ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টি হলে শুধু রাস্তা ডোবে না পকেট কাটা পড়ে সাধারণ যাত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:২০, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

বৃষ্টি হলে শুধু রাস্তা ডোবে না পকেট কাটা পড়ে সাধারণ যাত্রীর

ওয়াজেদ হীরা ॥ কোটি মানুষের বসবাস রাজধানী ঢাকায়। নাগরিক সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তিও কম নয়। কোন ধরনের ঝড়বৃষ্টি হলে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি এই নগরে। বিশেষ করে রিক্সা আর সিএনজি ভাড়া বেড়ে যায় কয়েকগুণ। আর ভোগান্তি পোহায় নগরবাসী। সিএনজি মিটারে তো চলেই না আর রিক্সা ভাড়ার নেই কোন নীতিমালাও। ফলে চালকরা সাধারণ মানুষদের জিম্মি করেই ভাড়া আদায় করেন। একটু বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধ হয়ে ওঠে রাজধানী ঢাকা। তাই বৃষ্টি এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এ সময় প্রধান বাহন হিসেবে রিক্সা সিএনজি বেছে নিতে হয়। ফলে চাহিদা দেখে এর চালকদের আচরণ আমূলে পাল্টে যায়। ইচ্ছামতো ভাড়াও চেয়ে বসেন তারা। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রিক্সা সিএনজি ভাড়া নিয়ে দরকষাকষির চিত্র দেখা যায়। বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে বাকবিতন্ডা হতেই থাকে। বৃষ্টির দিনগুলোতে সেই বাকবিতন্ডা কখনও হাতাহাতিতেও রূপ নেয়। রবিবার ছুটির দিন থাকলেও ঝড়-বৃষ্টিতে নগরবাসীর ভোগান্তি ছিল সীমাহীন। যারা প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছে তারা জলাবদ্ধতাসহ যাতায়াতের ভোগান্তিতে পড়েছেন। ঢাকায় সকালের কালবৈশাখীর সঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিতে অনেক সড়কে পানি জমে গেছে। সকালের পর বৃষ্টি হয়েছে দুপুরেও। বিকেলেও বৃষ্টি হয়েছে অনেক জায়গায়। সারাদিনই আকাশ অনেকটা মেঘলা। কখনও কালো মেঘে ছেয়ে গেছে রাজধানীর আকাশ। যা দেখে মনে হয়েছে যেন রাতের অন্ধকার নেমে এসেছে। আর ঝুম বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এছাড়াও যারা প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন বা ছুটির দিন বিকেলে একটু বেড়িয়েছেন তারা যাতায়াতের বাহনের ভোগান্তিতে পড়েন। রাজধানীবাসীর অভিযোগ বৃষ্টি হলেই রিক্সা আর সিএনজিগুলো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে ইচ্ছামতো যাত্রীদের পকেট কাটে। বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে সরকারী ছুটি ছিল এদিন। কিন্তু ছুটি নেই খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের। ফলে বৃষ্টিতে রাস্তা-ঘাট ডুবে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েন তারাও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালের মাত্র আধা ঘণ্টার ভারি বর্ষণে রাজধানীর বিভিন্ন অঞ্চলে জলাবদ্ধতা ছিল চোখে পড়ার মতো। এসব এলাকার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, ধানমন্ডি ৮/এ স্টাফ কোয়ার্টার মোড়, কাঁঠাল বাগান, কলাবাগান ডলফিন গলি, গ্রীন রোড, মোহাম্মদপুর, জিগাতলা, ধোলাইখাল, আজিমপুর, হাজারীবাগ, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, সেগুনবাগিচা, পল্টন, বেইলি রোড, সিদ্ধেশ্বরী, সার্কিট হাউস