ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বসেছে ১৯০ পাইল

পদ্মার বুকে উঠছে একের পর এক খুঁটি

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৪ আগস্ট ২০১৮

 পদ্মার বুকে উঠছে একের পর  এক খুঁটি

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, মাওয়া থেকে ফিরে ॥ পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। পদ্মার বুকে এখন একের পর এক খুঁটি উঠতে শুরু করেছে। যে কোন প্রান্ত থেকেই এখন সেতুর একটি অবয়ব স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পদ্মার প্রবল স্র্রোত উপেক্ষা করেই এখন ৩৩, ৩৪, ৩৫, ও ৩৬ নম্বর খুঁটি তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও সেতুর ১৪, ১৬, ১৭, ১৯, ও ২৮ নম্বর খুঁটি তৈরিতে বেজায় ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। তবে নতুন ডিজাইনে ৭টি করে পাইলে মাওয়া প্রান্তের ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ও ১১ নম্বর খুঁটির কাজ শুরু হচ্ছে ২-১ মাস পরে। মূল পদ্মায় এখন ১৬০টি পাইল পুরোপুরি বসে গেছে। আর ১৩টি পাইলের বটম শেকসন হয়েছে। আর মাওয়া তীরে প্রান্তের এক নম্বর খুঁটির ১৬টি পাইলের মধ্যে ১৪টিই সম্পন্ন হয়েছে। ওপারের জাজিরা তীরের সর্বশেষ ৪২ নম্বর খুঁটির ১৬টি পাইল হয়ে সেখানে খুঁটি উঠে স্প্যানও বসে গেছে। এ পর্যন্ত সেতুর ৩৭ থেকে ৪২ নম্বর খুঁটি পর্যন্ত ৫টি স্প্যান বসে এখন সেতু দৃশ্যমান হচ্ছে পৌনে ১ কিলোমিটার। এদিকে ৩৬ ও ৩৭ নম্বর খুঁটিতে ৬ষ্ঠ স্প্যান বসানোর জন্য ৩৬ নম্বর খুঁটির কাজ দ্রুত এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। তবে এটি সম্পন্ন হতে আরও সময় লাগবে। তাছাড়া এক সঙ্গে কয়েকটি স্প্যান বসানোর পরিকল্পনার কারণে স্প্যানগুলো নিয়েও কুমারভোগের বিশেষায়িত ওয়ার্কসপে ব্যস্ততা বেড়েছে। ‘৬ই’ নম্বর স্প্যানের এখন রংয়ের কাজ চলছে। এটি বসবে ৩৫ ও ৩৬ নম্বর খুঁটিতে। মাওয়া প্রান্তের ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর খুঁটি সম্পন্ন হওয়া ছাড়াও একের পর এক খুঁটি উঠতে শুরু করেছে। পাশাপাশি ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মূল সেতুর সঙ্গে দু’পারে সংযুক্ত আরও প্রায় তিন কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সেতুর কাজও সন্তোষজনকভাবে এগুচ্ছে বলে সেতু কর্তৃপক্ষ শুক্রবার জানিয়েছে। সর্বশেষ তথ্য সম্পর্কে দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা জনকণ্ঠকে জানান, সেতু তৈরির কাজ এখন সবখানেই যথাযথ গতিতে এগুচ্ছে। যা সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে। মাওয়া প্রান্তের সংযোগ সেতুর (ভায়াডাক্ট) ১৭২টি পাইলের ওপর ৩৭টি ক্যাপ হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১০টি ক্যাপ হয়ে গেছে। আর এই ১০ ক্যাপারে ওপরে খুঁটি উঠছে ৯টি। অপরপ্রান্তে জাজিরায় প্রায় দেড় কিলোমিটারেরও বেশি সংযোগ সেতুর ১৯৩টি পাইলের ওপর ৪২টি ক্যাপ হচ্ছে। তার মধ্যে ৩৩টি ক্যাপ সম্পন্ন। আর এই ক্যাপে খুঁটি উঠছে ১৫টি। যার ৩টি পুরেপুরি সম্পন্ন। এদিকে স্প্যানের ওপর বসানোর জন্য স্লাব তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। সেতুর নিচ তলায় রেলের জন্য রেলওয়য়ে বক্স স্লাব হয়েছে এ পর্যন্ত ৪শ’ ৮০টি। আর সেতুর ওপর তলায় সাধারণ যানবাহন চলাচলের জন্য রোড ওয়ে বক্স স্লাব হয়েছে ১৪টি। ২ মিটার চওড়া এবং ২২ মিটার লম্বর বিভিন্ন থিকনেসে ওপরে এবং নিচে ৩ হাজার ৫০টি করে এই স্লাব প্রয়োজন হবে। অন্যদিকে নদীতে ৪০ খুঁটিতে ২৬২টি পাইলের মধ্যে ১৬০টি এবং দু’তীরের দুই খুঁটির ৩২টির মধ্যে ৩০টি পাইল অর্থ্যাৎ মূল সেতুর ১৯০ পাইল স্থাপন হওয়ায় মধ্য দিয়ে ভরা বর্ষায়ও সেতুর কাজের অগ্রগতির সোনালী বার্তা দিয়ে যাচ্ছে। নদীতে স্টিল পাইল যা হ্যামার দিয়ে নদীর তলদেশে প্রবেশ করানো হচ্ছে। আর তীরে ৪২ ও ১ নম্বর খুঁটিতে বোরিং পাইল বসেছে। শ্রাবণের প্রবল বৃষ্টির পাশাপাশি প্রখর রোদ আর গরম। ওপরে নীল আকাশে মেঘের ভেলার ছুটাছুটি আর নিচে পদ্মায় প্রবল স্র্রোত আর আর আছড়ে পড়া ঢেউ। এরই মাঝে সেতু তৈরির ভাড়ি ভাড়ি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের শব্দের ছন্দ মিলে একাকার। মোদ্দাকথা এই রোদ বৃষ্টির খেলার মধ্যেই মাওয়া-জাজিরায় সেতুর মজবুত ভীত তৈরি কাজ যেন আরও বেশি গতি পাচ্ছে। দেশী-বিদেশী কয়েক হাজার প্রকৌশলী, কর্মকর্তা ও শ্রমিক দিনরাত অবরিমা কাজ করে যাচ্ছে।
×