ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মহেশখালীতে ফের অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ জুলাই ২০১৮

  মহেশখালীতে ফের অস্ত্র তৈরির কারখানা আবিষ্কার

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ও নিজস্ব সংবাদদাতা, মহেশখালী ॥ অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী, চিংড়ি ঘের মালিক, ইয়াবা কারবারি, ডাকাত-ছিনতাইকারী, একটি বিশেষ মহল ও রোহিঙ্গা জঙ্গীরাই হচ্ছে মহেশখালীর অস্ত্র কারখানার একমাত্র অস্ত্র ক্রেতা। ইতিপূর্বেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মহেশখালীর জঙ্গল থেকে একাধিক অস্ত্রকারখানার সন্ধান লাভ করেছিল। উদ্ধার করেছে বহু অস্ত্র। গ্রেফতার করেছে একাধিক অস্ত্র কারিগরকে। তারপরও বন্ধ করা যাচ্ছে না অস্ত্র তৈরির কারবার। গুঁড়িয়ে দেয়ার পর ফের গড়ে ওঠে অস্ত্র তৈরির কারখানা। জানা যায়, অস্ত্র কারখানায় অভিযান চালাতে গিয়ে ইতিপূর্বে মহেশখালী থানার একজন এসআই অস্ত্র কারিগরদের ছোড়া গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছিল কয়েকজন পুলিশ সদস্য। পরবর্তীতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে অস্ত্র কারিগরকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে অন্তত তিনজন অস্ত্র কারিগর। তারপরও অতি মুনাফার লোভে মহেশখালীর জঙ্গলে অস্ত্র কারখানা গড়ে উঠছে গোপনে। রবিবার ভোর রাতেও কক্সবাজারের র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালিয়ে কালারমারছড়া এলাকায় একটি অস্ত্র কারখানার সন্ধান লাভ, বিপুল অস্ত্র উদ্ধার ও দুইজন অস্ত্র কারিগরকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার রাত ১১টা থেকে র‌্যাবের অভিযান শুরু হয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে। র‌্যাব কর্মকর্তাদের কৌশল ও বিচক্ষণতায় কোন ধরনের রক্তপাত ছাড়াই আবদুল হাকিম ও শহিদুল্লাহ নামে দুইজন অস্ত্র কারিগরকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। মহেশখালীর কালামারছড়ার পাহাড়ে অস্ত্র তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ২০টি অস্ত্র, বিপুল পরিমাণের গোলাবারুদ ও অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছে। এ সময় অস্ত্র তৈরির ২ জন কারিগরকে আটক করা হয়। আটক মোঃ আব্দুল হাকিম ও মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র তৈরি করে আসছিল বলে র‌্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। রবিবার বিকেল ৩টায় র‌্যাব-৭ কক্সবাজার কার্যালয়ে এক প্রেসব্রিফিং এ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোঃ মেহেদী হাসান জানান, মহেশখালীর বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় কয়েকটি অস্ত্র তৈরির কারখানা থাকার খবরে র‌্যাবের একটি দল অভিযানে যায়। অভিযানে কালারমারছড়ার পাহাড়ে একটি অস্ত্র তৈরির কারখানার সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় অস্ত্র তৈরির দুইজন কারিগরকে আটক করা হয়। ওই কারখানায় অভিযান চালিয়ে অস্ত্র তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম, ২০টি অস্ত্র ও ২৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়। সূত্র জানায়, টেকনাফের ইয়াবা কারবারিরা উচ্চ দামে মহেশখালী থেকে অস্ত্র কিনে নিয়ে যায়। তারা সাগর পথে ফিশিং বোটে ও সড়ক পথে প্রাইভেট নোয়াহ গাড়িতে লুকিয়ে এসব অস্ত্র নিয়ে যায় টেকনাফে। নাফ নদীতে মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আনার সময় ব্যবহার করা হয়ে থাকে এসব অস্ত্র। নাফ নদীতে জেলেদের ছোট ছোট নৌকায় করে ইয়াবা দেশে আনা হয়। এ সময় অপর পক্ষ এসব ইয়াবা নৌকা থেকে ছিনিয়ে নিয়ে বিক্রি করে দেয় অন্যত্র। ইয়াবার চালান রক্ষায় মূলত ইয়াবা কারবারিরা অবৈধ অস্ত্র কিনে থাকে মহেশখালীর কারখানা থেকে। টেকনাফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইয়াবা উদ্ধারের সময় তাদের কাছ থেকে অস্ত্র জব্দ করার এমন নজিরও রয়েছে। টেকনাফে একাধিক গডফাদার শীর্ষ ইয়াবা কারবারির কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে মর্মে গোয়েন্দা রিপোর্টেও উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমার সীমান্ত থেকে ছোট নৌকায় করে ইয়াবা দেশে আনার সময় তাদের কাছে মজুদ থাকে এসব অস্ত্র-গুলি। জেলার মহেশখালী ও চকরিয়ায় চিংড়ি ঘের দখল করতে অসাধু ব্যক্তিরা অস্ত্র কিনে নিয়ে যায় ওই কারখানা থেকে। চিংড়ি ঘের দখলে থাকা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তারা অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। ওই অসাধু ব্যক্তিরা অনেক সময় মহিলা বহনকারী নিয়োজিত রেখে চট্টগ্রামেও সরবরাহ করে থাকে অবৈধ অস্ত্র। জেলার বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করার জন্য সংঘবদ্ধ ডাকাতদল মহেশখালী থেকে অস্ত্র কিনে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মহেশখালীর কতিপয় অস্ত্র ব্যবসায়ী ওই কারখানার এজেন্ট হিসেবে কাজ করে থাকে। কারিগরদের কাছ থেকে কেনা মূল্যের দ্বিগুণ দাম ধরে ডাকাত ও ছিনতাইকারীদের কাছে সরবরাহ করে থাকে অস্ত্রগুলো। একটি বিশেষ মহল রাজনৈতিক কর্মকা-ে ব্যবহার করতে সন্ত্রাসী ক্যাডারদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে মহেশখালীর ওই গোপন অস্ত্র ভা-ার থেকে অবৈধভাবে অস্ত্র কিনে থাকে। সরকার বিরোধী আন্দোলনে নাশকতায় ব্যবহার করতে এসব অস্ত্র মজুদ রাখে চিহ্নিত ক্যাডাররা। এদিকে দেশে ঘাপটি মেরে থাকা রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মহেশখালীর অস্ত্র কারখানা ও এজেন্ডদের কাছ থেকে অস্ত্র কিনে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কিছুদিন আগে শহরের টেকপাড়ার একটি ভাড়া বাসা থেকে একাধিক অস্ত্রসহ তিন রোহিঙ্গা জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছিল। রোহিঙ্গা জঙ্গীরা মিয়ানমারে স্বাধিকার আদায়ের জন্য দেশটির সরকারী বাহিনীর সঙ্গে লড়তে বিশেষ করে এসব অস্ত্র কিনে থাকে। তা কৌশলে সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে পাচার করে দেয় সেখানে অবস্থানরত আরএসও-আরসার ক্যাডারদের কাছে। দেশের একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকার বিরোধী আন্দোলনে সহযোগিতা করতেও রোহিঙ্গা জঙ্গীরা অস্ত্রসহ রাস্তায় নেমে পড়ার নজির রয়েছে। সচেতন মহল বলেন, আটক অস্ত্র কারিগরদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অস্ত্র ক্রেতা ও ব্যবসায়ী কারা, তা জানা সহজ হবে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে এসব অস্ত্র ব্যবসায়ী ও সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা।
×