ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

একদিকে মেরামত অপরদিকে বালু উত্তোলন

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৩১ মে ২০১৮

একদিকে মেরামত অপরদিকে বালু উত্তোলন

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩০ মে ॥ বেড়ার পেঁচাকোলায় যমুনা নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ধসে যাওয়া অংশ জরুরী ভিত্তিতে মেরামত করা হচ্ছে। প্রায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত কাজের দায়িত্ব পেয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলীর আত্মীয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাজ এন্টারপ্রাইজ। এদিকে বালুদস্যুরা প্রতিরক্ষা বাঁধের কোল ঘেঁষে বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর তলদেশের ২৫-৩০ ফুট গভীর থেকে পাইপের সাহায্যে বালু উত্তোলন করছে। এতে প্রতিরক্ষা বাঁধে ধস নামার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী। জানা যায়, গত বছর বন্যা শেষে পেঁচাকোলায় যমুনা নদী ভাঙ্গন প্রতিরক্ষা বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট নদীতে বিলীন হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ভেঙে যাওয়া অংশ সংস্কার বা মেরামত করা হয়নি। বর্তমানে ভাঙ্গন পরিধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৫০ ফুট। এ বিষয়ে ১৪ মে দৈনিক জনকণ্ঠে বেড়ার পেঁচাকোলায় ভাঙ্গনরোধ বাঁধের ১৫০ ফুট যমুনায় বিলীন শিরোনামে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশ হলে প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। নড়েচড়ে বসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশ জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের জন্য প্রায় ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ নিজ ক্ষমতা বলে তার আত্মীয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রাজ এন্টারপ্রাইজকে মেরামত কাজের কার্যাদেশ দেন। এ নিয়ে অন্যান্য ঠিকাদারদের মধ্যে কানাঘুষা চলছে। গত ২১ মে সোমবার থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গন এলাকা পেঁচাকোলায় বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করছে। এই কাজে মোট ১৭ হাজার বালিভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় জোট সরকার আমলে প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা-মেঘনা রিভার ইরোশন মিটিগেশন প্রকল্পের আওতায় যমুনা নদীর সবচেয়ে বেশি ভাঙ্গনপ্রবণ পাবনার বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ থেকে কৈটোলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার এলাকাব্যাপী স্থায়ী ভাঙ্গন বাঁধ প্রকল্পের কাজ ২০০৪ সালে শুরু হয়ে ২০০৮ সালে শেষ হয়। প্রায় ৭ কিলোমিটার যমুনা নদীর পশ্চিম পাড়ে (ডান তীর) প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হয়। প্রতিরক্ষ বাঁধ নির্মাণের ফলে মোহনগঞ্জ থেকে রাকশা পর্যন্ত যমুনা নদীর ভাঙ্গন বন্ধ হয়ে যায়। এদিকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেছেন, ফারজানা খানম বেড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার থাকাকালীন তার তৎপরতায় যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় ক্ষমতাসীন দলের কাউন্সিলর সুফিয়ান, হিরো, মোফাজ্জল, মাসুদ, আর্শেদ গংরা আবারও মোহনগঞ্জ ও মালদাহপাড়া এলাকায় যমুনা নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করছে। বালু উত্তোলনকারীরা ক্ষমতাসীন দলের লোক হওয়ায় কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। ওই এলাকায় প্রতিদিন ৫-৬টি বোমা মেশিনের সাহায্যে নদীর তলদেশের ২০-৬০ ফুট গভীর থেকে বালু উত্তোলন করে নৌকায় পাড়ে আনা হচ্ছে। মোহনগঞ্জ, বেড়া ডাকবাংলা ও বৃশালিখায় বালু বেচা-কেনার হাট বসেছে। সেখান থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাক বালু জেলার বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। বিনা পুঁজির এ ব্যবসা করে সংশ্লিষ্টরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। এ ব্যাপারে কাউন্সিলর সুফিয়ানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে এ ব্যাপারে তাকে আর ফোন না দেয়ার জন্য বলেন। বালু কাটা প্রতিরোধ কমিটি ও নাকালিয়া বাজার বণিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বালুদস্যুদের কারণে ইতিমধ্যে সাত-আট শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনের হুমকির মুখে রয়েছে নাকালিয়া বাজারসহ ১২টি গ্রাম। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বালু উত্তোলন বন্ধের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কৈটোলা নির্মাণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব এ প্রতিনিধিকে বলেন, যমুনা নদী ভাঙ্গন প্রতিরক্ষা বাঁধের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর যে কোন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন প্রতিরক্ষা বাঁধের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। নদীর যে স্থান থেকে বালু উত্তোলন করা হয় তার চার পাশের এলাকা ধসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্য প্রশাসনকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে।
×