ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কথা রাখল দুই সিটি কর্পোরেশন ॥ দ্রুত বর্জ্য অপসারণে নগরবাসীর স্বস্তি, সন্তুষ্টি

পরিচ্ছন্ন নগরী

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৫ আগস্ট ২০১৮

পরিচ্ছন্ন নগরী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথা রেখেছে রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ হয়েছে কোরবানির বেশিরভাগ বর্জ্য। গুরুত্বপূর্ণ সড়কসহ অলিগলি ঘুরে এর প্রমাণও মিলেছে। সাধারণ মানুষও সিটি কর্পোরেশনের কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তবে সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করার আহ্বান জানানো হলেও তেমন একটা সাড়া মেলেনি এবারও। ঈদের পরদিন নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পশু জবাই করতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার কয়েকদফা বৃষ্টি হওয়ায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন নগরীর জন্য বেশ কাজে দিয়েছে। ঈদের দিন দুপুর ২টা থেকে কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। শুধু উদ্বোধন করেই ক্ষ্যান্ত ছিলেন না সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। থাকবেনই বা কি করে স্বয়ং মেয়র সাঈদ খোকন ঈদের দিন রাত থেকে নিজ কার্যালয়ে বসে পুরো কার্যক্রম মনিটরিং করেছেন। ফলে এবার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পুরো মহানগরী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়েছে। যা দেখে নগরবাসী অভিভূত। বিশেষ করে যারা ভ্রমণ পিপাসু। ছুটিতে ঘুরে বেড়াতে ভালবাসেন। তারাও বলছেন, সড়কে কোন দুর্গন্ধ নেই। আহাম্মদবাগের বাসিন্দা আরিফুল হক জানান, পত্রিকায় দেখেছি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হবে। প্রথমে বিশ্বাসই হয়নি। এখন চোখে দেখে মনে হয়েছে কথা নয়, কাজই প্রমাণ। কথা আর কাজে মিল থাকায় ভাল লেগেছে। খিলক্ষেতের বাসিন্দা কাজল জানালেন, বর্জ্য অপসারণে আমরা সন্তুষ্ট। কিছু অলি গলিতে এখনও দুর্গন্ধ রয়ে গেছে। পশুর রক্ত জমে থাকার কারণে দুর্গন্ধ হওয়ার কথা জানান তিনি। মতিঝিল, শাহবাগ, কমলাপুর, বিমানবন্দর, বনানী, খিলক্ষেত, হাউসবিল্ডিং, মোহাম্মদপুর থেকে শুরু করে ধানম-ি, কলাবাগান, সাইন্সল্যাব, শুক্রাবাদ, নিউমার্কেট, আজিমপুর, লালবাগ, ঢাকেশ্বরীসহ পুরো এলাকা চকচক করছে। কোথাও বর্জ্যরে স্তূপ চোখে পড়েনি। বর্জ্য অপসারণ করে পানি দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে সিটি কর্পোরেশন। লালবাগের পোস্তায় অন্য বছর ঈদের তিনদিন যাওয়া যেত না। সেখানে এখন মানুষ নির্বিঘেœ চলাফেরা করছে। কোথাও ময়লা নেই। লালবাগ এলাকার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রমের তদারকি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জোন-৩ এর সহকারী প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আজগর। তিনি বলেন, আমাদের কাজ শতভাগ শেষ। এখন যেখান থেকে যতটুকু বর্জ্য বের হচ্ছে আমরা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিচ্ছি। আমাদের ভারি যন্ত্রপাতিসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। লোকেরও ঘাটতি নেই। এবার কোথাও ময়লা দেখতে পারবেন না। পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির রোডের চিত্রও একই। এখানকার প্রতিটি গলিতে ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও ময়লা নেই। অন্য দিনের চেয়ে ঈদের সময় বেশি পরিষ্কার। পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম প্রসঙ্গে ডিএসসিসি’র অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপক খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজ শতভাগ শেষ করেছি। তারপরেও কোথাও কোন বর্জ্য থাকলে হটলাইনে জানালে আমরা পরিষ্কার করে দেব। ২৪ ঘণ্টায় ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ-সাঈদ খোকন ॥ গত ২৪ ঘণ্টায় ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করব। সেই কাজ অনেকটাই সম্পন্ন হয়েছে। আজ এবং কালও কোরবানি হবে। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বর্জ্য থাকবে, ততক্ষণ পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা মাঠে থাকবেন। বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টার পর বর্জ্য অপসারণ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ডিএসসিসি’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন, কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ প্রমুখ। সাঈদ খোকন বলেন ডিএসসিসির আওতায় গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৯০ ভাগ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্য আমরা ১৫ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করেছি। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য। বাকি পাঁচ হাজার টন বর্জ্য অপসারণের কাজ চলছে। তাই কাক্সিক্ষত ২০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ করে আমরা শতভাগ পরিষ্কার করে নগরবাসীকে পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দেব। খোকন বলেন, আমরা পশু জবাই দেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান করে দিয়েছিলাম। কিন্তু নগরবাসীর সেভাবে সাড়া পাইনি। আমরা আশা করছি, নগরবাসী এ বিষয়ে সচেতন হবেন। পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য নির্মাণ হচ্ছে আবাসিক ভবন ॥ রাজধানীর দুই সিটির অধীনে কাজ করছেন প্রায় সাড়ে ৭ হাজার নিবন্ধিত পরিচ্ছন্ন কর্মী। আর এলাকাভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় কাজ করছেন আরও প্রায় ৪ হাজার কর্মী। এসব পরিচ্ছন্ন কর্মীরা যাতে ভাল পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, সেজন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নির্মিত হচ্ছে আবাসিক ভবন। এসব আবাসিক ভবন তাদের নামে বরাদ্দ হলে অন্তত তারা আবাসন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য আলাদা ভবন নির্মাণ বিষয়ে অগ্রগতি হয়েছে উল্লেখ করে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন জানিয়েছেন, পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ধলপুর, লালবাগ ও গণকটুলীতে ছয়তলা বিশিষ্ট ৬টি ক্লিনার কলোনি নির্মাণ করে উদ্বোধন করা হয়েছে। এছাড়া গণকটুলিতে আরও ৬টি, মিরানজল্লা ক্লিনার কলোনিতে ৩টি এবং ধলপুরে ২টি ছয়তলা ভবন নির্মাণের কার্যক্রম চলমান আছে। তিনি বলেন, তাদের জন্য ইতোমধ্যে কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়ে হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর কর্তৃক ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী নিবাস নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১৩টি দশতলা বিশিষ্ট ভবনে সর্বমোট ১ হাজার ২১৮টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের চলতি অর্থবছরের বাজেটে পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে উত্তরের (ডিএনসিসি) প্যানেল মেয়র ওসমান গণি বলেন, গাবতলী সিটি পল্লীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য বহুতল বিশিষ্ট আবাসিক ভবন নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৭৮৪ জন পরিচ্ছন্ন কর্মীর জন্য ৪টি ১৫তলা আবাসিক ভবন নির্মাণ ও একটি স্কুল নির্মাণ করা হবে।
×