ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল যশোর

আওয়ামী লীগ ৬ আসন ধরে রাখতে আর বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৩ জুলাই ২০১৮

  আওয়ামী লীগ ৬ আসন ধরে রাখতে আর বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ থেকে ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে অন্যান্য স্থানের মতো শস্যভান্ডার খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলাতেও বেজে উঠেছে আগাম ভোটের ডামাডোল। কে হচ্ছেন কোন্ দলের প্রার্থী তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক সচেতন মহলে। নওগাঁর ৬ সংসদীয় আসনেই নির্বাচনী উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই ছয়টি আসনই দখলে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। তাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তাদের সব আসন এবারও ধরে রাখতে এবং হারানো আসন পুনরুদ্ধারে নির্বাচনী মাঠে বিএনপি এখন মুখোমুখি। এদিক থেকে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিএনপিতে অধিকাংশ আসনেই প্রার্থীর ছড়াছড়ি। তবে দু-একজন বিতর্কিত এমপির কর্মকা-ের জন্য কোন কোন আসনে নতুন মুখ প্রত্যাশা করছে তৃণমূলের নেতারা। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে এলাকা। এখন থেকেই মানুষের মুখে মুখে আলোচিত হচ্ছে নির্বাচন ও প্রার্থীদের চরিত্র নিয়ে। কোন প্রার্থী ভাল, কে সরকারের বরাদ্দ লুটপাট করেছে, কে এলাকার মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবে পাশে থেকেছে, কারা তৃণমূল নেতাদের বঞ্চিত করে দলকে আত্মীকরণ করেছে- ইত্যাদি বিষয় নিয়ে এলাকার চা-স্টল, হোটেল রেস্তরাঁ, রিক্সাস্ট্যান্ডসহ হাটে-বাজারে এমন আলোচনাই মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। তবে জেলার ৬ আসনেই লড়াই হবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে। জেলার ৬ আসনে আওয়ামী লীগের কিছু অত্যুৎসাহী নেতাকর্মীর (হাইব্রিড) দাপটে ত্যাগী নেতাকর্মীরা কোণঠাসা। ফলে ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করায় এমপিদের ওপর নাখোশ তারা। কোন কোন আসনে নতুন মুখ প্রত্যাশা করছে তৃণমূল নেতাকর্মীরা। এরপরও উভয় দলেরই বিজয় নিশ্চিত করবে জনপ্রিয়তার নিরিখে দলীয় মনোনয়ন দেয়ার ওপর। নওগাঁ-১ (সাপাহার-পোরশা-নিয়ামতপুর) ॥ অতীতে আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও বিগত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদার বিপুুল ভোটের ব্যবধানে তিনবারের নির্বাচিত বিএনপির এমপি ডাঃ ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে আসনটি তাদের দখলে নেন। গত নির্বাচনেও দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হন সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় দলকে সুসংগঠিত করা ছাড়াও ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন তিনি। তিনি এলাকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এবারও তিনি এই আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী। এলাকার নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ তাকে ফের বিজয়ী করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। একসময়ের অবহেলিত এই আসনে সাধন চন্দ্র মজুমদার জাতির জনকের আদর্শে ও জননেত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় যে উন্নয়ন সাধন করেছেন, তা এলাকাবাসীকে মুগ্ধ করেছে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সাধন মজুমদারকে আবারও এমপি হিসেবে দেখতে চায় এলাকাবাসী। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন একরকম নিশ্চিত হলেও আসনটি বিএনপির প্রার্থীর ছড়াছড়ি। বিএনপি থেকে নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি ডাঃ ছালেক চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুন নূর, পোরশা উপজেলা বিএনপির সাবেক সম্পাদক মাসুদ রানা, জাতীয় পার্টির আকবর আলী কালু নিজ নিজ দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদ হতে সাপাহার উপজেলার আদিবাসী নেতা মঙ্গল কিস্কু, ইসলামী আন্দোলনের (ইসা) পোরশা উপজেলার সাবেক সভাপতি আলহাজ মোস্তাফিজুর রহমান, বর্তমান সভাপতি মৌলানা ওমর আলী ও নিয়ামতপুর উপজেলা ইসার নেতা মৌলানা রেজাউল করিমের নামও শোনা যাচ্ছে। তারা সকলে এখন দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে লবিংসহ মাঠ পর্যায়ে কর্মিসভা, গণসংযোগ, প্রচারে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। নওগাঁ-২ (পতœীতলা-ধামইরহাট) আসন ॥ পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২ আসন। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ এবং আসনটি পুনরুদ্ধারে বিএনপি উভয় দলই মরিয়া। রাজনৈতিক কারণে নওগাঁ জেলার ৬টির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আসন অন্যতম সীমান্তবর্তী বরেন্দ্রভূমি অধ্যুষিত পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-২। