ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে লুটেপুটেই খাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ জুলাই ২০১৮

 বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসতে পারলে লুটেপুটেই খাবে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এতিমের টাকা আত্মসাত করে খালেদা জিয়া জেলে আছেন। যারা এতিমের অর্থের লোভ সামলাতে পারে না তারা কিভাবে দেশ চালাবে? ব্যক্তিস্বার্থের রাজনীতি দেশকে কিছু দিতে পারে না। জনকল্যাণে রাজনীতি করলে দেশকে কিছু দেয়া যায়, আওয়ামী লীগ তা করে দেখিয়েছে। শুক্রবার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের নেতারা গণভবনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ব্যক্তিস্বার্থে যারা রাজনীতি করে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের আশ্রয়দাতা বিএনপির দুর্নীতি ও দুঃশাসনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, এই দলটির প্রতি জনগণের কোন আস্থা নেই। যারা অতীতে লুটপাট করেছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে আবারও তারা লুটেপুটেই খাবে এবং শুধু নিজেদের ভাগ্য গড়বে। স্বেচ্ছাসেবক লীগকে তৃণমূলে সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে নৌকার জন্য ভোট চাওয়ারও নির্দেশনা দেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা গণভবনে যান সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানাতে। শুরুতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ব্যাজ পরিয়ে দেন সংগঠনের নেতারা। প্রথমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। পরে সাংগঠনিক নেত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার নেতারা। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যক্তি স্বার্থের রাজনীতি দেশকে কিছু দিতে পারে না, নিজেরা নিতে পারে। কিন্তু ইতিহাস তাদের ক্ষমা করে না। কিন্তু রাজনীতি যদি হয় জনস্বার্থে ও জনগণের কল্যাণে তাহলে দেশকে কিছু দেয়া যায়। তা আমরা প্রমাণ করেছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম বাংলায় পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আওয়ামী লীগ সরকারে এসে জনগণের কল্যাণে যে কাজগুলো করেছে, দেশের উন্নয়ন করেছে সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরার সঙ্গে সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকা মার্কায় সবাইকে ভোট চাইতে হবে। কারণ নৌকা দেশের মানুষকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। নৌকা দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছে। নৌকা উন্নতি দেবে, সমৃদ্ধি দেবে। কারণ দুঃখের সময় থেকে সুখের সময় থাকলে জনগণ সবকিছু তাড়াতাড়ি ভুলে যায়। এ জন্য জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- ও গৃহীত কর্মসূচীগুলো তুলে ধরার জন্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় প্রধানমন্ত্রী আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, বাবা-মাসহ পরিবারের সবাইকে হারিয়ে দেশে ফিরেছি। কারণ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াই ছিল একমাত্র লক্ষ্য। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে গত নয় বছরে যেসব উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়ন করেছে তা তৃণমূলের মানুষের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গ্রামের মানুষও শহরের নাগরিক সুবিধা পাবে। এ সময় তিনি তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সংগঠন গড়ে তুলে জনগণের সেবা করার নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জামায়াত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করলেও তারা শত শত কোরআন শরীফ পুড়িয়েছে। ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে কলেজছাত্রী কেউ রক্ষা পায়নি তাদের আগুন সন্ত্রাসের হাত থেকে। তাই বিএনপি-জামায়াতের ওপর দেশের মানুষের কোন আস্থা নেই। এটা এখন প্রমাণ হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, তাদের অত্যাচার-নির্যাতন থেকে এদেশের কেউ রক্ষা পায়নি। এমনকি এদের বুদ্ধিজীবীরা জয়কেও পর্যন্ত হত্যার চেষ্টা করেছে। তবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবার মানুষের মনে আস্থা বিশ্বাস ফিরে এসেছে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা- ও দুঃশাসনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির দুর্নীতি, মানি-লন্ডারিং- এটা তো বাংলাদেশে বলা লাগে না, সুদূর আমেরিকাতেও প্রমাণিত। খালেদা জিয়াকে ‘মিথ্যা মামলায়’ কারাগারে আটকে রাখার যে অভিযোগ বিএনপি করে আসছে, তার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে খালেদা জিয়া জেলখানায়। আমরা তো তাকে রাজনৈতিকভাবে গ্রেফতার করিনি। তাহলে তো ২০১৫, ২০১৪ বা ২০১৩ সালেই অগ্নিসন্ত্রাসের সময়ই করতামও। তিনি বলেন, ১০ বছরেরও বেশি সময় আদালতে মামলা চললো, বিএনপির এত বাঘা বাঘা আইনজীবী প্রমাণে ব্যর্থ হলো যে, খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাত