ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চিত্তরঞ্জন দাসের ‘কপোতাক্ষের হাসিকান্না’র প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩০ জুলাই ২০১৮

 চিত্তরঞ্জন দাসের ‘কপোতাক্ষের হাসিকান্না’র প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাইকেল মধুসূদন দত্তের সনেটের সুবাদে বাঙালীর কাছে চিরচেনা কপোতাক্ষ নদ। নিজের অজান্তেই যেন কপোতাক্ষ নদের সঙ্গে গড়ে উঠেছে আত্মিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্ককে এবারের উপন্যাসের পাতায় মেলে ধরেছেন লন্ডন অভিবাসী লেখক চিত্তরঞ্জন দাস। উপন্যাসে উঠে এসেছে কপোতাক্ষের দুই পারের জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা, প্রেম-ভালবাসা, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, আশা-হতাশার অনুপুঙ্খ। বর্ণিত হয়েছে ওই জনগোষ্ঠীর বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবন-যাপন, আচার-অনুষ্ঠান, পালা-পার্বণসহ জীবনজাত সংস্কৃতি। জয়শঙ্করের কল্পনার পথ ধরে উঠে এসেছে সমকালীন কপোতাক্ষের জীবন যন্ত্রণা তার অববাহিকায় বসবাসরত মানুষের হাসিকান্না। জীবন আশ্রিত ‘কপোতাক্ষের হাসিকান্না’ শীর্ষক উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে আগামী প্রকাশনী। রবিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হলে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও লেখক আবদুল গাফ্্ফার চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ। আলোচনায় অংশ নেন অন্যপ্রকাশের প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম ও অধ্যাপক সুশান্ত সরকার। কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তৃতা করেন আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি। প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশের সমাজ ব্যবস্থা বদলে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী বলেন, একসময় বাংলাদেশ ছিল বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশ। স্বাধীনতার পর এক ধর্মের দেশে পরিণত হয় এই রাষ্ট্র। বর্তমানে এককেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আগে হিন্দু ধর্মের মানুষরা আদাব বা নমস্কার জানাতো এবং মুসলমান আসসালামু আলাইকুম বলত। কিন্তু এখন জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আসসালামু আলাইকুম বলে। ধর্মীয় চাপের কারণেই এমনটা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের আগে পাকিস্তান আমলেও এমনটা ছিল না। এক ধরনের একরৈখিক সামাজিক সংস্কৃতি বিস্তার লাভ করায় নিজস্ব সংস্কৃতির বিকাশ হচ্ছে না। একইভাবে সাহিত্য থেকেইও বিলুপ্ত হচ্ছে সংখ্যালঘু শ্রেণী। আমাদের সাহিত্যিকরা সংখ্যালঘু চরিত্র সৃষ্টি করছেন না। যদিও আমি তেমনভাবে সাহিত্যের খোঁজ রাখি না। আমার জীবনকে দুই ভাগে ভাগ করলে সাহিত্যের জীবনটা গত জন্ম। আর এখনকার জীবনটা সাংবাদিকের। উপন্যাসটির মূল্যায়নে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বলেন, বাংলা সাহিত্যে নদী নিয়ে উপন্যাস লেখা খুবই কঠিন। কারণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ ও অদ্বৈত মল্লবর্মণের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, অন্য কেউ নদী নিয়ে লিখলে সেটাকে খুব তীক্ষèভাবে দেখা হয়। সেক্ষেত্রে চিত্তরঞ্জন দাসের উপন্যাসটিও সেই অনুভবের বাইরে নয়। এ আখ্যানের মাধ্যমে নদীর সূত্রে মূর্ত হয়েছে দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপট। পাঠক হিসেবে চরিত্রগুলো আমাকে আকৃষ্ট করেছে। লেখার রীতিটাও সুন্দর হয়েছে। সেই সঙ্গে নদীর সূত্র ধরে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক সময়। সেই বিবেচনায় বিষয়, ঘটনা ও চরিত্রের জায়গা সফলভাবে চিত্রিত হয়েছে উপন্যাসটি। চারু পিন্টুর প্রচ্ছদে আঁকা ১১২ পৃষ্ঠার উপন্যাসটির মূল্য রাখা হয়েছে ২৫০ টাকা। শ্রাবণসন্ধ্যায় শিল্পকলায় বর্ষামঙ্গল ॥ প্রতিদিনই ঝরছে বৃষ্টি। শ্রাবণের বারিধারায় প্রকৃতিতে ছড়িয়েছে সজীবতা। এমন সময় বর্ষাবন্দনার আয়োজনগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয়। রবিবার শ্রাবণসন্ধ্যায় বর্ষামঙ্গল শীর্ষক তেমনই এক আয়োজন অনুষ্ঠিত হলো শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে। পরিবেশিত হয় বর্ষানির্ভর নৃত্য-গীত ও যন্ত্রসঙ্গীত। শিল্পকলা একাডেমি ও সরকারী সঙ্গীত কলেজের উদ্যোগে নাট্যশালা মিলনায়তনে ছিল ‘বৃষ্টির পদাবলি’ শিরোনামে বর্ষার গানের অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন। বিশেষ অতিথি ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন ও মহাপরিচালক অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সরকারী সঙ্গীত কলেজের অধ্যক্ষ কৃষ্টি হেফাজ। মনিরউদ্দীন ইউসুফের জন্মশতবর্ষের আলোচনা ॥ সৃজনশীলতার ভুবনে বহমুখী প্রতিভায় উজ্জ্বল এক কবি মনিরউদ্দীন ইউসুফ। কবিতা রচনায় অনায়াস তাঁর বিচরণ। তবে সৃষ্টিশীলতার ভুবনে কবিতার পাশাপাশি সমান্তরালে লিখেছেন উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ ও কিশোরসাহিত্য। অনুবাদেও রেখেছেন অনন্য এক কৃতিত্বের স্বাক্ষর। তাঁর মাধ্যমেই প্রথম বাংলায় অনূদিত হয় পারস্যের মহাকবি ফেরদৌসীর বিশ্বখ্যাত মহাকাব্য ‘শাহনামা’। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই কথাশিল্পীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে রবিবার বিকেলে তাঁর পাঁচটি অনূদিত কাব্যগ্রন্থের ওপর অনুষ্ঠিত হলো আলোচনাসভা। রাজধানীর বাংলামোটরের বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে মনিরউদ্দীন ইউসুফ জন্মশতবর্ষ জাতীয় উদ্্যাপন পরিষদ। আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন জাতিসত্তার কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকার ইরান দূতাবাসের কালচারাল কাউন্সিলর সৈয়দ মূসা হোসেইনী। ‘সুধী-দৃষ্টিতে সাবির দর্শন’ গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও সংগঠক সাবির আহমেদ চৌধুরী। একাধারে তিনি ভাষাসংগ্রামী, শিক্ষাবিদ, কবি ও গীতিকার। তার লেখা বইয়ের কুড়িটি। এই কীর্তিমান মানুষটির জীবন, কর্ম ও দর্শন নিয়ে রচিত হয়েছে ‘সুধী-দৃষ্টিতে সাবির দর্শন’ শীর্ষক গ্রন্থ। বইটির সম্পাদনা করেছেন এ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও এম আর মাহবুব। বইটি প্রকাশ করেছে ভাষা-আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর। শনিবার বিকেলে সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের সেমিনার হলে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
×