ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

শাহবাগে সমাবেশ

সড়ক পথে মানুষ হত্যা বন্ধে নাগরিক সমাজের ২১ দফা

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৪ আগস্ট ২০১৮

  সড়ক পথে মানুষ হত্যা বন্ধে নাগরিক সমাজের ২১ দফা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাস্তায় মানুষ হত্যা বন্ধে এবার নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ২১ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। তারা বলছে দুর্ঘটনার নামে সড়ক পথে মানুষ হত্যা বন্ধ, হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠা এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। কারণ রাস্তায় দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর পেছনে পরিবহন সেক্টরের অধিক মুনাফা, নৈরাজ্য এর পেছনে মূল কারণ। দুর্ঘটনায় যেসব মানুষ মারা যাচ্ছে এটা দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকান্ড বলাই সঙ্গত। শুক্রবার বেলা ১১টায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে নাগরিক সমাজের আয়োজনে এক নাগরিক সমাবেশ থেকে এসব দাবি জানানো হয়। নাগরিক সমাবেশে ৩২টি সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশে অংশ নিয়ে বক্তারা বলেন, দেশের সড়কপথ এখন এক আতঙ্কের নাম। উদ্বেগের মধ্যে নিপতিত সারাদেশ। অব্যাহতভাবে সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্র-শিক্ষকসহ সকল শ্রেণী পেশার মানুষ মারা যাচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ মৃত্যুর মিছিল থামার কোন সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না। স্বল্প সময়ে অধিক উপার্জনের উদ্দেশে সড়ক পরিবহন নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী সদা ব্যস্ত। সমাবেশ থেকে তারা সড়ক পথে মানুষ হত্যা বন্ধে ২১ দফা দাবিনামা তুলে ধরেন। এসব দাবিনামার মধ্যে রয়েছে নিহতদের পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ প্রদান, দুর্ঘটনার জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা, সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্তদের আচরণ দায়িত্বশীল করা, শিক্ষার্থীদের নিরাপদে যাতায়াতের জন্য প্রতিটি কমিউনিটিতে সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে যাতে প্রতিদিনই তাদের প্রধান সড়ক পার হতে না হয়। এছাড়া চলমান আন্দোলনে প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করা, মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর যুগোপযোগী সংশোধনী ও বাস্তবায়ন করা, পথচারী ও অযান্ত্রিক যানে নিরাপদে চলাচলের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা, উল্টোপথে গাড়ি চালানো বন্ধ করা, যথাযথভাবে ও দুর্নীতিমুক্ত প্রক্রিয়ায় বিদ্যমান সড়কপথ পরিচালনা ও মেরামত করা, ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের নিষিদ্ধ ও শাস্তি প্রদান এবং হেলপারদের দিয়ে গাড়ি চালানোয় সাজার বিধান চালু করা, পরিবহন মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা এবং অপরাধের ভিত্তিতে শাস্তির বিধান চালু করা, ত্রুটিযুক্ত ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ করা, এ বিষয়ে ব্যর্থ বা অনাগ্রহী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা, গাড়ি চালকদের ট্রিপের পরিবর্তে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করা, সড়ক ব্যবহারকারী সকলের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা, যানবাহনের গতি নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা, বিআরটিএ’কে দালাল ও দুর্নীতিমুক্ত এবং কার্যকর করা, রেল ও নৌ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা এবং সড়ক নির্ভরতা কমানো, প্রশিক্ষিত, দক্ষ চালক তৈরি করতে প্রতিটি জেলায় প্রশিক্ষণ একাডেমি চালু করা, যাত্রী, যানবাহনের মালিক, চালক, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকলের সহযোগিতায় সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে মালিকপক্ষ থেকে নিয়োগপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং পরিবহন ব্যবস্থা মনিটরিং করার জন্য নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি সমন্বয়ে স্থানীয় ভিত্তিক তদারকি কমিটি গঠন করতে হবে। নাগরিক সমাজ আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ডক্টরস ফর হেলথ এন্ড এনভায়রনমেন্ট সভাপতি অধ্যাপক আবু সাঈদ, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরামের সভাপতি হাফিজুর রহমান, জনকল্যাণ সংস্থার শিবলী আনোয়ার, সিপিডির সিনিয়র ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার সভানেত্রী ফরিদা আক্তার, পুরান ঢাকা পরিবেশ উন্নয়ন ফোরামের আহ্বায়ক মোঃ সেলিম, সচেতন নগরবাসীর সভাপতি জি এম রুস্তম আলী, বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব, বেসরকারী সংস্থা ‘ব্রতী’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমীন মুরশিদসহ প্রমুখ।
×