ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্যাম্পাসে জমজমাট ইফতার

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৭ মে ২০১৮

ক্যাম্পাসে জমজমাট ইফতার

রমজান হলো আত্মশুদ্ধির মাস। রমজান পালনের দুটি বড় মাধ্যম হলো সেহ্রি ও ইফতার। সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হচ্ছে রমজান মাস। তবে শহর কিংবা গ্রামের মতো সেহ্রি-ইফতারে অনেকটা ভিন্নরূপ দেখা যায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। প্রতিবারের মতো রমজানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় এবারও ক্যাম্পাসেই থাকতে হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেহ্রি-ইফতার মানেই আলাদা অভিজ্ঞতা। শেষ রাতে সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে সেহ্রি খাওয়ার মাঝে থাকে যেন অন্যরকম রোমাঞ্চ। ক্যাম্পাসে সবুজ ঘাসের ওপর পত্রিকা বিছিয়ে সহপাঠী বা বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করলে সকল ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়। হলের ডাইনিংয়ে সেহ্রি সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ডাইনিংগুলোতে সেহ্রি খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিটি হলের খাবার প্রায় একই রকম। অন্য মাসের চেয়ে রমজান মাসে মিল চার্জ একটু বেশি করা হয়ে থাকে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসরুল ইসলাম নাবিল বলেন, রাতে হলের ডাইনিংয়ে সেহ্রি করতে হলে ঠিক সময়ে ঘুম থেকে উঠতে হয়। একটুখানি দেরি হলে আর খাবার পাওয়া যায় না। পরে চিড়া বা অন্য কিছু দিয়ে রোজা রাখতে হয়। নতুবা না খেয়েই থাকতে হয়। তবে মেয়েদের হলের চিত্রটা ছেলেদের হল থেকে কিছুটা ভিন্ন। কেননা তারা রান্না করে খেতেই বেশি পছন্দ করেন। রান্না করতে চাইলেও সবাই হলে রান্না করার সুযোগ পান না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মনোয়ারা মনির বলেন, ডাইনিংয়ে সেহ্রি করার জন্য রাত সোয়া তিনটার দিকে উঠে লাইনে দাঁড়িয়ে খাবারের টোকেন নিতে হয়। এর একটু পরে গেলে আর টেবিলে সিট পাওয়া যায় না। দাঁড়িয়েই সেহরি করতে হয়। আর ঘুম থেকে তিনটার পর উঠলে তো কথাই নেই। নির্ঘাত না খেয়েই রোজা রাখতে হবে। রমজান মাসে ডাইনিংয়ে সেহ্রি করার আরেক নাম মহাকষ্ট বলে উল্লেখ করেন তিনি। ক্যাম্পাসে ইফতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পরিসংখ্যানের মাস্টার্স শিক্ষার্থী শহিদুল ইসলাম অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন, সকল জেলার বেশিরভাগ ইফতার আয়োজন হয় টিএসসিতে। এছাড়াও অপরাজেয় বাংলার বটতলা, লাইব্রেরি চত্বর, ডাকসু ক্যাফেটারিয়া, কার্জন হলসহ বিভিন্ন স্থানে বসে ইফতারের মেলা। ইফতার পার্টিতে সিনিয়র-জুনিয়র সকলেই একত্রিত হয়। বৃদ্ধি পায় সৌহার্দ্য। ভাগাভাগি হয় সুখ-দুঃখের হাজারো কথা। সুযোগ থাকে নেতৃত্ব বিকশিত করার। ঢাবির এমবিএ’র শিক্ষার্থী জিল্লুর রহমান। সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন ঢাকাস্থ বিরল উপজেলা ছাত্র কল্যাণ সমিতির। এবারের ইফতার আয়োজনে ছিল তার মাসব্যাপী কর্মযজ্ঞ। পার্লামেন্টারি ক্লাবে আয়োজিত এ বিশাল মিলনমেলায় একত্রিত করার সুযোগ হয়েছিল সাংসদ, সচিব, ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর। নেতৃত্বের দায়ভার বহন করে ইফতার পার্টি যেন মিলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সেহ্রি নিয়ে যত কষ্ট হোক না কেন বিভিন্ন চত্বর ও মাঠে সহপাঠী, সংগঠন বা বন্ধুদের নিয়ে বসে ইফতার করার মজাটাই আলাদা। ইফতারির আগ মুহূর্তে তাদের দিকে তাকালেই মনে হয় বিরাট কিছু জয় করার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে বসে আছে সবাই। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আফতাবুজ্জামান বলেন, আমাদের ক্যাম্পাস সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে ভরা। ইফতার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের গ্যালারি, টিএসসি, অডিটরিয়াম, শিক্ষক ক্লাব, শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ, সবুজ মাঠ, ক্যান্টিন যেন ভরে ওঠে এক অন্যরকম আমেজে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিং পড়ছে গণিতে। মাঝেমধ্যেই ইফতার করে মসজিদের তাবলীগ ভাইদের সঙ্গে। সৌহার্দ্যরে যেন এক অন্য রকম মেলবন্ধন। এছাড়া ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার, মার্কেট ও দোকানে বন্ধুদের সঙ্গে বসে জমজমাট ইফতার আয়োজন। ক্লান্তি ছেপে চলে খুনসুটি আর আড্ডা। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের নাজ, আশরাফ ও লিটনের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত যেন মহাআনন্দের। বাবা-মাকে রমজান মাসে বেশি মিস করলেও বন্ধুদের নিয়ে আড্ডার পাশাপাশি সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যাবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা মাঠে বসে ইফতার করার স্বাদটাই যেন ভিন্ন রকম। মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মেসবাহ। ক্যাম্পাসের ইফতার তাকে ভিন্নভাবে মনোযোগ আকর্ষণ করে। এমনকি ছাত্রজীবনের ক্যাম্পাসে ইফতারি নিয়ে বহু আবেগঘন বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, সবুজ ঘাসের ওপরে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতারের মুহূর্তগুলো আজও মনের মধ্যে দাগ কেটে যায়। মনে হয় ফিরে যাই ছাত্রজীবনে। সেই আড্ডায়। খুঁজে ফিরি হারানো দিনগুলোকে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে। বিশেষ করে ইফতার আয়োজন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র সুমন। উত্তরবঙ্গে বাড়ি হওয়ায় বেশিরভাগ রমজানে ইফতারি হয় হলের বন্ধু, বড় ও ছোট ভাইদের সঙ্গে। হলের ক্যান্টিন যেন সকলের মিলনমেলা। বড় থালায় খেজুর, বেগুনি, চপ, বড়া, নিমকি, জিলাপি, ছোলা, মুড়ি, বুন্দিয়া, কলা মাখিয়ে খাবার যে মজা, তা বলে বোঝানো যাবে না। মাখানো এ ইফতার যেন ভালবাসা মাখানোর মতোই। সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ইমতিয়াজ মিয়া সম্প্রতি উচ্চশিক্ষায় বৃত্তি নিয়ে নেদারল্যান্ডসে যাচ্ছেন। আগামী দু’বছর ইফতার হবে দেশের বাইরে। ক্যাম্পাসের এবারের ইফতার নিয়ে তাই ভিন্ন রকম অনুভূতি। দেশের ইফতার খুব মিস করব। বেশি মিস করব সহকর্মী ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইফতারের আনন্দঘন মুহূর্তগুলো। এছাড়াও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি এ্যান্ড এ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও রমজান মাসে জমে ওঠে ইফতারের জমজমাট আয়োজন। মোঃ শাহীন আলম
×