ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত নিরসন করুন, অনুপ্রবেশ ঠেকান

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৪ জুন ২০১৮

দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত নিরসন করুন, অনুপ্রবেশ ঠেকান

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ সারাদেশ থেকে আসা তৃণমূল নেতারা আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের অভ্যন্তরে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব-কোন্দল দ্রুত নিরসন, মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে কর্মীদের দূরত্ব হ্রাস এবং ক্ষমতার সুবাদে দলে অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাংগঠনিক অস্তিত্ব সঙ্কটে থাকলেও অনেক জায়গা আছে যেখানে আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগই যথেষ্ট। আর ক্ষমতায় থাকায় বাইরে থেকে বহু মানুষ নৌকায় উঠেছে। এভাবে দলে অনুপ্রবেশ যদি আমরা ঠেকাতে না পারি তবে নৌকা তীর খুঁজে পাবে না। শনিবার দুপুরে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ৮ বিভাগের ৮ জেলা নেতা এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তাঁরা অভিন্ন কণ্ঠে বলেন, আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোন শক্তিই যে এ দলকে পরাজিত করতে পারবে না তা প্রমাণিত। নির্বাচন সন্নিকটে। তাই দেশের যেসব জেলা বা নির্বাচনী এলাকায় সমস্যা রয়েছে তা একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে দ্রুত নিরসন করতে হবে। আর জিয়া-মোশতাকের প্রেতাত্মাদের দলে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রথমেই রংপুর বিভাগের পক্ষে বক্তব্য রাখতে গিয়ে গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আমাদের দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। এই বক্তব্যে আমরা অনুপ্রাণিত হব, সংগঠনকে শক্তিশালী করব, উন্নয়নের কথাগুলো মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব, মানুষের কাছে যাব, মানুষকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করব। আজকে সারাদেশের নেতাকর্মীরা এখানে এসেছেন। আমরা শেখ হাসিনার ডাকে সাড়া দিয়ে নিজেদের সংগঠিত করব এবং উন্নয়নশীল দেশ গঠনে ভূমিকা রাখব। শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করব। খুলনা বিভাগের পক্ষে বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা অনুসরণ করলেই আর অন্য কিছু করার দরকার পড়বে না। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন বলবেন যে, সব ঠিক আছে। পরে যদি ভাগে কম পড়ে তখন বলবেন না কিছুই ঠিক হল না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হলে আমরা জয় পাব। খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী আমাদের ডেকেছিলেন। আমরা খুলনা মহানগর, জেলা, থানা ও ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা ওয়াদা করেছিলাম যে আমরা একসঙ্গে কাজ করব। সেখানে আমাদের একতার ফলে কিন্তু তালুকদার আবদুল খালেক জয় পেয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে আমরা সেমিফাইনালে জয়লাভ করেছি। আগামী জাতীয় নির্বাচনে খুলনা বিভাগের ৩৭টি আসনে নৌকাকে বিজয়ী করার মধ্যে দিয়ে আমরা ফাইনালে জয়লাভ করব। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনেক উন্নয়ন করেছেন কিন্তু আমরা যদি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের এগুলো না বোঝাই তবে জয়ের কাজটি কঠিন হয়ে যাবে। নেত্রী সারাদিন রাত পরিশ্রম করছেন। আমাদেরও রাজশাহী বিভাগের প্রতিটি জেলায় নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে। বরিশাল বিভাগের পক্ষে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেন, রাজনৈতিক দল কোন সামরিক বাহিনী নয়। কিন্তু আমরা রাজনৈতিক দলের আদর্শ যদি সামরিক বাহিনীর মতো কমান্ড মেনে চলি তবে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করতে পারবে। আমরা যদি আত্মবিশ্বাস নিয়ে ও নেত্রীর প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে এগিয়ে যেতে পারি তবে এদেশে এমন কোন শক্তি নেই যারা আওয়ামী লীগকে পরাজিত করতে পারে।’ ময়মনসিংহ বিভাগের পক্ষে জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বাকী বিল্লাহ বলেন, জাতির জনকের হত্যার পর আমাদের জন্য কঠিন সময় গেছে। তখন দলে কাউকে পাইনি। এখন আওয়ামী লীগের ভাল সময় যাচ্ছে, আজকে বাইরে থেকে বহু মানুষ নৌকায় উঠেছে। এভাবে যদি নৌকায় ওঠা অব্যাহত থাকে, আর আমরা যদি ঠেকাতে না পারি তাহলে এই নৌকার সলিল সমাধি হবে। এই নৌকা আর তীর খুঁজে পাবে না। সেজন্য এখনও সময় আছে, ওই জিয়াউর রহমান একদিন বাকশালের ফরম পূরণ করে বঙ্গবন্ধুর হাতে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বলেছে, সো হোয়াট, ভাইস প্রেসিডেন্ট ইজ দেয়ার। আজকেও কিন্তু ওই জিয়ার প্রেতাত্মারা, ওই খন্দকার মোশতাদের প্রেতাত্মারা আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। সিলেট বিভাগের পক্ষে মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নেসার আহমেদ বলেন, যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিয়েছেন তা আমরা সিলেট বিভাগের নেতাকর্মীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আমরা অতীতের চেয়ে আরো ভাল করব। আপনি যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা আমাদের আগামী দিনের পাথেয় হবে। ঢাকা বিভাগের পক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে আসনগুলোতে সমস্যা আছে সেখানে যদি দ্রুত একটি টিম পাঠিয়ে সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারেন তবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো কোন দল এখন আর নাই। বিএনপি জামায়াতকে খুঁজে পাওয়া যায় না। সেজন্য যেখানে সমস্যা আছে আপনি নিজে হস্তক্ষেপ করেন, যা ভাল মনে করেন সেই সিদ্ধান্ত দেবেন। আপনি যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমরা সেটা মেনে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করব। কিন্তু সেই পরিবেশ ঠিক করে দিতে হবে। অনেক সংসদ সদস্য আছেন যারা কর্মসূচীতে যান না, অনুষ্ঠানে যান না, এক মঞ্চে যান না, কথাও বলেন না, পাল্টাপাল্টি মারামারি হচ্ছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগই আওয়ামী লীগকে হারানোর জন্য যথেষ্ট।
×