ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রার্থী সাদিক

প্রকাশিত: ০৩:৫৪, ৩১ মে ২০১৮

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের প্রার্থী সাদিক

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) তফসিল ঘোষণার পর থেকে বরিশাল মহানগরীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। যদিও এখানে তফসিল ঘোষণার আগেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে নির্বাচনী আমেজ ছিল। পূর্বের সেই আমেজের সঙ্গে তফসিল ঘোষণার পর আরও নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অতীতের ভুলত্রুটি সামলিয়ে আসন্ন বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে কারা হবেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী। তা নিয়ে ভোটযুদ্ধের চেয়ে এখন প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি পাড়া ও মহল্লার ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের ভোটারদের পছন্দের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণা করার পর অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন বিএনপির নিতিনির্ধারকরা। একসময়ে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌশলী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বেশ স্বল্পসময়ে নিজের আয়ত্ত করে নেয়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে দীর্ঘদিন থেকে সর্বত্র জয়জয়কার শুরু হয়েছে। এ কারণে ভোটের মাধ্যমেই এবার বিএনপির দুর্গ ভাঙ্গতে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বহু আগেই সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ এবং সেই টার্গেট পূরণে অগ্রসর হতে হতে ইতোমধ্যে দল এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ভরসারস্থান দখল করে নিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যুবরতœখ্যাত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তৃণমূল রাজনৈতিক মাঠে সবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব নীরব হোসেন টুটুল বলেন, পুরো নগরীতে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জয়-জয়কার শুরু হয়েছে। নগরীর আওতাধীন দলের সকল সংগঠনের সবকটি ইউনিটসহ জনসাধারণ সাদিক আব্দুল্লাহকে ভরসার শেষ ঠিকানা হিসেবে আপন করে নিয়েছে। সেখানে বিএনপির আতঙ্ক সাদিক আব্দুল্লাহ ব্যতিত অন্য কাউকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অসম্ভব হয়ে পরবে। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় সিটি নির্বাচনে দলীয় মেয়র প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম চূড়ান্ত করে কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাওয়া হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি বলেন, বরিশাল বিএনপির দুর্গ। এখানে সাদিক আব্দুল্লাহ ব্যতিত অন্য কেউ মনোনয়ন পেলে কোন টেনশন থাকবে না। তবে সাদিক টিকেট পেলে কি হয় বলা যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সর্বমহলে যখন একক প্রার্থীর নাম উঠে এসেছে তখন এখনও বিএনপিতে চলছে হ-য-ব-র-ল অবস্থা। বিএনপির বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল ছাড়াও মেয়র প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চাঁন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা নাসরিন। এছাড়া জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন তরুণ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন তাপস। বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী। রাজশাহীতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিএনপি মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী থেকে জানান, সিটি ভোটের বার্তা পৌছে গেছে রাজশাহীতে। তফসিল অনুযায়ী আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন ভোট। মঙ্গলবার নির্বাচনের দিন তারিখ ঘোষণার পরপরই শুরু হয়েছে বিভিন্ন দলের তৎপরতা। বিশেষ করে বৃহৎ দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলোচনা, উৎসাহ-উদ্দীপনা। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত প্রার্থী ঘোষণাও দিয়েছে। আওয়ামী লীগ আগে থেকেই মাঠে থাকলেও ভোটের নতুন করে প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে জাতীয় পার্টি ও জামায়াত। তবে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে প্রার্থী বা নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ফলে তারা সহসায় ভোটের মাঠে নামতে পারছে না। এ নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা হতাশাও কাজ করছে। তারা (বিএনপি) গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর রাজশাহীসহ তিন সিটি ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে দলটির নেতারা জানিয়েছেন। ফলে রাসিকের ভোট নিয়ে কেন্দ্রের নির্দেশনার দিকে তাকিয়ে রয়েছে রাজশাহী বিএনপির নেতাকর্মীরা। দলগুলোর সূত্রমতে, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আগেই ঘোষণা করা হয়। দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নৌকার মেয়র প্রার্থী। এদিকে ভোটের দিন ঘোষণার পর নিজেদের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছে জাতীয় পার্টি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে দলীয় সভায় তাদের মেয়র প্রার্থী হিসেবে ওয়াশিউর রহমান দোলনের নাম ঘোষণা করা হয়। ওয়াশিউ রহমান দোলন জাতীয় যুব সংহতি কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগরের সভাপতি। এছাড়াও আগেই থেকেই ঘোষণা রয়েছে জামায়াতের প্রার্থী। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যক্ষ সিদ্দিক হোসেনকে তারা মেয়র প্রার্থী হিসেবে ঠিক করে রেখেছে। তবে প্রার্থী বা নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে এখনও নিশ্চিত নন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পর রাজশাহীসহ তিন সিটি ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কেন্দ্রের এমন ঘোষণায় নির্বাচন নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়েছেন রাজশাহী বিএনপির নেতাকর্মীরা। রাসিকের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, ‘বিএনপি একটি উদার গণতান্ত্রিক দল। এর জন্য এই সরকারের অধীনে সবগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। সেই হিসেবে খুলনা সিটি নির্বাচনেও অংশ নিয়েছে বিএনপি। কিন্তু খুলনা সিটি নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে ভোটকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আগে থেকে অংশ নেয়ার কথা থাকায় সেখানে বিএনপি প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন। ওই নির্বাচনের পর রাজশাহী সিটি নির্বাচনে অংশ নেব কি না তা কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। রাসিকের বর্তমান মেয়র ও মহানগর বিএনপির সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘এ নির্বাচন কমিশন যেভাবে সরকারের আজ্ঞাবহে পরিণত হয়েছে, তাতে আমরা কিভাবে অংশ নিব! নির্বাচনী মাঠে সেনাবাহিনী চাইলে দেয়া হচ্ছে না। অথচ আরপিও সংশোধন করে তাদের এমপিদের নির্বাচনী গণসংযোগে নামতে দেয়া হচ্ছে। তাহলে তো আর নির্বাচনী পরিবেশ থাকছে না। মেয়র বুলবুল বলেন, ‘খুলনায় যেভাবে ভোট ডাকাতি হলো, ‘তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের লাভ কি? কাজেই আগামী সিটি নির্বাচনে আমরা অংশ নেব কি না তা নিশ্চিত নয়।’
×