুধবার কড়া নিরাপত্তায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদ-উল-আজহার প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল আটটায় শুরু হয় এ জামাত। এতে অংশ নেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ, মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্যবৃন্দ, রাজনীতিবিদ এবং উর্ধতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সর্বস্তরের মানুষ। এর আগে ঈদগাহে পৌঁছার পর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ও অন্যান্য কর্মকর্তারা স্বাগত জানান। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম মুফতী মাওলানা মুহাম্মদ এহ্সানুল হক ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন। নামাজ শেষে দেশের শান্তি ও অগ্রগতি, জনগণের কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর বৃহত্তর ঐক্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ১৫ আগস্টে শহীদ তার পরিবারের অন্যান্য সদস্য, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ এবং দেশের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সকল শহীদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।
ঈদের নামাজ আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। উল্লেখ্য, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আয়োজনে এই ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নারীদের ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা ছিল। ঈদের ময়দানে ছিল কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাব, পুলিশ, বিভিন্ন পর্যায়ের গোয়েন্দাসহ নিñিদ্র্র্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় ঈদগাহ ময়দান ও তার আশপাশের এলাকায়। নিরাপত্তার স্বার্থে জায়নামাজ ও মোবাইল ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে ময়দানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত কোরবানির এই ঈদ জামাতে মুসল্লিদের মধ্যে লক্ষ্য করা গেছে দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনা। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীর নানা প্রান্ত থেকে দল বেঁধে মুসল্লিরা আসতে থাকেন। সাদা পাঞ্জাবি পরে, সুগন্ধি মেখে, জায়নামাজ হাতে নানা শ্রেণী পেশার মানুষের উপস্থিতি ঈদগাহ ময়দানকে সুমোহিত করে তোলে। জাতীয় ঈদগাহ ছাড়াও রাজধানীজুড়ে বিভিন্ন মসজিদ ও খোলা ময়দানে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় নির্বিঘেœ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এদিকে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও যথাযোগ্য মর্যাদা এবং ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ঈদ-উল-আজহা। বন্দর নগরীর প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয় জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে। প্রধান জামাতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান নওফেল, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু, আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি মোসলেম উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। জমিয়তুল ফালাহ ছাড়াও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ১৬৫টি ঈদের জামাতের আয়োজন করা হয়। পুলিশ জানায়, প্রতিটি ঈদ জামাতকে ঘিরে ছিল কড়া সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। নামাজ শেষে পশু কোরবানির মাধ্যমে কামনা করা হয় আল্লাহর সন্তুষ্টি। ঈদ জামাত এবং মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছিল বিশেষ আয়োজন। এ বছরের ঈদ আমেজের মাত্রা ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। জাতীয় নির্বাচনের বছর হওয়ায় অনেক নেতাই একাধিক পশু জবাই করে নিজ নিজ এলাকায় স্থানীয় ঐতিহ্য মেজবানির আয়োজন করেন। এতে আপ্যায়িত হন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ মাঠ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় ঈদ-উল-আজহার জামাতও নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার অনুষ্ঠিত হলো ঈদ-উল-আজহার ১৯১তম জামাত। সকাল নয়টায় জামাত শুরু হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মুসল্লিদের এই জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা মুফতি হিফজুর রহমান খান। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
দেশের সবচেয়ে বড় এই ঈদগাহ ময়দানে নামাজ আদায় নির্বিঘ্ন করতে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছিল স্থানীয় প্রশাসন। মোতায়েন করা হয়েছিল র্যাব, বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্যসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের। মাঠের ভেতর ও বাইরে ছিল অনেক সিসি ক্যামেরা। পুরো মাঠ নজরদারির জন্য ছিল দুটি ড্রোন। নিরাপত্তার স্বার্থে কাউকে ছাতা বা কোন ধরনের ব্যাগ নিয়ে ঢুকতে দেয়া হয়নি ঈদগাহ মাঠে। শুধু পাতলা জায়নামাজ নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা। মুসল্লিদের যাতায়াতে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও করা হয়।