ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের বিরোধিতার জের

প্রথম স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করে বস্তায় ভরা হয় লাশ

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৫ জুন ২০১৮

 প্রথম স্ত্রী ও দুই মেয়েকে হত্যা করে বস্তায় ভরা হয় লাশ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সিদ্ধিরগঞ্জে স্বামী মাসুদ দেওয়ানের দ্বিতীয় বিয়ের বিরোধিতার জের ধরে প্রথম স্ত্রী ও তার দুই মেয়েকে নৃশংসভাবে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তাদের লাশ বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হয়েছিল পুকুর ও ডিএনডি খালে। নিহতরা হলো মাসুদের স্ত্রী নোয়াখালীর সেনবাগের পদুয়া এলাকার আঞ্জুবী আক্তার (২৮) ও তার দুই মেয়ে ৭ বছর বয়সী মাঈদা আক্তার ও ১৫ মাস বয়সী মাহি। মাসুদ দেওয়ান তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও শোভার চাচাতো ভাই সবুজ ওরফে সোহেলের পরিকল্পনায় মা ও দুই মেয়েকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মাসুদ দেওয়ান (৩২) ও দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তারের চাচাতো ভাই সবুজ ওরফে সোহেলকে। রবিবার ৬টায় সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কার্যালয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সার্কেল-ক) মোঃ শরফুদ্দীন এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে হত্যাকা-ের বিষয়টি সাংবাদিকদের অবহিত করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার মিয়া, পরিদর্শক (তদন্ত) নজরুল ইসলাম, পরিদর্শক (অপারেশন) আজিজুল হক ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল আহম্মেদ প্রমুখ। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শরফুদ্দীন জানান, সিদ্ধিরগঞ্জের আটি হাউজিং মসজিদ গলির কবির মিয়ার বাড়ির ৬ তলার পশ্চিম দক্ষিণ ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয় মাসুদ দেওয়ান। সে তার প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারের অমতে তারই বান্ধবী শোভা আক্তারকে বিয়ে করে। এ বিষয়টি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি লেগেই ছিল। ওই ঝগড়ার জের ধরে সে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা আক্তার ও শোভার চাচাতো ভাই সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে প্রথম স্ত্রী আঞ্জুবী আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা মোতাবেক গত ৯ জুন মাসুদ দেওয়ান তার দ্বিতীয় স্ত্রী শোভা ও চাচাতো শ্যালক সবুজ মিলে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে নতুন ভাড়া বাসা চিনে নেয়ার কথা বলে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে ৬ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে প্রথমে আঞ্জুবী আক্তারকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। পরে দেখে ফেলায় বড় মেয়ে মাইদাকেও হত্যা করা হয়। পরে ছোট মেয়ে মাহিকেও শ্বাসরোধে হত্যা করে। মাহিকে হত্যার সময় মুখ দিয়ে দুধ বের হচ্ছিল। এরপর আঞ্জুবী আক্তারের লাশ বস্তায় ভরে ড্রামে করে গোদনাইলের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি খালে ফেলে দেয়। দুই মেয়ের লাশ বস্তায় ভরে আটি এলাকার একটি একটি মৎস্য খামারে ফেলে দেয়া হয়। সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ গত ১১ জুন বিকেল ৫টায় সিদ্ধিরগঞ্জের ভাঙ্গারপুল এলাকার ডিএনডি ইরিগেশন খালের পাশ থেকে ড্রামের মধ্যে আঞ্জুবী আক্তারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর গত ১৬ জুন ঈদের দিন আটি হাউজিংয়ের আলী মোহাম্মদের মৎস্য খামার থেকে বস্তাবন্দী অবস্থায় ১৫ মাস বয়সী শিশু মাহির লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৮ জুন আটি এলাকার একই খামারে ভাসতে থাকা একটি ব্যাগ থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শিশু মাঈদার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশ তদন্তে নেমে হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে শুরু করে। প্রথমে আটি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মাসুদ দেওয়ানকে। পরে পুলিশ শোভা আক্তার ও শোভার চাচাতো ভাই সবুজকে গ্রেফতার করতে নেত্রকোনার খালিয়াঝুড়ি এলাকায় গিয়ে তাকে গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক অঞ্চল) মোঃ শরফুদ্দীন জানান, ঘাতক সবুজ ওরফে সোহেল আদালতে স্বীকারোক্তমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। স্বামী মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। অপর ঘাতক দ্বিতীয় স্ত্রী শোভাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
×