ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার

খালেদার প্যারোল প্রশ্নে বিএনপির আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ১৫ জুন ২০১৮

 খালেদার প্যারোল প্রশ্নে বিএনপির আইনজীবীরা দ্বিধাবিভক্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজনীতির উর্ধে উঠে মানবিক বিবেচনায় খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির দাবি করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেনের বক্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মত বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। তিনি বলেন, প্যারোলে মুক্তি নিয়ে খন্দকার মাহবুব হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা ওনার ব্যক্তিগত মত। আমাদের সঙ্গে তিনি আলোচনা করেননি। অন্যদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দন্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে হাজির করতে যে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি ছিল, তা প্রত্যাহার করেছেন আদালত। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, গত বুধবার আমাদের একজন আইনজীবী (খন্দকার মাহবুব) যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা মনে করি এটা তার ব্যক্তিগত মত। তার এই ব্যক্তিগত মতের উপর আমরা কোন বক্তব্য রাখতে চাই না। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের একজন নাগরিক এবং সাবেক তিন তিন বারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সেই চিকিৎসা তিনি যেভাবে চাইবেন সেইভাবেই চিকিৎসাসেবা দেয়া উচিত। আমরা আইনজীবী হিসেবে মনে করি আইনের দৃষ্টিতে তার সে অধিকার রয়েছে। লিখিত বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ মাদকমুক্ত হকো। কিন্তু তা অবশ্যই আইন মোতাবেক হতে হবে। বিচার বহির্ভূত হত্যাকা-ের মাধ্যমে নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নয়, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও গডফাদার এবং এর সঙ্গে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তিকে আইনের কাছে সোপার্দ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি। বৃহস্পতিবার সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে মাদকমুক্ত অভিযানের নামে ‘বিনা বিচারে হত্যাকা-ের প্রতিবাদের এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমিতির সভাপতি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সমিতির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার ॥ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দ-প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে থাকা বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির দুই মামলায় আদালতে হাজির করতে যে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি ছিল, তা প্রত্যাহার করেছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকার পৃথক দুই বিশেষ জজ আসামিপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরোয়ানা প্রত্যাহারের এ আদেশ দেন। গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন এবং বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলায় বিশেষ জজ আদালত-২ এর বিচারক কেএসএম শাহ ইমরান প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের আদেশ দেন। খালেদা জিয়ার পক্ষে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট প্রত্যাহারের আবেদন করে শুনানি করেন হান্নান ভূঁইয়া। দুদকের পক্ষে মোশাররফ হোসেন কাজল ও ফাতিমা খানম নীলার বিরোধিতা করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লা মিয়া এসব তথ্য জানিয়েছেন। গত ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মোঃ গোলাম শাহরিয়ার ১৩ জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় গ্যাটকো দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে ২০০৮ সালের ১৩ মে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মোঃ জহিরুল হুদা। অন্যদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শাহবাগ থানায় বড় পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মোঃ সামছুল আলম। দুদকের উপপরিচালক মোঃ আবুল কাসেম ওই বছরের ৫ অক্টোবর খালেদা জিয়াসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, কনসোর্টিয়াম অব চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইম্পোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশনকে (সিএমসি) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির অনুমোদন দিয়ে রাষ্ট্রের কয়লা উত্তোলনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা সিএমসির সঙ্গে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদন, ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তি করায় সরকারের প্রায় ১৫৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মামলা দু’টির অন্যতম আসামি খালেদা জিয়া বর্তমানে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে নাজিম উদ্দিন রোডের পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।
×