রোড, রাজারবাগ, শান্তিবাগ, আরামবাগ, মতিঝিল, দিলকুশা, কমলাপুর, মানিকনগর, বাসাবো, মুগদা, নিউমার্কেট পশ্চিম-দক্ষিণ পাশের বটতলা, বিজিবি-৩ ও ৪নং গেট, নাজিমউদ্দিন রোড, হোসেনি দালান, চকবাজার, লালবাগ, কাজী আলাউদ্দিন রোড, বংশাল, জুরাইন, পোস্তগোলা, মুরাদপুর, শ্যামপুর, কদমতলা, মাতুয়াইল, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, শনিরআখড়া, দনিয়া, দয়াগঞ্জ রেল ব্রিজ অন্যতম। এসব এলাকার অধিকাংশে বেলা দেড়টার পরও পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃষ্টি শেষ হওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই পানি নেমে গেছে। তবে নগরবাসী বলছেন উল্টো কথা। মিরপুরের বাসিন্দা কলিমউদ্দিন সন্তানদের নিয়ে বিকেলের দিকে শপিংয়ে আসেন। আসতেই সিএনজি খরচ ৩৫০ অথচ এই টাকার যাওয়া আসা হয় বলেন তিনি। শাহবাগ থেকে নিউমার্কেট রিক্সা ভাড়া ২৫-৩০ টাকা হলেও এদিন কেউ ৬০ টাকার নিচে যেতে চায়নি, যা দ্বিগুণ ভাড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া আনিকা বিন সুমি বলেন, আমরা ছুটির দিনে নানা প্রয়োজনে বের হই। বৃষ্টি হলে এমনভাবে ভাড়া বাড়ে যা চোখ বন্ধ করে হজম করতে হয়। এদিকে সিএনজি চালকদের মতে, পানিতে অনেক সময় সিএনজি বন্ধ হয়ে যায় আর বৃষ্টির দিনে খুব বেশি ভাড়াও থাকে না। বেশি ভাড়া নেয়া হয় তবে খুব একটা বেশি নয় বলে একাধিক সিএনজি চালক জানিয়েছেন। সুলেমান নামের এক সিএনজি চালক কারওয়ান বাজার এলাকায় বলেন, আমাদের সিএনজির মালিকের জমা খরচ বেশি। বৃষ্টিতে ভাড়া কম। অল্প ভাড়াতেই জমা খরচসহ নিজেদের খরচ উঠাতে হয়। নয়ত বৃষ্টি এত কষ্ট কেন করব সে প্রশ্নও রাখেন। সঙ্গে উসমান নামের চালক এক প্রশ্নে বলেন, আমরা তো দিন ভাল থাকলেই মিটারে যাই না, যে খরচ মালিকরা বাড়িয়েছেন, মিটারে গেলে সংসার চলব না। মগবাজার এলকায় কথা হয় রিক্সাচালক আক্কাস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকেই বৃষ্টি। অন্যদিন দুপুরের মধ্যে তিন চারশ’ টাকা হলেও দুপুর হয়ে গেছে ইনকাম মাত্র একশ’। বৃষ্টিতে অনেক রাস্তায় পানি থাকে কষ্ট হয় বলে ভাড়া কিছু বেশি নেন বলে জানান। সুলতান মাহবুব বেসরকারী চাকরিজীবী। অতিরিক্ত রিক্সা ভাড়া দিলেও বেশ ক্ষুব্ধ তিনি। বারবার এ বিষয়ে দেখার কেউ নেই কে কথাই বলছিলেন। নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে রিক্সাওয়ালাদের এমন আচরণে ক্ষুব্ধ অনেক পথচারী। এ বিষয়ে একাধিক রিক্সাওয়ালার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভারি বর্ষণে একরকম চলাচল অযোগ্য ভাঙাচোরা রাস্তায় রিক্সা চালাতে কষ্ট হয়। এ ছাড়াও সম্পূর্ণ পথ বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। তাই অন্য সময়ের তুলনায় বৃষ্টিতে কষ্ট বেশি হওয়ায় ভাড়া বেশি চাওয়া হয়। এদিকে বৃষ্টির কারণে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারা নিজেদের ব্যবসা করতে পারছেন না। রবিবার সকালে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, সিলেট, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ঢাকা, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে অস্থায়ীভাবে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার কিংবা আরও অধিক বেগে কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সে সঙ্গে বিচ্ছিন্নভাবে কোথাও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
×