করেননি। কাজেই আমাদের কাছে মুক্তির দাবি করে লাভ কী? আমরা তো কিছুই করতে পারব না। বিএনপির দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) এতিমের টাকা মেরে খেয়ে আদালতের রায়ে জেলে গেছেন। এটা তো আদালতের ব্যাপার, আদালতেই এর সমাধান হবে। তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় এসে জনগণকে কিছুই দিতে পারবে না। তারা লুটে নিতে পারে, লুটে খেতে পারে; ক্ষমতায় যখন ছিল, তখন তাই করেছিল। আবার যদি কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারে ওই লুটেই খাবে; দেশের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক লক্ষ্য তুলে ধরে দলটির প্রধান শেখ হাসিনা বলেন, আমার লক্ষ্য একটাই, বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য গড়া, নিজেদের না। আমরা নিজেদের ভাগ্য গড়তে রাজনীতি করি না। আমরা এটুকুই চাই, বাংলাদেশের ভাগ্যের পরিবর্তন হোক। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণের পর হত্যার ষড়যন্ত্র করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) দুর্নীতির মাধ্যমে এতটাকা বানিয়েছিল যে, আমেরিকার যে গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই’র একজন অফিসারকে তারা কিনে ফেলল, জয়কে অপহরণ এবং হত্যা করার জন্য। যা আবার ধরা পড়ল সেই এফবিআই-এরই হাতে। তিনি বলেন, বিএনপির যে নেতা এই কাজ করেছিল সে ধরা পড়ার পর তার বিচার হলো এবং সেখানে সেই নেতার শাস্তি হয়েছে। তিনি বলেন, সেই মামলার রায়ে বেরিয়েছে- খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা মাহমুদুর রহমান এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবী শফিক রেহমান অর্থ-পরামর্শ দিয়ে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, এই বিষয়ে এই দু’জনের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। তাদের প্রকৃত চেহারা ও তারা যে কত টাকা পয়সার মালিক সেটা দেশের জনগণ এখনো বুঝতে পারেনি। তিনি বলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, সে কিন্তু কোন সাংবাদিক না। সে একজন ইঞ্জিনিয়ার। পরবর্তীতে সে সংবাদপত্র কিনে হয়ে গেল সাংবাদিক তথা ইঞ্জিনিয়ার সাংবাদিক। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে বিদ্যুত খাতের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এই মাহমুদুর রহমান কিন্তু খালেদা জিয়ার বিদ্যুত ও জ্বালানি উপদেষ্টাও ছিলেন। এই ধরনের উপদেষ্টা থাকলে বিদ্যুত হ্রাস পাবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তিনি বলেন, বিএনপির যে নেতা এই ষড়যন্ত্রের কারণে ধরা পড়েছে সে প্রকাশ্যেই এটা স্বীকার করেছে এবং এমনও বলেছে যে, দরকার হলে বের হয়ে এসে আবারও একই কাজ করব। কাজেই এদের জিঘাংসা এবং অপকর্মের চিহ্ন সব জায়গায় আছে। আমাদের দেশের অনেকেই জানে না, এরা কত রকম নোংরা কাজ করতে পারে। ২০০৮ সালে জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার পর আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় এলে তার সরকার এই বর্তমান সময় পর্যন্ত মেয়াদে সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশের হারানো সম্মানকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে কারও কাছে হাত পেতে আমাদের চলতে হয় না। আমাদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর শতকরা ৯০ ভাগ আমাদের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন আমরা করেছি। আজকে বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোলমডেল। ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এমন বাংলাদেশ গড়তে চাই যেখানে প্রতিটি গ্রাম হবে শহর। গ্রামের জনগণ নগরের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা গ্রামে বসেই পাবে। যেখানে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করতে আগামী ২০২১-২০৪১ মেয়াদী নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নয়, বাংলাদেশের জন্য আমরা শতবর্ষ মেয়াদী ডেল্টা প্লান করেছি। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মোল্লা মোঃ আবু কাওসারও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। এই দিনটি প্রধানমন্ত্রীর প্রথম সন্তান এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন হওয়ায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা মুহুর্মুহু করতালি এবং স্লোগানের মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ সজীব ওয়াজেদ জয়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্মদিন উপলক্ষে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কাটেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে নানা আয়োজনে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। কর্মসূচীর মধ্য ছিল শুক্রবার সকাল ৬টায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে দলীয় ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন। এছাড়া সকাল সাড়ে ৮টায় ধানম-ি বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন সংগঠনের নেতারা।
×