ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল লালমনিরহাট

নৌকার পালে হাওয়া, ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি ॥ নোয়াখালী

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ৯ আগস্ট ২০১৮

নৌকার পালে হাওয়া, ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি ॥ নোয়াখালী

গিয়াস উদ্দিন ফরহাদ, নোয়াখালী ॥ এক সময়ের বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত নোয়াখালীতে অনেকদিন ধরেই নৌকার পালে হাওয়া বইছে। জেলার সাতটি আসনেই আওয়ামী লীগ এখন শক্তিশালী। কয়েকটি আসন উল্টো নিজেদের ঘাঁটিতে পরিণত করেছে। সরকারের টানা দুই মেয়াদে প্রায় সাড়ে নয় বছরের ব্যাপক উন্নয়ন-সাফল্যের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চাইছে একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এই সাতটি আসনে বিজয়ের ধারা ধরে রাখতে। অন্যদিকে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল বিএনপি চাইছে নির্বাচনকে সামনে রেখে ঘুরে দাঁড়াতে, হারানো আসনগুলো পুনরুদ্ধার করতে। নির্বাচনের এখনও ঢের বাকি থাকলেও জেলার ছয়টি আসনেই নির্বাচনের দমকা হাওয়া বইছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে জমজমাট হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদের মতো হেভিওয়েট প্রার্থী ছাড়াও সম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের মন জয় করতে সার্বক্ষণিক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে জেলার ৯টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল। কে পাবেন দলগুলোর মনোনয়ন, বিষয়টি নিশ্চিত না হলেও সব সম্ভাব্য প্রার্থীই নিজেদের যোগ্য বলে উপস্থাপন করে নির্বাচনী এলাকার মাঠ-ঘাট, হাট-বাজারে পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন ছাপিয়ে স্ব স্ব দলের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। গত নির্বাচনে নোয়াখালীর ৬টি আসনেই বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা। নির্বাচিত হওয়ার পর চেষ্টা করেছেন নিজ নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করতে। তবে নির্বাচনকে সামনে রেখে অধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিতে কয়েকটি আসনে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব যেন পাল্টা দিয়ে বাড়ছে। জেলার রাজনৈতিক অভিজ্ঞ মহল মনে করছে, নির্বাচনের আগে যে দল অভ্যন্তরীণ কোন্দল-দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে পারবে ভোটের বিচারে তারা এগিয়ে থাকবেন। অন্যদিকে বিএনপি চাইছে ক্ষমতাসীন দলের কোন্দল-দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে কয়েকটি আসন বাগিয়ে নিতে। নোয়াখালী-১ (চাটখিল ও সোনাইমুড়ী আংশিক) ॥ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে প্রচার এখন তুঙ্গে। সবশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এইচ এম ইব্রাহিম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগ সরকার টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতা থাকায় এ আসনে প্রচুর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এতে দলটির জনসমর্থন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। দশম সংসদের মতো একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আসনটি নিজেদের দখলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এমপি এইচ এম ইব্রাহিম ছাড়াও এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম। বর্তমান সংসদ সদস্য এইচএম ইব্রাহিম জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অবহেলিত এ অঞ্চলের রাস্তা, কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিদ্যুত ও বেকারদের কর্ম সংস্থানসহ ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। পুনরায় মনোনয়ন পেলে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার পাশাপশি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখব। অপরদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম বিগত প্রায় দশ বছরে নিয়মিত এলাকায় যাতায়াত ও সভা সমাবেশ করেছেন। এলাকার রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজে তারও ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। দলীয় নেতাকর্র্মীদের বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতার পাশাপশি তিনি দুই শতাধিক পরিবারকে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করে তুলেছেন। তিনি জানান, গত প্রায় দশ বছর এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আসনটি তাকে উপহার দেব। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটে কেন্দ্রীয় সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জানান, বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনার ১১টি উপ-কমিটির অন্যতম যুব ও ক্রীড়া এবং সামাজিক সাংস্কৃতিক কমিটির আহ্বায়ক ছিলাম। নেত্রী মনোনয়ন দিলে নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করে এ আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করব। ইতোমধ্যে এলাকায় গিয়ে নেতাকর্মীদের নিয়ে কাজ করছি। অন্যদিকে এ আসনে বিগত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। বিএনপি থেকে তিনি একমাত্র প্রার্থী হবেন এটি অনেকটাই নিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই বিএনপি অংশ নেবে। তবে দলীয় চেয়ারপার্সনকে বাদ দিয়ে নয়। যতই বাধা আসুক না কেন বিএনপি নির্বাচন করতে