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিকল্প ধারা ও বাসদ থেকে একক প্রার্থী থাকলেও আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাপার একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শহীদুজ্জামান সরকার বাবলু প্রথমবার এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ আসনে ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপির প্রার্থী শামসুজ্জোহা খানের কাছে পরাজিত হলেও নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দ্বিতীয়বার বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। এরপর ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে তিনি বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপের দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকায় করেছেন ব্যাপক উন্নয়ন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে নিশ্চিত। দল মনোনয়ন দিলে তিনি আগামীতে আবারও আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে আনতে সক্ষম হবেন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন। তবে শহীদুজ্জামান সরকার ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী হয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ড. আখতারুল আলম ও কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আবদুর রশিদ। ইঞ্জিনিয়ার ড. আখতারুল আলম বিভিন্ন উৎসব, শীত, বিপদে-আপদে, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে সহায়তার হাত সম্প্রসারিত করে চলেছেন। তিনিও মনোনয়ন পেলে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবেন বলে দাবি করেন। অপরদিকে এ আসন থেকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য সামসুজ্জোহা খান, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী, নওগাঁ জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লিটনও এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে জানান। জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে নওগাঁ জেলা কমিটির সহ-সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য বিএসএ হুমায়ন কবির চৌধুরী, জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক আবিদা আক্তারও আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এছাড়া বিকল্প ধারা থেকে যুগ্ম মহাসচিব আবদুর রউফ মান্নান ও বাসদ থেকে দেবলাল টুডু নির্বাচন করতে চান। নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসন ॥ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নওগাঁ-৩ আসনে জোট ও মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পদচারণায় বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। সভা সমাবেশ, গণসংযোগ, পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমে এসব প্রার্থী নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। এ আসনের বর্তমান আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আলহাজ ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে এই আসনে রাজনীতিতে ততই নতুন মাত্রা যোগ হচ্ছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছে কদর বাড়ছে তৃণমূল নেতাকর্মীর। এই আসনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এখন নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা জানান, বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকার রোল মডেল। তাই বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করতে আওয়ামী লীগের বিকল্প নেই। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতায়ন, রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ দেশের টাকায় পদ্মাসেতু নির্মাণ করে দেশের উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দলের হাইকমান্ড যাকে যোগ্য মনে করে মনোনয়ন দেবেন, তাঁর পক্ষেই সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএমডিএর চেয়ারম্যান আলহাজ ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বদলগাছীর সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল এবং নওগাঁ জেলা বিএনপির সদস্য আলহাজ রবিউল আলম বুলেট। জোট ও মহাজোটের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর বাইরে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ও নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন নির্বাচন করতে চান। নওগাঁ-৪ (মান্দা) আসন ॥ এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এলাকার মাটি ও মানুষের নেতা বর্তমান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রমাণিক। বার্ধক্য ভর করলেও এখনও এলাকাই জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন তিনি। তবে এবার এই আসনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের হিড়িক পড়েছে। দুদলেই অন্তত দুডজন মনোনয়ন প্রত্যাশী এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামানিক একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, দলীয় সূত্রে এমনটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে বাধ্যক্যজনিত কারণে তিনি মনোনয়ন পাবেন কিনা এমন দোটানাতে রয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট আব্দুল মান্নান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল লতিফ শেখ ও ব্রহানী সুলতান মাহমুদ গামা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে গ্রামে গ্রামে পাড়ায়-মহল্লায় প্রচার শুরু করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান দীর্ঘদিন ধরেই নির্বাচনী এলাকায় নৌকা মার্কায় ভোট প্রার্থনা করে ভোটারদের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। মনোনয়ন পেলে বিপুল ভোটে তাঁর বিজয় সুনিশ্চিত এমন দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি। নওগাঁ-৫ (সদর) আসন ॥ এ আসনটিতেও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রয়েছে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। সেক্ষেত্রে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হাফডজনেরও বেশি। বিগত ২০১৩ সালের ৬ মার্চে নওগাঁর বর্ষীয়ান নেতা সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আব্দুল জলিল এমপির মৃত্যুর পর নওগাঁয় আওয়ামী লীগ অভিভাবক শূন্য হয়ে পড়ে। এর পর থেকে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল, মনোমালিন্য লেগেই আছে। পরবর্তীতে মোঃ আব্দুল মালেক উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। আব্দুল মালেক বর্তমানে সদর আসনের এমপি ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সভাপতি। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে তাঁর অবস্থান সুদৃঢ়। কাজেই তিনি আগামী নির্বাচনে দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী একথা নিশ্চিত। প্রায় প্রতিদিন তিনি বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় নির্বাচনী গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। অপরদিকে প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের পুত্র রাজনীতিতে নবীন ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে তাঁর ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়। আধুনিক নওগাঁর রূপকার প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের উত্তরসূরি হিসেবে জনবিচ্ছিন্ন এলাকায় গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাড়াও মিলছে ব্যাপক। এছাড়াও এই নির্বাচনে নওগাঁ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ নওগাঁ সদর আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে প্রকাশ্য সভা করে ঘোষণা দিয়েছেন। জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পর পর দু’বার পৌরসভা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে এবং সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক আসন্ন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন। তবে প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিলের পুত্র ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জনকে মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় সুনিশ্চিত বলে তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিমত। এ আসনে সাবেক এমপি শাহিন মনোয়ারা হক মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। অপরদিকে সদর আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অন্তত হাফ ডজন প্রার্থী। এদের মধ্যে গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল জলিলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া বিএনপির প্রার্থী বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্নেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি পৌর মেয়র নজমুল হক সনি, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন অন্যতম। এছাড়া জাতীয় পার্টি থেকে নওগাঁ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক ইফতারুল ইসলাম বকুল প্রার্থী হচ্ছেন বলে কেন্দ্রীয় জাপার যুগ্ম মহাসচিব ও জেলা জাপার সভাপতি এ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন জানিয়েছেন। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসন ॥ নওগাঁর রানীনগর-আত্রাই দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত নওগাঁ-৬ আসন। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এই আসনে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সম্ভব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যেই পোস্টার ব্যানার সাঁটিয়ে তৎপরতা শুরু করেছেন। দুই দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থীর আনাগোনা চোখে পড়লেও শেষ মুহূর্তে কোন্ দল থেকে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা পুরোপুরি নিশ্চিত হতে আরও কিছু সময় অপেক্ষা করতে হবে। পরপর দু’বার আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এবারও মনোনয়ন লাভের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন। এই আসনে ইসরাফিল আলম ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন হেলাল ও আব্দুর রহমান। এদিকে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলুর মনোনয়ন প্রায় নিশ্চিত এমনটাই গুঞ্জন শোনা গেলেও এই আসন থেকে কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক এছাহক আলী, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা আমিনুল হক বেলাল মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
×