ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পরিস্থিতির ওপর নজরদারি শুরু

বেতন বোনাস দাবিতে গার্মেন্টসে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৭ মে ২০১৮

বেতন বোনাস দাবিতে গার্মেন্টসে নৈরাজ্য সৃষ্টির আশঙ্কা

শংকর কুমার দে ॥ ঈদের আগে বেতন-বোনাসের দাবিতে রমজান মাসে গার্মেন্টস শিল্পে নাশকতা, নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা, গোলযোগ, অশান্ত ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। বেতন-বোনাসের দাবিতে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলো। ঈদের আগে অনেক গার্মেন্টস কারখানায় বেতন বোনাস না হওয়ার কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে গার্মেন্টস শিল্প। ঈদের আগে বেতন-বোনাস দেয়ার দাবিতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছে গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। গার্মেন্টস শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজরদারি শুরু করা হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে গার্মেন্টস শিল্প কারখানায় উত্তপ্ত ও উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করার বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছরই কিছু গার্মেন্টস শিল্পের মালিক ঈদের সময়ে বেতন-ভাতা দিতে গড়িমসি করেন। এই সুযোগে গার্মেন্টস শিল্পে অস্থিতরতা সৃষ্টির জন্য উস্কানি দিতে পারে অশুভ শক্তি। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য গার্মেন্টস শিল্পে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হতে পারে। ঈদের এখনও অনেক বাকি থাকলেও গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলো মানববন্ধন, সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচী পালন করছে। অতীতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের উৎসব ভাতা পরিশোধের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন গার্মেন্টস মালিকরা। কিন্তু তাদের এই প্রতিশ্রুতি অনেক মালিকই রাখতে পারেননি। তবে যখনই পরিস্থিতি উত্তপ্ত ও উত্তেজনাকর হয়ে ওঠে তখনই তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর নেতারা। কিন্তু এই ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে গার্মেন্টস শিল্পের শ্রমিক সংগঠনগুলো মাঠে নামলেও মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-এর নেতাদের পক্ষ থেকে কোন বক্তব্য আসেনি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, অর্থ সঙ্কটে পড়া ছোট ও মাঝারি আকারের গার্মেন্টস মালিকদের সময়মতো বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে না পারার ঘটনাটিকে পুঁজি করে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তোলা হতে পারে গার্মেন্টস শিল্পকে। প্রায় প্রতিবছরই ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে গার্মেন্টস শিল্পে যে ধরনের নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করানো হয় তার পুনরাবৃত্তিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার সুপারিশ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। রমজান মাসে গার্মেন্টস শিল্পে বড় ধরনের গোলযোগের আশঙ্কা প্রকাশ গোয়েন্দা সংস্থার দেয়া প্রতিবেদনের বিষয়টি সরকার ও তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএকে জানানো হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা, মিরপুর, সাভার, আশুলিয়া, টঙ্গী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এলাকার ২ হাজার ৫১৮টি কারখানায় অনুসন্ধান চালিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। ওই প্রতিবেদনে ১২৫টি কারখানায় বেতন-ভাতা সংক্রান্ত সমস্যা রয়েছে। তবে সমস্যা আক্রান্ত এ সব কারখানা অধিকাংশই ছোট ও মাঝারি মানের। এমনিতেই জিএসপি বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টি নিয়ে বহু দেন দরবার করা হচ্ছে। তার ওপর যদি আবার গার্মেন্টস শিল্পে বেতন, বোনাস নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ তীব্র আকার ধারণ করে তাহলে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, সারাদেশে ৭শ’-৮শ’ কারখানায় সময় মতো শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দেয়া নিয়ে সমস্যা হতে পারে। এর মধ্যে ২০-২২টি কারখানা কোন শ্রমিককেই বেতন-বোনাস দিতে পারবে না বলে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ওই সব কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ যাতে দেখা না দেয় সেজন্য নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। বেতন- বোনাস নিয়ে যাতে শিল্পাঙ্গনে অস্থিরতা দেখা না দেয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। পোশাক শ্রমিকরা যাতে বেতন ও উৎসব ভাতা ঠিকমতো পান, সেজন্য সব কারখানায় মনিটরিংও করা হচ্ছে। যে সব কারখানায় সমস্যা হচ্ছে বা হবে বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলোয় আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করার জন্য অনুরোধ জানানো হবে। কোন অশুভ শক্তির অপ-তৎপরতায় যাতে শ্রমিক অসন্তোষ যাতে দেখা না দেয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। শিল্প পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনার শিল্পাঞ্চলে পোশাক কারখানা রয়েছে তিন হাজার ২৭৮টি। শিল্প পুলিশ-১ ঢাকার আওতায় আশুলিয়া, সাভার, ধামরাই এলাকার মোট এক হাজার ৭৩টি কারখানার সিংহভাগই বস্ত্র ও পোশাক খাতের। শিল্প পুলিশ-২ গাজীপুরের আওতায় রয়েছে এক হাজার ৮০০টি পোশাক কারখানা। শিল্প পুলিশ-৩ চট্টগ্রামের আওতায় কারখানা রয়েছে এক হাজার ৮টি । শিল্প পুলিশ-৪ নারায়ণগঞ্জের আওতায় রয়েছে দুই হাজার ৪৪২টি কারখানা। বেতন-বোনাস পরিশোধের হার সবচেয়ে কম গাজীপুর এলাকার পোশাক কারখানাগুলোতে। এ অঞ্চলে ৭৬ শতাংশ কারখানা তাদের শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করার বিষয়ে সমস্যা দেখা দেয়। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজিএমইএ’র একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রায় প্রতিবছরই ঈদকে সামনে রেখে রমজান মাসে বেতন বোনাসের দাবিতে শ্রমিকদের উস্কানি দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করে তোলা হয়। বেতন বোনাস বা বকেয়া পড়েছে এমন গার্মেন্টেসের শ্রমিকরা যেসব গার্মেন্টসে নিয়মিত বেতন বোনাস দিচ্ছে তাদের কারখানায়ও নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তার উদাহরণ আছে। গার্মেন্টস মালিকরাও যাতে সময়মতো বেতন ভাতা পরিশোধ করে শ্রমিকদের রোজা ও ঈদ পালনের সুযোগ করে দেয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিজিএমই এর এই কর্মকর্তা।
×