ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেল

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ জুলাই ২০১৮

 বড়পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয়েছে জ¦ালানি বিভাগে। কাগজে কলমে কয়লা থাকলেও বাস্তবে কয়লা না থাকায় ফেঁসে গেছেন খনি কর্মকর্তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন এক বা দুই বছরে ২২৭ কোটি টাকার কয়লা সরানো সম্ভব নয়। দীর্ঘ সময় ধরে আস্তে আস্তে এই কয়লার কারসাজি করা হয়েছে। এর সঙ্গে সংঘবদ্ধ একটি চক্র জড়িত। কিন্তু পর্যায়ক্রমে সকলে লাভবান হওয়ায় কেউ এসব বিষয় নিয়ে মুখ খোলেনি। খনির শিফট পরিবর্তনে বিদ্যুত কেন্দ্র কয়লা সঙ্কটে পড়ায় বিষয়টি সবার নজরে আসে। বিদ্যুত কেন্দ্রটি বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড। রবিবার রাত বারোটার পর কেন্দ্রটি আর চালানো সম্ভব হবে না। বিদ্যুত জ¦ালানি কয়লা চুরির প্রমাণ পেলেই শাস্তি পেতে হবে সাবেক- বর্তমান সব কর্মকর্তাকে। বিদ্যুত জ¦ালানি এবং খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ রবিবার বলেন, বড়পুকুরিয়া খনির কয়লা নিয়ে উত্থাপিত অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। অভিযুক্ত যাদের নাম আসবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পিডিবি সূত্র জানায়, বিদ্যুত কেন্দ্রটি রবিবার থেকে বন্ধ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) সাঈদ আহমেদ জানান, আমরা বন্ধ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। রবিবার রাত বারোটার পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিছু কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্রে সংরক্ষিত থাকে, যা ব্যবহার করে ফেলতে হয়। এখন তা ব্যবহার চলছে। বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লা মজুতের পরিমাণ কাগজে-কলমে রয়েছে এক লাখ ৪০ হাজার টন। এর আগে ২০০৫ সালের কয়লা মজুত এবং বিক্রির হিসাব পর্যালোচনা করে এই হিসাব দাঁড় করিয়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। এই কাগুজে হিসাবই পিডিবিকে মৌখিকভাবে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল। কিন্তু খনির কয়লা উত্তোলনের পর কয়লার মজুদাগারের সব কয়লা জড়ো করে দেখা গেছে, সেখানে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টনের মতো কয়লা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে ২০০৫ সাল থেকে উত্তোলন, বিক্রি এবং মজুত হিসাব করে কাগজে কলমে এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা মজুত থাকলেও এখন কেন এই মজুতের পরিমাণ ১০ হাজার টন। বাকি এক লাখ ৩০ হাজার টন কয়লা গেল কোথায়? বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, এখান থেকে খোলা বাজারে কয়লা বিক্রি করা হয়। এই বিক্রিতে একটি মহল বেশি পরিমাণ কয়লা বিক্রি করে খাতায় কম হিসাব দেখাতে পারে। আবার কয়লা না তুলেও চীনা কোম্পানি অতিরিক্ত দেখিয়ে বেশি অর্থ নিয়ে যেতে পারে। তবে সব কিছুই তদন্ত শেষে জানা যাবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। খনি থেকে সরিয়ে দেয়া ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবীব উদ্দিন সিস্টেম লসের কারণে বড়পুকুরিয়ার কয়লা কমেছে বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন কয়লা খোলা আকাশের নিচে থাকে। এখান থেকে বাতাসে উড়ে যেতে পারে, বৃষ্টিতে ধুয়ে যেতে পারে। জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মোঃ ফয়জুল্লাহ বলেন, এসব কথা তিনি আগে বলেননি কেন। পরিদর্শনের পর ধরা পড়ার পর এই কথা বললে কি হবে? কয়লা তো গ্যাস না যে উড়ে যাবে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলেই বোঝা যাবে আসলে কি হয়েছে। কয়লা কেলেঙ্কারিতে খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলায় সংযুক্ত করা হয়েছে। আর অতিরিক্ত হিসেবে সেখানে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পেট্রোবাংলা পরিচালক আইয়ুব খানকে। সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন দুইজন এরা হলেন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলাম। একইসঙ্গে খনির মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে সিরাজগঞ্জের পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডে বদলি করা হয়েছে। পেট্রোবাংলার পরিচালক (মাইন অপারেশন) কামরুজ্জামানকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি কয়লা কেলেঙ্কারি তদন্ত করছে।
×