প্রস্তুত রয়েছে। তবে আমি আমার এলাকায় যেতে পারি না। নেতাকর্মীরা সভা-সমাবেশ করতে পারে না। মামলা হামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের বাড়িছাড়া করা হচ্ছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এসএ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন আহমেদ। পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তাকে মনোনয়ন দিলে তিনি এ আসন থেকে ভোট করবেন এটি অনেকটা নিশ্চিত। জাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদফতর সম্পাদক মনির হোসেন, জাতীয় যুব জোটের সাংগঠনিক সম্পাদক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ সুমন ও চাটখিল উপজেলা জাসদের সভাপতি অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ একজন দলের প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা রয়েছে। এ ছাড়া বিকল্পধারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুখ ভোট করার সম্ভাবনা রয়েছে। নোয়াখালী-২ (সেনবাগ ও সোনাইমুড়ী আংশিক) ॥ গত নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট শিল্পপতি ও বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। গত প্রায় দশ বছরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় এখানে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এতে জনসমর্থনই বৃদ্ধি নয়, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় এখানে শক্ত ভিত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থিতার কারণে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশে জেলা কমিটি থেকে উপজেলা কমিটি গঠন করা হলেও দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের অবসান এখনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত এ বিরোধ অব্যাহত থাকলে, দ্রুত নিষ্পত্তি করা না হলে আগামী নির্বাচনের ফলাফলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে সাধারণ ভোটাররা মনে করছেন। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমসহ মোট পাঁচজন প্রভাবশালী নেতা মাঠে কাজ করছেন মনোনয়নের আশায়। তারা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও তমা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোঃ আতাউর রহমান ভুঁইয়া মানিক, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন আহম্মেদ এফসিএ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জাফর আহম্মেদ চৌধুরী। বর্তমান সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম জানান, সেনবাগে আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। গত প্রায় দশ বছরে সড়ক, ব্রিজ-কালভার্ট, হাট-বাজার, বিদ্যুত ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে উন্নয়ন হয়েছে তা বিগত বিএনপি সরকার কেন, বিগত কোন সরকাই করতে পারেনি। তাই আগামীতে নৌকার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। অর্থনীতিবিদ ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, গত ২০০৮ সালে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও তিনি এলাকা ছেড়ে যাননি। প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে নেতাকর্মীদের নিয়ে উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা করেছি। মুক্তিযোদ্ধা ও দুস্থদের মধ্যে কর্পোরেট সোস্যাল রিফান্ড থেকে অনুদান দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতাউর রহমান ভূঁইয়া মানিক জানান, প্রতি সপ্তাহে সেনবাগ পৌরসভাসহ সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছি, মহিলাদের নিয়ে উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা করেছি। ব্যক্তিগত তহবিল থেকে মসজিদ নির্মাণ, হতদরিদ্র পরিবারের মেয়েদের বিয়ের ব্যবস্থা করাসহ নানা সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করেছেন তিনি। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী লায়ন জাহাঙ্গীর আলম মানিক বলেন, তিনি দলের হয়ে নানা সামাজিক কাজকর্মের পাশাপাশি এ বছর থেকে এলাকার নারী শিক্ষা বিস্তারে একটি মহিলা কলেজ চালু করেছেন। তা ছাড়া এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগও করে যাচ্ছেন। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হচ্ছেন দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বিগত ৪ বারের সংসদ সদস্য জয়নাল আবদিন ফারুক। এক সময় এখানে বিএনপির নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী মফিজুর রহমানসহ কিছু নেতাকর্মী বিগত সময়ে ফারুকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তারা এখন কোণঠাসা। বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের অধিকাংশই ফারুকের পক্ষে থাকার পাশাপাশি কেন্দ্রে তার অবস্থান দৃঢ় হবার কারণে আগামী নির্বাচনে এ আসন থেকে জয়নাল আবদিন ফারুকই মনোনয়ন পাবেন বলে দলটির নেতাকর্মীরা নিশ্চিত। এ প্রসঙ্গে জয়নাল আবদিন ফারুক জানান, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার আমলে এলাকার কোন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ভাঙ্গা। মানুষজনের দুর্ভোগের শেষ নেই। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপির জয় নিশ্চিত। অপরদিকে জাতীয় পার্টি থেকে উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা হাসান মঞ্জু প্রার্থী হবেন। নির্বাচন করার জন্য তিনি এলাকায় দলের নেতা কর্মীদের গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভা করছেন। এ ছাড়া ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান এলাকাতে গণসংযোগ ও মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করছেন। নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) ॥ এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের গ্লোব গ্রুপ অব কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশিদ কিরণ। এমপি হয়ে এলাকার উন্নয়নে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকলেও বেগমগঞ্জে দৃশত কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে ১/১১ সময়ে তৎকালীন সেনা প্রধান মঈন ইউ আহমেদ তার পৈত্রিক নিবাস বেগমগঞ্জে হওয়ায় এ সময়ে তার ছোট ভাই মিনহাজ আহমেদ জাভেদও এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনেও রয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশী। বর্তমান সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ ছাড়াও এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিল্পপতি এটিএম এনায়েত উল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিনহাজ আহমেদ জাবেদ এবং চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র আকতার হোসেন ফয়সল। এ ব্যাপারে বর্তমান এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ জানান, বিগত ৫ বছর তিনি তার নির্বাচনী এলাকায় সড়ক, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা উন্নয়ন এবং বিদ্যুত বিতরণসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তিনি সরকারী অনুদান ব্যতীত নিজস্ব অর্থে ব্যাপক কাজ করেছেন। এ আসনটি এখন নৌকার শক্ত ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ একটি বড় দল এখানে নেতাকর্মীদের মান অভিমান থাকতেই পারে। কিছুটা বিভেদ যদি থেকেও থাকে তবে দলের নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী এটিএম এনায়েত উল্লাহও বিভিন্নভাবে দান-অনুদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাপক ভূমিকা পালন করছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান এনায়েত উল্লাহর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক মহাসচিব ও বর্তমান নোয়াখালী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ডাঃ এ বি এম জাফর উল্লাহ। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মিনহাজ আহমেদ জাভেদ এলাকায় একজন সৎ, নির্লোভ ও পরোপকারী মানুষ বলে পরিচিত। তিনি নেপথ্যে এলাকার উন্নয়নসহ মানুষের জন্য কাজ করে থাকেন। দলের অনেক নেতাকর্মীর কাছে একজন ভদ্রলোক হিসেবে পরিচিত। তিনিও তার সমর্থকদের নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেতে নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। মিনহাজ আহমেদ জাভেদ বলেন, অবহেলিত বেগমগঞ্জের জন্য কি করেছি তা এলাকাবাসী অবগত আছেন। আমি সব সময় মানুষের সুখ-দুখে পাশেই রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে এ আসনের দলের মনোনয়ন দেয় তবে বেগমঞ্জের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার চেষ্টা করব। একই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে তৎপরতা চালাচ্ছেন চৌমুহনী পৌরসভার মেয়র ও চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আক্তার হোসেন ফয়সল। দলীয় মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমরা প্রয়াত নানা জাতীয় শ্রমিক লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনিও গণমানুষের নেতা ছিলেন। তাই নানার মতো মানুষের পাশে থাকতে চাই। দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই ভোট করব, তবে নৌকার বাইরে কিছু করব না। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে নৌকার জয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। এদিকে এ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য বরকত উল্লাহ বুলুই বিএনপির একমাত্র প্রার্থী এটা অনেকটাই নিশ্চিত। যদি মামলাজনিত কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারেন সেক্ষেত্রে তার সহধর্মিণী শামিমা বরকত লাকী প্রার্থী হতে পারেন। এর পাশাপাশি বর্তমান বেগমগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির জাতীয় কমিটির সদস্য সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট আবদুর রহিম বিএনপি দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। মনোনয়নের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু জানান, বেগমগঞ্জের মাটি বিএনপির ঘাঁটি। আওয়ামী লীগ প্রতিহিংসার রাজনীতি করে বলে আমার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মিথ্যা ২০-২৫টি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হলে নির্বাচন করতে আমরা প্রস্তুত। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে আমরা জয়লাভ করব। অপরদিকে, এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় জাতীয় পার্টির সদস্য ও বেগমগঞ্জ উপজেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ফজলে এলাহী সোহাগ মিঞা মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। জাসদ থেকে সাবেক দুর্গাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জাসদ (রব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আবদুল জলিল চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে। নোয়াখালী-৪ (সদর ও সুবর্ণচর) ॥ এই আসনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে পর পর দুই বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি নোয়াখালী জেলা শহরসহ পুরো তার নির্বাচনী এলাকাকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত করে অনন্য নজির গড়েন। ফলশ্রুতিতে এ আসনে এখন আওয়ামী লীগের জোয়ার বইছে। জেলা শহরে এই আসনের প্রভাবে পুরো জেলার রাজনীতি অনেকটা সরকারী দলের আওতায় চলে গেছে। অপরদিকে এক সময়ে জেলা বিএনপির সভাপতি পরবর্তীতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান একজন ভাল সফল সংগঠক হলেও জেলার রাজনীতিতে সময় দিতে না পারায় পাশাপাশি দলের মধ্যে জেলা কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নোয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র হারুনুর রশিদ আজাদের সঙ্গে মতদ্বৈতার কারণে এখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন দু’ভাবে বিভক্ত। সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরী আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি পাড়া, মহল্লা, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দুর্গম চরাঞ্চলে গিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মাঝে ব্যাপক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে দলকে পুনর্গঠন ও শক্তিশালী করার কাজ শুরু করেছেন। দল গঠনের পাশাপাশি নিজেই তার ব্যক্তিত্ব দিয়ে দলের অবস্থান সুদৃঢ় করেছেন। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার নেতৃত্বে কাজ করায় এখানে কোন ধরনের গ্রুপিংয়ের সৃষ্টি হতে পারেনি। নির্বাচন বানচালের নামে বিএনপি-জামায়াত জোটের ক্যাডার আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে নিজ অর্থে প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে তৃতীয় তলার দৃষ্টিনন্দন দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন তিনি। তাই এই আসন থেকে সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। অন্যদিকে এই আসনে বিএনপিরও রয়েছে একক প্রার্থী। তিনি হলেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ শাহজাহান। দীর্ঘদিন ধরে নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তিনি এলাকার বিএনপির কাছে কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তবে দলটির নেতাকর্মীরা মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত থাকায় প্রচার চালাচ্ছেন অনেকটা ধীরগতিতে এবং গোপনে। এখন পর্যন্ত বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারের মাঠে রয়েছেন মো. শাহজাহান। এ ব্যাপারে মোঃ শাহজাহান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে এখানে শুধু নয় সারাদেশে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। মিথ্যা মামলায় সাজা দেখিয়ে কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে রেখে কোন নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। আর ৫ জানুয়ারির মতো প্রহসনের নির্বাচন হবে না। অপরদিকে, এই আসনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর তেমন কার্যক্রম নেই। তবে জাসদ ইনু থেকে এ আসনে জেলা জাসদের সাবেক সভাপতি এক সময়ের ছাত্রনেতা নুর আলম চৌধুরী পারভেজ দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন। জাতীয় পার্টি থেকে এখানে মনোনয়ন পেতে পারেন মোবারক হোসেন আজাদ। নোয়াখালী- ৫ (কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট) ॥ এই আসনটি জেলার ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। এ আসনে দেশের দুই বড় রাজনৈতিক দলের দুজন ভিআইপি ও প্রভাবশালী নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন। এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ আসনে তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এ আসন থেকে এ দুজন সিনিয়র নেতাই লড়বেন এটি নিশ্চিত করে বলা যায়। এখানে অন্য কোন প্রার্থী বা দলের তেমন কর্মকা- নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গত সাড়ে ৯ বছরে শুধু নির্বাচনী এলাকার চেহারাই পাল্টে দিয়েছেন। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে তার উন্নয়নের হাত পড়েনি। কোম্পানীগঞ্জের উপকূলীয় এলাকায় নদীভাঙ্গন রোধে ১৭৩ কোটি টাকা ব্যয়ে মুছাপুর ক্লোজার প্রকল্প বাস্তবায়ন, ৩২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নোয়াখালী জেলার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরালগঞ্জ সড়ক ও সেতু প্রকল্প, নোয়াখালী খাল পুনঃখনন বাস্তবায়নসহ বড় বড় কাজের পাশাপাশি স্কুল-কলেজ, মসজিদ, মন্দির, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টসহ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নমূলক কাজ করায় এ আসনে ওবায়দুল কাদেরের জনপ্রিয়তা এখন শীর্ষে। এ ছাড়া পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন সড়কের মতো বড় বড় প্রকল্প ওবায়দুল কাদেরের হাত ধরেই বাস্তবায়িত হওয়ায় সাধারণ মানুষ মনে করে, এলাকার উন্নয়নে তার কোন বিকল্প নেই। ফলে ওবায়দুল কাদের দলীয় নেতাকর্মী এবং সাধারণ মানুষের কাছে হয়ে উঠেছেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। আগামী নির্বাচনেও তিনি আবারও বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন বলেই এলাকার সাধারণ মানুষ মনে করেন। এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খিজির হায়াত জানান, বিগত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি ভোট আমাদের নেতা এবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় পাবেন। তিনি আমাদের সকলের অভিভাবক, বিগত সময়ে আমরা তাকে কাক্সিক্ষত ভোট না দিতে পারলেও এবার তাকে বিপুল ভোটে জয়ী করব। একই কথা জানালেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল। অন্যদিকে এ আসনের বিএনপির ভিআইপি প্রার্থী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের অনুসারীদের মতে, ক্ষমতায় থাকাকালীন মওদুদ আহমদ এলাকায় রাস্তাঘাট, অবকাঠামো উন্নয়ন ও বেকারদের পুনর্বাসনসহ অনেক উন্নয়ন করেছেন। আর এলাকায় বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের বিপুল ভোট রয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ নিয়ে মওদুদ আহমদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অবশ্যই অংশ নেবে। বিএনপি নির্বাচনের দল। তবে সে নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। আর আওয়ামী লীগ ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করে না। তারা বিচার বিভাগের সুনাম ক্ষুণœ করেছে। এদিকে এ আসনে জাসদ (ইনু) থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল হক বকশি। তিনি জানান, দলীয়ভাবে তাকে এই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, তবে জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে দল যে সিদ্ধান্ত দেয় তা তিনি মেনে নিয়ে কাজ করবেন বলে জানান। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) ॥ মেঘনা বেষ্টিত জেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নোয়াখালী-৬ আসন। আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে এ দ্বীপে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তৎপরতা শুরু করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রার্থীর ব্যানার, পোস্টার হাতিয়া দ্বীপের বিভিন্ন বাজার ঘাটসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শোভা পাচ্ছে। বর্তমানে এ আসনের সংসদ সদস্য হচ্ছেন আওয়ামী লীগের আয়েশা ফেরদৌস। তবে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন দল থেকে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর নাম শোনা যাচ্ছে। তারা হলেন- বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস, সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী, বিশিষ্ট শিল্পপতি ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনিযুক্ত সহ-সভাপতি মাহমুদ আলী রাতুল এবং ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ও নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম। বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌস একজন সদালাপী। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি জনপদে বিচরণ করেন। তাই এবারও তিনি মনোনয়ন পেতে কাজ করছেন। অপরদিকে আয়েশা ফেরদৌসের স্বামী মোহাম্মদ আলীও দলের হয়ে নিয়মিত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। তিনিও দলের কাছে মনোয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। মোহাম্মদ আলী এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০০৮ সালে তিনি মনোনয়ন পেলেও তার প্রতিপক্ষ মিথ্যা ঋণ খেলাপীর অভিযোগ এনে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে। এবার তিনি দল থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী শিল্পপতি মাহমুদ আলী রাতুল। রাজনীতিতে নবাগত হলেও ইতোমধ্যে তিনি হাতিয়ায় নিজের অবস্থান তৈরি করেছেন। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সাড়ে ৯ বছরে সারা দেশের উন্নয়ন করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে আমি হাতিয়াবাসীর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাব। সাবেক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা আমিরুল ইসলাম বিগত ২০১৪ সালের নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে হরিণ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন পরাজিত হন বর্তমান সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদৌসের কাছে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে প্রায় ৪০ হাজার ভোট পাই। আমি আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী কর্মী। এলাকার জনগণ আমার সঙ্গে আছে। দলীয় মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে আমি জয়লাভ করব। এদিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন লাভের দিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন দু’বার নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম। নির্বাচনী এলাকায় তাঁর ব্যক্তি ইমেজও যথেষ্ট। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে দাঁড়িয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। উপজেলা বিএনপির উল্লেখযোগ্য অংশ তাকে পুনরায় দলে ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। এ বিষয়ে প্রকৌশলী ফজলুল আজিম জানান, আমি হতিয়াবাসীর সঙ্গে আছি। বিগত দিনে আমার উদ্যোগে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। হাতিয়া মূলত একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপ, এ দ্বীপের ৬ লক্ষাধিক সাধারণ মানুষ উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত। যদি সুযোগ হয় তবে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকাবাসীর জন্য কাজ করব। ফজলুল আজিম ছাড়াও হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মো. আলাউদ্দিন আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। হাতিয়ায় বিএনপি দলীয় কর্মকা-ে তার উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিএনপির নেতা কর্মীরা বলেন, হাতিয়ায় ধানের শীষের অসংখ্য ভোটার রয়েছে।
×